‘কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে কানাডায় ইমিগ্রেশন বাড়বে’
২৫ জুন ২০২১ ১৭:১০
ঢাকা: বৈশ্বিক মহামরি কোভিড-১৯ এ প্রভাবে বর্তমানে বাইরে থেকে কানাডায় ইমিগ্রেশন বন্ধ রয়েছে। তবে এর প্রভাব কমে এলে কানাডায় ইমিগ্রেশনের পরিমাণ বাড়বে। ইমিগ্রেশনেরা কানাডার অর্থনীতির ওপর একটা বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। কোভিডের কারণে কানাডায় অভিবাসন বন্ধ হলে এর প্রভাব সে দেশের অর্থনীতিতেও পড়ে। কানাডায় কোভিড-১৯ এর বৃদ্ধি ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করতে গত বছর ট্রাভেলের জন্য নানা বিধিনিষেধ দেওয়া হয়। সে কারণে মহামারিকালে বাইরে থেকে কানাডায় খুব বেশি জনগোষ্ঠী যেতে পারিনি। গত বছর কানাডার অভিবাসনের কোটাও পূরণ হয়নি। তবে কোভিডের প্রভাব কমে আসলে কানাডায় ইমিগ্রেশনের পরিমাণ আবারও বৃদ্ধি পাবে।
সারাবাংলা লিগ্যাল চেম্বারস ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে এমন তথ্য উঠে আসে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) রাতে আইনজীবী ইফ্ফাত গিয়াস আরেফিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন কন্সালটেন্ট ও আইনজীবী (আরসিআইসি) এফ এম সাজিদ বিন হোসেন এবং ইমিগ্রেশন কন্সালটেন্ট ও আইনজীবী শারমিন আলম।
মহামারি কোভিড-১৯ এর কারণে কানাডার অভিবাসনে নানা ধরনের প্রভাব পড়েছে।
আইনজীবী এফ এম সাজিদ বিন হোসেন এ বিষয়ে বলেন, ‘কোভিডের কারণে ২০২০ সালে অবশ্যই একটি বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মানুষ অভিবাসী হিসেবে কানাডায় গিয়ে থাকেন। ইমিগ্রেশন কানাডার অর্থনীতির ওপর একটা বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। অভিবাসন প্রক্রিয়া বন্ধ হলে কানাডার অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়ে। কোভিড যেন ছড়াতে না পারে সেজন্য গত বছর ট্রাভেল বন্ধে নানা বিধিনিষেধ দেওয়া হয়। সে কারণে মহামারিকালে বাইরে থেকে কানাডায় খুব বেশি জনগোষ্ঠী যেতে পারেনি। গত বছর কানাডার অভিবাসনের কোটা পূরণ হয়নি।’
এ কারণে কানাডার মিনিস্ট্রি অব ইমিগ্রেশন বুঝতে পেরেছে যে, ইমিগ্রেশন বন্ধ হয়ে যায় বা মন্থর হয়ে যায় তাহলে কানাডিয়ান ইকোনমি গ্রো করবে না। কানাডার মোট ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রায় ৩২ ভাগ অভিবাসী জনগোষ্ঠীর ওপর নির্ভরশীল। আর স্বাস্থ্য সেক্টরের ২৫ ভাগ কর্মী হচ্ছে অভিবাসী জনগণ। তাই অভিবাসী জনগোষ্ঠী আসা বন্ধ হয়ে গেলে কানাডার অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কানাডার অর্থনীতি অভিবাসীদের ওপর প্রচণ্ডভাবে নির্ভরশীল।
আইনজীবী শারমিন আলম বলেন, কানাডা সরকার ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালের যে পরিমাণ ইমিগ্রেন্ট নেওয়ার কথা ছিল, গত বছর তার চেয়ে পরিমাণ কিছুটা বাড়িয়েছে। অনেকের ধারণা ছিল তারা এত লোক পাবে না। কিন্তু কানাডায় যারা বিভিন্নভাবে যারা বসবাস করে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে আসছিল। তাদের মধ্যে থেকে সরকার কিছু লোককে বেছে নিয়েছেন। তাই লোক না পাওয়ার সমস্যা হয়নি। তবে কানাডা সরকারের ইমিগ্রেন্ড কোটা পূরণ করতে হলে আগামী দুবছর বাইরে থেকে লোকজন নিতেই হবে। আর ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ এর টিকা একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অতএব বলা যায় ২০২২-২৩ সালে বাইরে থেকে অনেক লোক নিতে হবে কানাডাকে।
কানাডায় ছাত্র হিসেবে যাওয়ার পর সেখানে যে সুবিধা পাওয়া যায়: ছাত্র হিসেবে যাওয়ার পর পড়াশোনা চলাকালে অনেক কিছু শেখা হয়ে যায়। সেখানে পড়াশোনা শেষ করে ইমিগ্রেন্ট হওয়ার আগে কানাডার চাকরি খোাজা থেকে শুরু করে অনেক কিছুই শেখা হয়ে যায়। ছাত্র হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি খোঁজা, নেটওয়ার্কিং বাড়ানো, প্রশিক্ষণসহ নানা বিষয় শিখিয়ে থাকে। বেশিরভাগ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এটি করে থাকে। প্রতিটি প্রোগ্রাম শেষে নির্দিষ্ট একটি ফার্মে গিয়ে অনুশীলন করার সুযোগ দেওয়া হয়। ছাত্র হিসেবে কানাডায় গেলে এসব সুবিধা পাওয়া যায়।
সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো কানাডিয়ান এডুকেশনের জন্য একটা ভালো সিআরএস পয়েন্ট পাওয়া যায়। তা ছাড়া কানাডায় কাজ করার জন্য ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া যায়।পরে কানাডায় কাজ করার অভিজ্ঞতা দিয়ে স্থায়ী নাগরিকের জন্য আবেদন করা যায়। এতে অনেক সুবিধা হয়।
মহামারি পরবর্তী সময়ে কানাডার ইমগ্রেশনের ভবিষ্যত কেমন হবে: এ মূহূর্তে কানাডার ভেতরে যতটা আবেদন পড়ছে। তার চেয়ে বাইরে থেকে অনেক বেশি লোকজনের আবেদন পড়ছে। ২০২২-২০২৩ সালে কানাডা সরকার পলিসি অনুযায়ী ৮ লাখ ৩০ হাজার লোক নিতে হবে। এই কোটা পূরণ করতে হলে বাইরের দেশ থেকে লোক নিতেই হবে। এ কারণে লোক নেওয়ার ক্ষেত্রে সিআরএস (কম্প্রিহেন্সিভ র্যাংকিং সিস্টেম) স্কোর ৪৭০ থেকে কমিয়ে নিয়ে আসবে সরকার। আগামী দিনে হয়ত অনেক চাকরির কোটা খালি থেকে যাবে। কারণ হলো বিশ্বের যেকোনো দেশের মানুষ কানাডায় অভিবাসী হতে পারে। কানাডায় ইমিগ্রেন্ট হওয়ার জন্য সিআরএস স্কোর খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
কানাডায় ইমিগ্রেশনের জন্য ৩৩ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য আইএলটিএস স্কোর খুব ভালো হতে হবে। বয়স ৩৫ বছরের বেশি তাদের এক্সপ্রেস এন্টির সুযোগ কমে যায়। আর চল্লিশোর্ধ্ব বয়সীদের জন্য কানাডায় যাওয়ার জন্য তাদের ভালো সিআরএ স্কোর প্রয়োজন হয়।
বাংলাদেশে অনেক কানাডিয়ান কন্সালটেন্ট ফার্ম দেখতে পাওয়া যায় যারা প্রকৃতপক্ষে রেগুলেটেড নয় জানিয়ে আইনজীবী সাজিদ বিন হোসেন বলেন, বাংলাদেশের বেশিরভাগ ইমিগ্রেশন ফার্মগুলো রেগুলেটেড নয়।
কানাডায় ইমগ্রেন্ট হওয়া জন্য যেসব বিষয় জানা প্রয়োজন: কানাডায় দু ধরনের মানুষ ইমিগ্রেশন কন্সসালটেন্টেসি করতে পারে।
এক. যারা রেগুলেটেড কানাডিয়ান ইমগ্রেশন কন্সালটেন্ট।
দুই: কানাডার আইনি সনদ নিয়ে তারা আইন অনুশীলন করছে। এর বাইরে কেউ কানাডিয়ান কন্সালটেন্সি করতে পারে না। এ বিষয়টি সবার মাথায় রাখতে হবে।
কানাডায় ইমিগ্রেশনের জন্য প্রথমেই যে আইনজীবীর কাছে যাওয়া হবে তার নাম, তিনি যে ল ফার্মে কাজ করেন ওই ফার্মের নাম ঠিকানা, আইনজীবীর আরসিআইসি নম্বর ইত্যাদি অবশ্যই যাচাই করে নিতে হবে।
কানাডায় বসবাসের ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অত্যাবশকীয়। বাংলাদেশিরা ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার জন্য আইএলটিএস পরীক্ষা দিয়ে থাকেন। আইইএলটিএস আবার দুধরনের। জেনারেল ট্রেনিং এবং একাডেমিক। ইমিগ্রেশনের আবেদন করতে জেনারেল ট্রেনিং পরীক্ষা দিয়ে হয়, একাডেমিক নয়। আর, একাডেমিক লাগে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে। একাডেমিক পরীক্ষা জেনারেল ট্রেনিংয়ের চেয়ে কিছুটা কঠিন। তাই, কেউ কেউ মনে করেন একাডেমিক পরীক্ষা দিলে সম্ভবত ইমিগ্রেশন এবং পড়াশোনা দুই কাজই হবে। আসলে তা নয়। আইইএলটিএস স্কোরের সামান্য তারতম্য সিআরএস স্কোরে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
সিআরএস স্কোর কী: এক্সপ্রেস এন্ট্রি সিস্টেমে যেসব ইমিগ্রেশন প্রত্যাশীর আবেদন বিবেচনায় আনা হয় তাদের ক্ষেত্রে প্রথমেই বিবেচনায় নেওয়া হয় এই সিআরএস স্কোর। আবেদনকারীর বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের অভিজ্ঞতা, ভাষায় দক্ষতা, ইত্যাদির সঙ্গে তিনি বিবাহিত হয়ে থাকলে স্বামী বা স্ত্রীর অনুরূপ দক্ষতা বিবেচনায় নিয়ে নির্ধারণ করা হয় এ সিআরএস স্কোর। সিআরএস স্কোর এর হিসাবে আইইএলটিএস স্কোর বড় ভূমিকা পালন করে।
সারাবাংলা/কেআই/একে