এ বছরের পাবলিক পরীক্ষাগুলোর ভবিষ্যৎ কী
২২ জুন ২০২১ ২০:২৫
ঢাকা: গত বছরের এসএসসি পরীক্ষার পর দেশে এখন পর্যন্ত আর কোনো পাবলিক পরীক্ষা হয়নি। হবে কিভাবে, ওই এসএসসি পরীক্ষার কিছুদিন পর থেকেই তো দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে রয়েছে। সে কারণে গত বছরের এইচএসসি দিয়ে শুরু করে জেএসসি, পিইসি তো বটেই, স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা পর্যন্ত হয়নি। এ বছরেও এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজনের স্বাভাবিক সময় পেরিয়ে গেছে। তবে পরীক্ষা আয়োজনের কোনো সম্ভাবনা এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। বছরের অর্ধেক পেরিয়ে যাওয়ায় এ প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে— এ বছরের বাকি থাকা পরীক্ষাগুলো কি নেওয়া সম্ভব হবে?
এমন প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর দিতে পারছেন না সরকারের সংশ্লিষ্ট কেউই। ফলে পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়টি নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। আর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা ভাবছেন, এ বছরও আর কোনো পরীক্ষাই হবে না!
গত বছরের ১৭ মার্চ থেকেই সারদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্ন্ধ রয়েছে। এরপর দফায় দফায় এসব স্কুল-কলেজের ছুটি বাড়তে বাড়তে সবশেষ আগামী ৩০ পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই গত বছরের এইচএসসি, জেএসসি, পিইসি পরীক্ষা এবং বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি। সবাইকেই পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হয়েছে। এর মধ্যে এসএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার ফলের ওপর মূল্যায়নের ভিত্তিতে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ করা হয়েছে। এখনো দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় এ বছরের সব পাবলিক পরীক্ষা নিয়েও রয়েছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা।
ঢাকা শিক্ষাবোর্ড, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) এবং মাউশির একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলার সঙ্গে আলাপকালে জানিয়েছেন, পরীক্ষা হবে না— এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে বিষয়টি ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে’র সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে বলে তারা এ বিষয়ে নাম প্রকাশ করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বোর্ড ও মাউশিতে কথা বলে জানা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে পরীক্ষা না নেওয়ার জন্য অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। সেখানে পরীক্ষার নেওয়ার পক্ষে কেউ কেউ কথা বললেও পরীক্ষা নেওয়ার বিপক্ষেও এসেছে অনেক মত। তাছাড়া সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে হঠাৎ করে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় পরীক্ষা হবে কি না, সে বিষয়ে পরীক্ষার পক্ষে থাকা কর্মকর্তারাও পড়েছেন দোলাচলে।
বোর্ডের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেছেন, বছরের এই সময়ে এসএসসি পরীক্ষার ফল হয়ে যেত, ফলের অপেক্ষায় থাকতেন এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। কিন্তু করোনার কারণে এবার পরীক্ষাই হয়নি। পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণই এখনো বাকি আছে। এখন যদি ফের সংক্রমণ বাড়ে, লকডাউন ঘোষণা হয়, তাহলে কিভাবে পরীক্ষা হবে?
ওই কর্মকর্তা বলেন, বোর্ড কিংবা মন্ত্রণালয় সবাই পরীক্ষা নিতে চায়। কিন্তু তার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ লাগবে। যে ভয়ে আগের পরীক্ষগুলো হয়নি, এখন সেই ভয় আরও বাড়ছে। লকডাউন কঠোর হচ্ছে। এজন্য পরীক্ষা হবে কি না, সেটি নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তায় রয়েছে সবাই। তবে পরীক্ষা বাতিল হবে— এমনটি বলার সময় ও সুযোগ এখনো আসেনি।
তাহলে পরীক্ষা বাতিলের গুঞ্জনের সূত্র কোথায়?
জানা গেছে, এসএসসি-এইচএসসি বাতিলের গুঞ্জনটি রটেছে সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির দেওয়া এক বক্তব্য থেকে। তিনি বলেছিলেন, এই দু’টি পরীক্ষা না নেওয়া গেলে বিকল্প পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করা হবে। সংক্রমণের হার পাঁচ শতাংশে না নামলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার কথা ভাববে না সরকার— এমনটিও জানিয়েছিলেন তিনি।
মন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই ভেবে নিয়েছেন, পরীক্ষাগুলো বুঝি আর হবেই না। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, পরীক্ষা নেওয়ার জন্য এখনো জোর চেষ্টাই চালাচ্ছে তারা। শিক্ষা বোর্ডগুলোও এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজনের সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। কেন্দ্রীয়ভাবে তৈরি হয়েছে এসএসসির প্রশ্নপত্রও। এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নও তৈরি করা হচ্ছে দ্রুত গতিতে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেছেন, পিছিয়ে হলেও আমরা পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করছি। যদি সংক্রমণ বাড়ে, তাহলে অন্য চিন্তা। এখনো যেহেতু এমন পরিবেশ তৈরি হয়নি, তাই পরীক্ষা বাতিল হওয়ার চিন্তা না করাই ভালো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পর ৬০ কর্মদিবস এবং এইচএসসির ক্ষেত্রে ৮৪টি কর্মদিবস করে ক্লাস নেওয়ার পর আমরা পরীক্ষা নেব।
এদিকে, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা যে বাতিল হতে পারে সে বিষয়ে বেশ খোলাখুলি ইঙ্গতই দিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম। তিনি বলছেন, এবারের প্রথমিক সমাপনী পরীক্ষাটি বাতিলের চিন্তা করছে মন্ত্রণালয়। তবে শিক্ষার্থীদের অটোপাস দেওয়া হবে না। এর বদলে বাড়ির কাজের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে তাদের। পিইসি বাতিল হলে বাতিল হবে ইবতেদায়ি পরীক্ষাও।
যদি করোনা সংক্রমণ কমে আসে এবং বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হয়, তাহলে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এই দু’টি পরীক্ষা নেওয়ার সম্ভাবনা থাকবে বলেও জানিয়েছেন সচিব। একই কথা বলেছেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) রতন চন্দ্র পণ্ডিতও।
ফাইল ছবি
সারাবাংলা/টিএস/টিআর
এইচএসসি পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষা জেএসসি পরীক্ষা পরীক্ষা বাতিল পাবলিক পরীক্ষা পিইসি পরীক্ষা