ভ্যাকসিন কূটনীতিতে বাংলাদেশ পুরোপুরি ব্যর্থ
২৩ জুন ২০২১ ১৭:৩৫
ঢাকা: জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, প্রতিদিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আশ্বাসের কথা বলা হচ্ছে কিন্তু কোনো সাফল্য নেই। ভ্যাকসিন কূটনীতিতে বাংলাদেশ পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে উপহারের পাঁচ থেকে ১০ লাখ ভ্যাকসিন পেয়ে স্বস্তির ঢেঁকুর তুলছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। অথচ, ১৮ কোটি মানুষের ভ্যাকসিন পাওয়ার বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত। বিশ্বাসযোগ্য কোনো তথ্য উপাত্ত নেই সরকারের ঘোষণায়। ভ্যাকসিনের বিষয়ে দেশের মানুষের মাঝে হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ করোনার ভ্যাকসিন পাওয়ার বিষয়ে সরকারের সুস্পষ্ট ঘোষণা জানতে চায়।
বুধবার (২৩ জুন) জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে ‘সময়ের আয়নায় পল্লীবন্ধু’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাপা চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, করোনা মহামারি মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ৮০ শতাংশ জনগণকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা গেলে স্বাভাবিক জীবন যাপন সম্ভব হবে। অনেক দেশ ক্রমান্বয়ে সে পরিস্থিতি অর্জনের পথে সাফল্য দেখাচ্ছে। আমাদের মত জনবহুল দেশে উপহার আর দান থেকে সংগৃহীত অপর্যাপ্ত ভ্যাকসিন দিয়ে করোনার মতো মহামারি মোকাবিলা সম্ভব নয়।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, বিশ্বের উন্নত ও অনুন্নত দেশগুলো ইতোমধ্যেই রোডম্যাপ অনুযায়ী ভ্যাকসিন কর্মসূচি শুরু করেছে। কিন্তু, বাংলাদেশের কেউই জানেনা কখন গণহারে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হবে।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, অদূরদর্শীতার কারণে ভ্যাকসিন কেনার বিকল্প কোনো সোর্স রাখতে পারেনি সরকার। অথচ, গেলো বছর বারবার সরকারকে বিকল্প সোর্স রাখার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছিল জাপা। এছাড়াও, বাজেটে ভ্যাকসিন কেনার জন্য স্পষ্ট কোনো বরাদ্দ নেই। তবে বাজেট বক্তৃতায় কিছু দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ভ্যাকসিন সরবরাহ ও ভ্যাকসিন কেনার অর্থ পাওয়ার আশ্বাস রয়েছে।
স্বাস্থ্য সেবা উন্নত করতে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনা আছে বলে মনে হয় না। তাই তাদের দাবি, উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন সহায়তা এবং আইসিইউসহ সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা রাখতে হবে। যেহেতু, যথেষ্ট পরিমাণ করোনা ভ্যাকসিন পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে, করোনা ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সে পরিস্থিতিতে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়তে পারে। তাই, পরিকল্পিতভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। গণহারে মৃত্যু ঠেকাতে অনতিবিলম্বে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। একইসঙ্গে দেশীয় করোনা ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের যে কোনো উদ্যোগকে সহযোগিতা দিতে হবে — বলেন জি এম কাদের।
আগামী প্রজন্ম এক সময় পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এর জীবনী নিয়ে গবেষণা করবে। তখন ‘সময়ের আয়নায় পল্লীবন্ধু’ বইটি তরুণ প্রজন্মের কাছে সমাদৃত হবে। আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে পল্লীবন্ধুর অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে বলে মন্তব্য করেন সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা।
