Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রামে সপ্তাহজুড়ে খারাপের দিকে করোনা পরিস্থিতি

রমেন দাশ গুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৪ জুন ২০২১ ২০:৪১

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি ‘খারাপের দিকে’ যাচ্ছে। গত আট দিনে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সংকটাপন্ন রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। এর ফলে চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রোগী বেড়েছে। করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় এরই মধ্যে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলাকে আট দিনের জন্য বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে হিসাব অনুযায়ী, চলতি সপ্তাহের পুরোটাতেই চট্টগ্রামে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের হার ২০ শতাংশের বেশি। এর আগের সপ্তাহেও শনাক্তের হার ছিল ১৫ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে। বুধবারের (২৩ জুন) হিসাব বলছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম নগর ও জেলা মিলে শনাক্তের হার ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় তা ছিল আরও বেশি— ২২ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় ও গ্রামগঞ্জে লোকজনের আসা-যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এরকম অবাধ চলাচলের কারণে করোনার সংক্রমণে প্রভাব পড়ার যে আশঙ্কা করা হয়েছিল, সারাদেশের মতো চট্টগ্রামে সেই প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ১৬২ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ২৪৭ জন আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে নগরীর ১২৩ জন। নগরীর বাইরের বিভিন্ন উপজেলার ১২৪ জন। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া একজন উপজেলার বাসিন্দা।

চট্টগ্রাম জেলায় এ পর্যন্ত মোট ৫৬ হাজার ৮৮০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে নগরীর বাসিন্দা ৪৪ হাজার ৬২৭ জন, উপজেলার ১২ হাজার ২৫৩ জন।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, মঙ্গলবার (২২ জুন) একদিনেই করোনা শনাক্ত হয় ২৩৬ জনের নমুনায়। এর মধ্যে নগরীর বাসিন্দা ১৪৫ জন, উপজেলার ৯১ জন। ২১ জুন শনাক্ত হয় ১৩১ জন, ২০ জুন ১৯০ জন, ১৯ জুন ১৩৬ জন, ১৮ জুন ১৫৭ জন, ১৭ জুন ২২২ জন ও ১৬ জুন ১৬৯ জন। অর্থাৎ সবশেষ আট দিনে পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৫৮৬ জন। কেবল সাপ্তাহিক হিসাবে নয়, চট্টগ্রামে গত ১৫ দিনে করোনায় মৃত্যুর হারও বেড়েছে। এ সময়ের মধ্যে মারা গেছেন মোট ৩১ জন।

বিভিন্ন উপজেলার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। ওই উপজেলায় এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩৩০ জন। মারা গেছেন মোট ১৪ জন রোগী। সংক্রমণের হার ২৫ শতাংশ অতিক্রম করে যাওয়ায় ২৩ জুন থেকে এই উপজেলায় ‘লকডাউন’ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। আট দিনের জন্য জারি করা হয়েছে বিভিন্ন বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত নির্দেশনা।

চট্টগ্রামে গত বছরের ৩ এপ্রিল প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ৯ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম কোনো ব্যক্তি মারা যান। গত ১৪ মাসে করোনায় চট্টগ্রামে মারা গেছেন মোট ৬৬৬ জন। এর মধ্যে নগরীতে ৪৬৪ জন এবং উপজেলায় ২০২ জন।

বয়সভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী চট্টগ্রামে সংক্রমিতদের মধ্যে ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি— ২৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের আক্রান্তের হার ১৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। অন্যদিকে মৃত্যুর হার বেশি ৬০ বছর থেকে তার চেয়ে বেশি বয়সীদের— ৫৬ দশমিক ১৫ শতাংশ। সংখ্যার হিসাবে এই জেলায় করোনায় মারা যাওয়া ৬৬৬ জনের মধ্যে ৬০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ ২৮১ জন, নারী ৯৩ জন। আক্রান্ত বেশি বয়সে তরুণ হলেও বয়স্কদের মধ্যে মৃতের হার বেশি।

আক্রান্ত ও শনাক্তের হার বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে চট্টগ্রামে হাসপাতালেও রোগীর ভিড় বেড়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে মোট রোগী ছিল ৫৩৮ জন। আগের দিন বুধবার ছিল ৪৯৮ জন। দুই সপ্তাহ আগেও গত ৮ জুন রোগী ভর্তি ছিল ৪০১ জন। অর্থাৎ গত ১৬ দিনে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ‘কিছুটা সংকটাপন্ন’ রোগীও আছেন। তাদের সংখ্যা গত এক সপ্তাহে বাড়ছে। নগরীর কোভিড বিশেষায়িত চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ১৬টি আইসিইউ শয্যার একটিও খালি নেই। একইভাবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউ শয্যার ১০টির একটিও খালি নেই। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও রোগী আগের তুলনায় বেড়ে গেছে।

সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে কোভিড রোগী শনাক্তের পরিমাণ বেড়ে গেছে। কিছু রোগী হাসপাতালে আসছে খারাপ অবস্থায়। অনেকের পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হচ্ছে। আমরা ঈদ পরবর্তী সময়ে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করেছিলাম। সেটিই সত্যি হয়েছে। মানুষজন গ্রামে গেছে, সেখানকার লোকজনকে সংক্রমিত করেছে। এখন গ্রামেও করোনা ছড়িয়ে পড়ছে।।’

এ অবস্থায় করণীয় জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে হলে মাস্ক পরতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। সেটা মানানোর জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। যেকোনো ধরনের সামাজিক কিংবা অন্যান্য অনুষ্ঠান ও জনসমাগম একেবারে বন্ধ রাখতে হবে।’

ছবি: চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর চাপ; শ্যামল নন্দী

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

করোনা পরিস্থিতি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় টপ নিউজ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর