বেসরকারিতে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার অনুমতি মিলছে, খরচ হবে ৭০০ টাকা
২৪ জুন ২০২১ ২৩:১৯
ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে আরটি পিসিআর পদ্ধতি বাদেও বেসরকারি খাতে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার অনুমোদন দিতে যাচ্ছে সরকার। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে অ্যান্টিজেন পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষার জন্য ৭০০ টাকা খরচ নির্ধারণ করা হবে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এরইমধ্যে দেশে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে অনেক স্থানেই এ পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা হচ্ছে। বেসরকারিভাবে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ৩৫টি হাসপাতাল এরই মধ্যে আবেদন করেছে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালুর জন্য। সেবার মান নিশ্চিত করে তাদেরও অনুমোদন দেওয়া হবে অবশ্যই।’
তিনি বলেন, ‘অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় মাত্র ২০ মিনিটে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত করা যায়। আর তাই ৭০০ টাকায় এ পরীক্ষা বেসরকারিভাবে চালু করা হতে পারে। অনুমোদনের কোনো বিষয় আর নেই, শুধু অনুমতি দিতে হবে। সেটিও খুব দ্রুতই দেওয়া হবে দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে।
এর আগে, ১ জুন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিয়া স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে বেসরকারি খাতে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত চিঠি দেন।
চিঠিতে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে কোভিড-১৯ মহামারিকালে আরটি-পিসিআর (রিয়েল টাইম পলিমার চেইন রিঅ্যাকশন) পরীক্ষার পাশাপাশি অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালু করা জরুরি।’
যদিও সরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিগত কয়েক মাস ধরে মাত্র ১০০ টাকায় অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
চিঠিতে তিনি জানান, বর্তমানে বেসরকারি এ পরীক্ষা চালুর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর এরইমধ্যে দুটি অ্যান্টিজেন কিটস ব্যবহারের অনাপত্তি দিয়েছে। বর্তমানে সব খরচসহ এ কিটসের আমদানি মূল্য সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা। এ দামের সঙ্গে বেসরকরি স্বাস্থ্যসেবা খাতের অন্যান্য খরচসহ সর্বোচ্চ ৭০০ টাকায় পরীক্ষা করা যেতে পারে।
এর আগে, ১১ মার্চ তারিখে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা সংক্রান্ত নীতিমালা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন করা হয়। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. বিলকিস বেগমের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে সেটি উল্লেখ করা হয়।
অ্যান্টিজেন পরীক্ষা সংক্রান্ত নীতিমালার ‘ক’ শ্রেণিতে বলা হয়েছে,
১. কোভিড-১৯ উপসর্গ রয়েছে এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা যাবে।
২. অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় পজিটিভ হলে উক্ত ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত বলে বিবেচিত হবে।
৩. নেগেটিভ অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ক্ষেত্রে অনুমোদিত ‘এনএএটি (নিউক্লিয়ার এসিড এমপ্লিফেকেশন টেস্ট- আরটি পিসিআর/ জিনএক্সপার্ট)’ এর মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করতে হবে।
৪. কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি হলে নীতিমালায় উল্লিখিত নির্দেশনা ব্যবহার করতে হবে।
৫. উপসর্গসহ কোনো ব্যক্তি অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় নেগেটিভ হলে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী তার বিগত ১৪ দিনের সংক্রমিত হওয়ার পরিস্থিতির পর্যায়গুলো বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবেন।
নীতিমালার ‘খ’ শ্রেণিতে বলা হয়েছে,
১. কোভিড-১৯ উপসর্গ নেই অথচ বিগত ১৪ দিনের মধ্যে কোভিড-১৯ রোগীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে গিয়েছেন এমন ব্যক্তিদের এ শ্রেণিতে বিবেচনা করতে হবে।
২. এক্ষেত্রে অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় পজিটিভ হলেও ‘এনএএটি’ দ্বারা রোগ নির্ণয় করতে হবে কিনা সেটি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ক্লিনিক্যাল পর্যালোচনা করে ঠিক করবেন।
৩. অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় পজিটিভ ব্যক্তির ক্ষেত্রে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
নীতিমালার ‘গ’ শ্রেণিতে বলা হয়েছে,
১. একজন উপসর্গহীন ব্যক্তি যিনি গত ১৪ দিন কোনো কোভিড রোগীর সংস্পর্শে যাননি তাকে এ শ্রেণিতে বিবেচনা করতে হবে। ২. এক্ষেত্রে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুধু স্ক্রিনিং পরীক্ষা হিসাবে বিবেচিত হবে। ৩. অ্যান্টিজেন পরীক্ষা নেগেটিভ হলে উক্ত ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত নয় বলে বিবেচিত হবেন।
৪. কমিউনিটিতে সংক্রমণের হার বেশি হলে অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় নেগেটিভ হলেও নেগেটিভ হওয়ার পর ‘এনএএটি’ করতে হবে কিনা সেটি বিবেচনা করতে হবে।
৫. পজিটিভ অ্যান্টিজেনের ক্ষেত্রে ‘এনএএটি’র মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে।
৬. ‘এনএএটি’ দ্বারা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অথবা না করা গেলে ১৪ দিন পর্যন্ত ব্যক্তিকে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
নীতিমালার ৩ ধারায় বলা হয়েছে,
প্রযুক্তিগতভাবে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা দ্রুত রোগ শনাক্ত করে। যা অতি সহজে এবং স্বল্পসময়ে ব্যবহারযোগ্য। কিন্তু এটি কোনোভাবেই কোনো ব্যক্তি নিজে ব্যবহার করতে পারবেন না।
শুধু সরকার নির্ধারিত উপযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের তত্ত্বাবধানে এটি ব্যবহার করা যাবে। অ্যান্টিজেন কিটস ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন প্রয়োজন হবে এবং এ সংক্রান্ত নীতিমালা পুরোপুরি মেনে চলা সাপেক্ষে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ পরীক্ষা করতে পারবে।
এখানে আরও বলা হয়েছে, বেসরকারি পর্যায়ে এ পরীক্ষা শুধু ল্যাবরেটরিতেই করা যাবে। এক্ষেত্রে ন্যূনতম ‘বি’ শ্রেণির ল্যাবরেটরি হতে হবে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ‘ইনডিএক্টিভ কস্ট’র আলোক স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক নির্ধারিত দাম অনুসরণ করতে হবে। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদিত কিটস ও সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হবে।
এ সংক্রান্ত সব তথ্য অধিদফতরের এমআইএস শাখায় প্রতিদিন পাঠাতে হবে। সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে সার্ভিলেন্স সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করবে রোগতত্ত্ব রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইডিসিআর।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএমসিএ) সভাপতি এম এ মুবিন খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন থেকেই শুনেছি অ্যান্টিজেন পদ্ধতিতে পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হবে বেসরকারি খাতে। কিন্তু সেটা কাগজে কলমে বাস্তবায়ন হতে দেখিনি। তাই আগে বাস্তবায়ন হোক আর তারপরে মন্তব্য করব।’
এর আগে গেল বছরের ২ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা সারাবাংলাকে ১০টি জেলায় অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
পরবর্তীতে ৫ ডিসেম্বর থেকে সরকারিভাবে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তে দেশে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হয়।
উল্লেখ্য, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা বাড়তে থাকলে সংশ্লিষ্টরা অ্যান্টিজেন পরীক্ষার অনুমতি দেওয়ার কথা বলে আসছিলেন।
১০ জুলাই নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্তে নমুনা পরীক্ষার সুযোগ প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটিও ঔষধ প্রশাসনকে অ্যান্টিজেন নির্ভর পরীক্ষার অনুমতির জন্য পরামর্শ দেয়।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য কোন কিটটি সবচেয়ে ভালো বা কার্যকর, সেটি নিশ্চিত না হওয়ার কারণে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু করতে দেরি হয়েছে।’
শেষ পর্যন্ত ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ডা. বিলকিস বেগমের সই করা এক চিঠিতে এই পদ্ধতিতে করোনা পরীক্ষায় সরকারের অনুমতি দেওয়ার কথা জানানো হয়। তবে এরপরও দেশে অ্যান্টিজেন টেস্ট চালু করা যায়নি ডিসেম্বর পর্যন্ত।
সারাবাংলা/এসবি/একে
অ্যান্টিজেন টেস্ট করোনা পরীক্ষা কোভিড-১৯ নভেল করোনাভাইরাস বেসরকারি হাসপাতাল