Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ইনকিউবেটরে’ অজগর, প্রকৃতির শূন্যতা পূরণের চেষ্টা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৩ জুন ২০২১ ১৮:৫৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় দ্বিতীয়বারের মতো কৃত্রিম পরিবেশে জন্ম নিয়েছে ২৮টি অজগর ছানা। দুই বছর আগে দেশে প্রথমবারের মতো এই চিড়িয়াখানায় জন্ম নিয়েছিল ২২টি অজগর ছানা। প্রথমবার জন্ম নেওয়া অজগর সাপগুলোকে পরবর্তীতে জঙ্গলে অবমুক্ত করা হয়েছিল।

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, দ্বিতীয় দফায় জন্ম নেওয়া অজগর ছানাগুলোকেও দেড় মাস পর্যবেক্ষণ ও পরিচর্যার পর জঙ্গলে অবমুক্ত করার চিন্তা আছে তাদের।

প্রাণী গবেষকরা বলছেন, বাসস্থান ও খাবারের অভাবে চট্টগ্রামসহ আশপাশের এলাকায় ক্রমশ কমতে থাকা অজগরের অভাব কিছুটা পূরণ হবে কৃত্রিমভাবে জন্ম নেওয়া এসব সাপ দিয়ে। কিন্তু সঠিক স্থান নির্বাচন না করে প্রাকৃতিক পরিবেশে অবমুক্ত করলে অজগরের সবগুলো বাচ্চা টিকে থাকতে পারবে না।

মঙ্গলবার (২২ জুন) চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় হাতে তৈরি ইনকিউবেটরে রাখা ডিম ফুটে ২৮টি অজগর ছানার জন্ম হয়েছে বলে ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাৎ হোসেন শুভ জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় খাঁচায় ২২টি অজগর সাপ আছে। গত ১৪ এপ্রিল খাঁচা থেকে ৩১টি ডিম সংগ্রহ করা হয়। এরপর সেগুলো ইনকিউবেটরে বিভিন্ন তাপমাত্রায় গত ৬৮ দিন ধরে সংরক্ষণ করা হয়। এর মধ্যে তিনটি ডিম নষ্ট হয়েছে। বাকি ২৮টি ডিম থেকে অজগর ছানা জন্ম নিয়েছে।

চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর শাহাদাৎ হোসেন শুভ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছানাগুলো আপাতত আমরা ইনকিউবেটরে রেখেছি। নিয়ম অনুযায়ী, ১৫ দিন পর সেগুলোর চামড়া বদল হবে। এরপর ধীরে ধীরে তাদের খাবার দেওয়া হবে। আরও কমপক্ষে ২০ দিন থেকে একমাস ধরে পরিচর্যার পর সেগুলো তখন খাঁচায় রাখার অথবা বনজঙ্গলে প্রাকৃতিক পরিবেশে ছেড়ে দেওয়ার উপেযোগী হবে।’

চিড়িয়াখানা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সভাপতি চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সেগুলোকে খাঁচায় রাখার অথবা প্রাকৃতিক পরিবেশে অবমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে শুভ জানিয়েছেন।

এর আগে, ২০১৯ সালের ১২ জুন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় প্রথম ইনকিউবেটরে ৩৫টি ডিম থেকে ২৬টি অজগর ছানার জন্ম হয়েছিল। পরে সেগুলো সীতাকুণ্ডে পাহাড়ে অবমুক্ত করা হয়েছিল।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. ফরিদ আহসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইনকিউবেটরে জন্ম নেওয়া বাচ্চা যদি সঠিক তাপমাত্রায় বেড়ে ওঠে, তাহলে সেগুলো প্রাকৃতিক পরিবেশে গিয়ে খাপ খাওয়াতে পারে। তবে সেগুলোকে ছাড়তে হবে একটি নির্দিষ্ট পিরিয়ডের পর। প্রাকৃতিক পরিবেশে সে যখন নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার মতো উপযোগী হয়ে উঠবে, তখনই ছাড়তে হবে। সেক্ষেত্রে স্থান নির্ধারণ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এমন কোনো জায়গায় ছাড়া হল, যেখানে গুইসাপ কিংবা অন্যান্য প্রাণী অজগরের ছানাগুলোকে খেয়ে ফেলল, তাহলে তো লাভ হবে না।’

‘আর স্বাভাবিকভাবেই সবগুলো ছানা বাঁচবে না, সেটা খাঁচায় রাখা হোক কিংবা জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হোক। তবে আমাদের এই অঞ্চলে যেভাবে অজগর সাপ বিলুপ্তির পথে যাচ্ছে, তাতে কৃত্রিমভাবে হলেও অজগরের বাচ্চার জন্ম দিয়ে সেগুলোকে প্রকৃতিতে ছাড়া হলে ভারসাম্য থাকবে। কিন্তু সেগুলো অবমুক্ত করার আগে জায়গা সম্পর্কে গবেষকদের মতামত নেওয়া প্রয়োজন।’- বলেন ফরিদ আহসান

চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন শুভ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের পাহাড়ি এলাকায় বনজঙ্গল কেটে ফেলা হচ্ছে। অজগর সাপ তার বাসস্থান ও খাবারের যোগান হারাচ্ছে। এজন্য দেখা যায়, মাঝে মাঝে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী-সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ আরও বিভিন্ন জায়গায় লোকালয়ে খাবারের সন্ধানে চলে আসছে অজগর সাপ। আবার পাহাড়ে ফলের বাগানে-সবজির ক্ষেতে, ধানক্ষেতে ইঁদুরের উপদ্রব অস্বাভাবিক বাড়ছে। একসময় সাপ ইঁদুর খেয়ে বাস্তুতন্ত্র ঠিক রাখত। এখন সেই ইঁদুর নিধনের জন্য ফসলের ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে আমাদের জনস্বাস্থ্যও ‍হুমকির মুখে পড়ছে। আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্যই আমরা কৃত্রিম পরিবেশে অজগর সাপের ছানা ফোটানোর উদ্যোগটি নিয়েছি। বাংলাদেশে আমরাই প্রথম এটি করেছি।’

সারাবাংলা/আরডি/এসএসএ

‘ইনকিউবেটরে’ অজগর


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর