পাহাড় থেকে ৪৭ ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদ
২৩ জুন ২০২১ ১৯:৪৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বর্ষায় ভূমিধসে প্রাণহানি ঠেকাতে চট্টগ্রাম নগরীর এ কে খান পাহাড় থেকে ৪৭ অবৈধ বসতি উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন।
বুধবার (২৩ জুন) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে নগরীর খুলশী থানার আমবাগান এলাকায় এ কে খান পাহাড়ে শুরু হওয়া অভিযান চলে দুপুর ১টা পর্যন্ত। অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের দু’জন সহকারী কমিশনার মুহাম্মদ ইনামুল হাছান ও ফাহমিদা আফরোজ।
এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার ফাহমিদা আফরোজ সারাবাংলাকে জানান, বর্ষায় প্রাণহানি ঠেকাতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উচ্ছেদ অভিযান হয়েছে। ৪৭টি কাঁচা ও টিনের তৈরি ঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে ৪৭টি পরিবার বসবাস করত। উচ্ছেদ শুরুর আগেই তারা সেখান থেকে আসবাবপত্র সরিয়ে ফেলেন।
অবৈধ বসতি উচ্ছেদের পর জায়গা পাহাড়ের মালিককে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুনরায় সেখানে যাতে বসতি গড়ে উঠতে না পারে, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পাহাড় মালিকরা বলে ফাহমিদা আফরোজ জানিয়েছেন।
অভিযানে পুলিশ, পরিবেশ অধিদফতর, ফায়ার সার্ভিস, পিডিবি, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিসিহ বিভিন্ন সরকারি সেবা সংস্থার প্রতিনিধি ও ৮০ জন শ্রমিক অংশ নেন।
এর আগে, গত ১৪ জুন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোডের আশপাশের পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে ৩৭০টি অবৈধ বসতি উচ্ছেদ করা হয়। তবে সেখানে মাসব্যাপী উচ্ছেদ অভিযান চালানোর কথা বলা হলেও গত ১০ দিনে আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
২০১৯ সালে সরকারিভাবে গঠিত পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি চট্টগ্রামে বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের তালিকা করেছিল। সেই তালিকা অনুযায়ী, চট্টগ্রামে মোট ১৭ পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি আছে। এর মধ্যে ১০টি ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড়। বাকি সাতটি বিভিন্ন সরকারি সংস্থার। এসব সংস্থার মধ্যে আছে- রেলওয়ে, চট্টগ্রাম ওয়াসা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, গণপূর্ত বিভাগ, বন বিভাগ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। ২০১৯ সালের তালিকায় ১৭ পাহাড়ে ৮৩৫ পরিবারকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসের জন্য চিহ্নিত করা হয়।
এরপর প্রায় ছয় কিলোমিটার বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ছোট-বড় ১৮টি পাহাড় কাটে। সেখানকার আটটি পাহাড়ে আছে কয়েকশ অবৈধ বসতি। সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম নগরী ও সংলগ্ন এলাকায় ২৫ পাহাড়ে কয়েক হাজার পরিবার ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে বলে ধারণা জেলা প্রশাসনের।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে পাহাড় ধসে চট্টগ্রামে বড় ধরনের মর্মান্তিক বিপর্যয় ঘটে। ওই বছরের ১১ জুন নগরীর কুসুমবাগ, কাইচ্যাঘোনা, সেনানিবাসের লেডিস ক্লাব সংলগ্ন লেবু বাগান, বায়েজিদ বোস্তামী, লালখান বাজারের মতিঝর্ণা পাহাড়সহ সাত স্থানে পাহাড় ধসে মাটিচাপা পড়ে মারা যায় শিশু-নারী ও বৃদ্ধসহ সব বয়সের ১২৭ জন। পাহাড় ধসে ২০০৮ সালে মারা যায় ১২ জন। ২০১১ সালে একই পরিবারের পাঁচজনসহ ১৭ জন, ২০১২ সালে মারা যায় ২৩ জন। এভাবে প্রতিবছরই পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে আসছে।
সারাবাংলা/আরডি/একেএম