এদিকে, জাপা’র ভাইস চেয়ারম্যান ও ‘সময়ের আয়নায় পল্লীবন্ধু’ গ্রন্থের প্রকাশক আহসান আদেলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রকাশনা উৎসবে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় জাপা মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, পল্লীবন্ধু রাষ্ট্র ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার পর বাংলাদেশ দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। গ্রাম-গঞ্জে এবং শহরের ফুটপাতেও চাঁদাবাজি চলছে। সরকার দলীয় ক্যাডারদের বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে দেশের মানুষ অস্থির হয়ে পড়েছে। করোনা সংক্রমণ বেড়েছে, হাসপাতালে জায়গা নেই। দেশের স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে গেলো বছর ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল তা সঠিকভাবে খরচ করতে পারেনি সরকার। এ বছরও ১৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে কিন্তু সঠিকভাবে খরচ করতে পারবে তার নিশ্চয়তা নেই।
তিনি বলেন, জুয়া আর ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না সরকার। কারণ, জড়িত সবাই সরকারদলীয় লোক।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন এখন আর উৎসবমুখর হয়না। নির্বাচন এখন ভয় আর আতঙ্কের। এখন নির্বাচন এলেই গোলাগুলি হয়, অকালে ঝরে যায় অনেক প্রাণ। সরকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে মেগা কমিশনের জন্য। ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে করোনা ভ্যাকসিন আমদানি করা হয়েছে। লুটপাটের জন্যই দেশের মানুষ এখনো করোনা ভ্যাকসিন পাচ্ছে না। দুঃশাসন আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাতীয় পার্টি সব সময় সোচ্চার থাকবে। গণমানুষের সমর্থন নিয়ে আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি দেশের মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই করবে।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশে উন্নয়নের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রচনা করেছিলেন। ইসলামী মূল্যোবেধে বিশ্বাসী পল্লীবন্ধু রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণা করেছিলেন। ইসলামের খেদমতে অসামান্য অবদান রেখেছেন পল্লীবন্ধু। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এর অবদান ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এর অবদান কখনোই মুছে ফেলা যাবে না।
অন্যদিকে, মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, এড. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, নাজমা আখতার এমপি, মেজর অব. রানা মো. সোহেল এমপি, উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য শেরিফা কাদের, ড. নূরুল আজহার শামীম, হেনা খান পন্নি, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর অব. আব্দুস সালাম, শফিউল্লাহ শফি, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, ইকবাল হোসেন তাপস, মো. বেলাল হোসেন, একেএম আশরাফুজ্জামান খান, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মঞ্জুরুল হোসেন মঞ্জু, মো. সাইফুল ইসলাম, এনাম জয়নাল আবেদিন, হুমায়ুন খান, মো. আনোয়ার হোসেন তোতা, সৈয়দ মো. ইফতেকার আহসান হাসান, মাখন সরকার, কাজী আবুল খায়ের, মমতাজ উদ্দিন, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য সুলতান মাহমুদ, এম এ রাজ্জাক খান, আহাদ ইউ চৌধুরী শাহীন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসহাক ভূঁইয়া, গোলাম মোস্তফা, মিজানুর রহমান মিরু, যুগ্ম সম্পাদকমন্ডলী হেলাল উদ্দিন, নুরুল হক নুরু, আব্দুস সাত্তার গালিব, মো. আজাহারুল ইসলাম সরকার, জাকির হোসেন মৃধা, নজরুল ইসলাম, লিটন মিয়াজী, মাহমুদ আলম, সমরেশ মন্ডল, মো. শাহজাহান কবীর, শেখ মো. শান্ত, শহীদ হোসেন সেন্টু, হাফেজ ক্বারী ইসারুহুল্লাহ আরিফ, ডা. মো. আব্দুল্লাহ আল ফাত্তাহ, কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম মোস্তফা, নিজাম উদ্দিন সরকার, মাওলানা মো. খলিলুর রহমান সিদ্দিকী, সরোয়ার হোসেন, হুমায়ুন কবীর শাওন, জিয়াউর রহমান বিপুল, জাকির হোসেন, মোস্তাইন বিল্লাহ, তরুণ পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোড়ল জিয়াউর রহমান।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একেএম
করোনা ভ্যাকসিন জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের নভেল করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন কূটনীতি