Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শুধু সরকারে থাকলে হবে না, শক্তিশালী সংগঠনও দরকার: শেখ হাসিনা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৩ জুন ২০২১ ২৩:৫৫

ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, দল যদি শক্তিশালী না হয়, তাহলে কোনো কাজ করা যায় না। শুধুমাত্র সরকার দিয়ে হয় না, পাশে শক্তিশালী সংগঠনও থাকতে হয়। পেছনে সেটি যদি থাকে তাহলে যে কোনো অর্জন সম্ভব। আজকে আমরা যতটুক অর্জন করেছি, এই সুসংগঠিত আওয়ামী লীগ আমাদের পাশে সবসময় ছিল বলেই অর্জনগুলো করতে সক্ষম হয়েছি।

বুধবার বিকেলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এসবকথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ প্রান্তে যুক্ত ছিলেন। গণভবন প্রান্তে সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।

সভায় শুরুতে ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বেন চার দশক: সংগ্রামী নেতা থেকে কালজয়ী রাষ্ট্রনায়ক’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বইটির সম্পাদনা করেন দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ।

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ প্রান্তে সূচনা বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য বীর মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, মহিলা সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান এবং আবু আহমেদ মান্নাফী।

বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা থেকে আজ অবধি বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে ২৩ জুন ১৯৪৯ সালে। একটা অদ্ভুত মিল ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবার সিরাজদৌল্লা যুদ্ধে পরাজিত হয়। সেই পরাজয়ের পেছনে চক্রান্ত করেছিল তারই প্রধান সেনাপতি মীরজাফর। এই বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে ঠিক সেই ২৩ জুন। যে ২৩ জন পলাশীর আম্রকাননে স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল মনে হয় যেন সেই সূর্যকে উদিত করার জন্য ২৩ জুন আওয়ামী লীগ সৃষ্টি হয়েছিল।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বিজয় অর্জনসহ স্বাধীনতার পর সরকার পরিচালনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর একটা অদ্ভুত শক্তি ছিল সংগঠন তৈরি করার। তিনি গুরুত্বই দিয়েছিলেন সংগঠন শক্তিশালী করার জন্য। কারণ তিনি জানতেন সংগঠন ছাড়া কোনো অর্জন সম্ভব নয়। তিনি যখন দেখলেন বাঙালিরা শোষিত লাঞ্চিত তিনি মুক্তি একমাত্র পথ ছিল স্বাধীনতা অর্জন তা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। সেই সংগঠনকে তিনি সেভাবেই গড়ে তুলেছিলেন।’

আওয়ামী লীগ এদেশের জনগণের জন্য। আজকে এ দেশের মানুষ যা কিছু পেয়েছে সব কিন্তু আওয়ামী লীগে দিয়েছে বলে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী নয় প্রতিটি সংগ্রামে আওয়ামী লীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। আমরা যদি শহীদদের হারটা দেখি যে কতগুলো মানুষ জীবন দিয়েছে? এদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য, একমাত্র আওয়ামী লীগই। আর একটা রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে এই দেশে কয়টা রাজনৈতিক দল আছে। অনেকেই অনেক কথা বলেন। কেউ বলে একটা দল হয়ে যাচ্ছে। তো আমরা যদি জনগণের সংগঠন হিসাবে দেখি গণমানুষের সংগঠন দেখি , তৃণমূল মানুষের দ্বারা গঠিত একটি সংগঠন সেটা কিন্তু আওয়ামী লীগ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদেরও আরও অন্যান্য পার্টি আছে। কমিউনিস্ট পার্টিসহ আরও অন্যান্য ছোট ছোট পার্টিগুলো আছে। কিন্তু মূল একটা সংগঠনই, সেটি হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এর বিপরীতে যে দলগুলো আহাজারি করে, তারা কীভাব সৃষ্টি?’

‘১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাব হত্যা করে অবৈধভাবে হত্যা ক্যু ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল করে যে মিলিটারি ডিটেকটর প্রথমে ক্ষমতায় উত্তরণ করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষনা দেয়। ক্ষমতা দখল করে আর্মির রুলস ভঙ্গ করে দখল করে নিজেদেরকে ঘোষণা দিয়ে তারপর আবার রাজনীতে অবতরণ করে। তখন ক্ষমতায় বসে মার্শাল ল জারি অবস্থায় যে দল তৈরি করে সেটার একটি হলো বিএনপি, পরবর্তী সময়ে আরেকটি হলো জাতীয় পার্টি। এখন বিএনপি-জাতীয় পার্টি তো জনগণের মধ্যে থেকে উঠে আসে নাই বা জনগণের কল্যাণের জন্যও কাজ করেও উঠে আসেনি। তারা ক্ষমতা দখলকারীর হাতে সৃষ্টি করা একটি দল।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দীর্ঘ সময়ে যে ক্ষমতার খেলা চলছে বাংলাদেশে সেই পাকিস্তান আমল থেকে ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান; যে পদ্ধতিতে এসেছিল ক্ষমতায়, সেনা প্রধান হিসেবে ক্ষমতা দখল করে। একাধারে সেনাপ্রধান-প্রেসিডেন্ট। জিয়াউর রহমানও ঠিক একাধারে সেনাপ্রধান হন, আরেকদিকে নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে ঘোষণা করে, জেনারেল এরশাদও তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে। ক্ষমতা চলে যায় সেনা ছাউনিতে। কিন্তু এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে রাজপথে যারা রক্ত দিয়েছে, সংগ্রাম করেছে আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। আর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এই সংগ্রাম করেছে বলেই আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে পেরেছি।’

তিনি বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন সেটাও যদি বিবেচনা করেন সেটাও কিন্তু আওয়ামী লীগের হাতেই। তার কারণটা একটাই, যেহেতু আওয়ামী লীগ এদেশের গণমানুষের সংগঠন। কাজেই আওয়ামী লীগ যখনই রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে এই বঞ্চিত মানুষেররই ভাগ্য পরিবর্তন করেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা আদর্শ নিয়ে এদেশ স্বাধীন হয়েছে। যে আদর্শ জাতির পিতা দিয়ে গেছেন। তিনি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছেন। তিনি এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছেন। তিনি এদেশের মানুষকে সম্মানের সাথে বাঁচার অধিকার দিতে চেয়েছেন। জাতির পিতার বক্তব্যই ছিল, এদেশের মানুষে অন্ন পাবে বস্ত্র পাবে, উন্নত জীবন পাবে।আওয়ামী লীগ তো সেই কাজটাই করব, সেটাই আমাদের লক্ষ্য থাকবে, সেটাই আমরা করব। সেটাই আমাদের লক্ষ্য থাকবে। সেই লক্ষ্য নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটা নেতাকর্মীকে কাজ করতে হয়।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘১৯৭৫’র পর বার বার ক্যু হয়েছে। তার সব থেকে বড় শিকার হয়েছে সশস্ত্র বাহিনী। কত সদস্যের জীবন দিতে হয়েছে আর ক্ষতি হয়েছে রাজনৈতিক নেতা। তাদেরকে হত্যা করেছে। একটার পর একটা ক্যু, আর মানুষকে হত্যা। সেই জায়গা থেকে দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখতে যেয়ে আমাদের পদে পদে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে। জীবন্ত মানুষকে অগ্নিসন্ত্রাস করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা, আমরা দেখেছি তো! ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করা, নিরহ মানুষ হত্যা করা, নানাভাবে- অনেকভাবে তারা চেষ্টা করেছে এই দেশটাকে অস্থিতিশীল করতে।’

আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটা নেতাকর্মীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখনই যে ডাক আমরা দিয়েছি এবং যে কাজ করেছি, নিজের জীবন বাজি রেখে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী মাঠে থেকেছে, জনগণের পাশে থেকেছে। জনগণের জানমাল রক্ষা করেছে। সেই আদর্শ নিয়েই তারা চলেছে। সেটাই সব চেয়ে বড় কথা।’

আওয়ামী লীগের ইতিহাসের সাথে তো এদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস জড়িত মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এদেশের সাংস্কৃতিক মুক্তির কথা জড়িত, এদেশের সামাজিক নিরাপত্তার কথা এবং সামাজিকভাবে যতটুক অর্জন, অর্থনীতিক ভাবে যত অর্জন সবকিছুর পেছনেই শক্তিশালী আওয়ামী লীগ সংগঠন। কারণ দলটা যদি শক্তিশালী না হয়, তাহলে আসলে কোন কাজ করা যায় না। আর সেটা বাস্তবায়ন করা যায় না। শুধুমাত্র সরকার দিয়ে হয় না। পাশে শক্তিশালী সংগঠনও থাকতে হয়।পিছনে সেটি যদি থাকে তাহলে যে কোনো অর্জন সম্ভব।’

আজকে যতটুক অর্জন করেছি আমরা মনে করি এই সুসংগঠিত আওয়ামী লীগ আমাদের পাশে সবসময় ছিল বলেই আমরা এই অর্জনগুলো করতে সক্ষম হয়েছি। কাজেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই এদেশের মানুষ আরও উন্নতি করতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে আমরা স্বীকৃতি পেয়েছি। আমাদেরকে আরও এগিয়ে যেতে হবে। আমরা এখন লক্ষ্য স্থির করেছি। অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের এরকম কোনো কর্মসূচিও নেই, কোন চিন্তাভাবনাও নেই। আমরা আমাদের অর্থনৈতিক নীতিমালা আমাদের ঘোষণাপত্র, আমাদের গঠনতন্ত্র আমরা সেগুলো মেনে সংগঠন করি এবং আমরা যখনি রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসি আমাদের অর্থনীতির নীতিমালায় কি ছিল দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি এবং তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’

১৯৭৫’ পর্যন্ত জাতির পিতা যেটুক অর্জন করে রেখে গিয়েছিলেন স্বল্পোন্নত দেশ এরপর ৭৫ যারা ক্ষমতায় প্রায় ২৯ বছর তারা কিন্তু কিছু দিতে পারেনি। দিয়েছি আওয়ামী লীগ যখনই আওয়ামী লীগ এসেছে তখনই এদেশে মানুষ কিছু পেয়েছে। জাতির পিতার চেয়েছিলেন এদেশের প্রতিটি মানুষের অন্নের ব্যবস্থা করতে। আমাদের প্রথম লক্ষ্য সেটাই ছিল বলেও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে বিনামূল্যে জমিসহ ঘর উপহার দেয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা খুঁজে দেখবেন যে একটি মানুষ যেন ঠিকানাবিহীন না থাকে, ভূমিহীন না থাকে। আমরা তাদের জন্য ব্যবস্থা করব। অর্থাৎ জাতির পিতার যে স্বপ্ন যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, সেটি যদি পূরণ করতে পারি বাস্তবায়ন করতে পারি সেটিই বড় কথা।’

সারাবাংলা/এনআর/একে

আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর