করোনাকালে নারীর জীবনমান উন্নয়নে পরিকল্পনার আহ্বান
২৫ জুন ২০২১ ১৭:৪৯
ঢাকা: করোনাকালে নারীর জীবনমান উন্নয়নে সুনির্দ্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন সংসদ সদস্য, উন্নয়ন কর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) বিকেলে অনলাইন সংলাপে (জুম প্লাটফরমে) অংশ নিয়ে তারা বলেছেন, করোনা পরিস্থিতিতে জনজীবনে সংকট বেড়েছে। এর বেশি প্রভাব পড়েছে নারীদের ওপর। এই প্রভাব মোকাবিলায় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা কেএনএইচ জার্মানি এবং বেসরকারী সংগঠন সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস) আয়োজিত ‘করোনাকালে নারীর জীবনমান ও জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক ওই সংলাপে সভাপতিত্ব করেন স্কাস চেয়ারম্যান জেসমিন প্রেমা।
সাংবাদিক নিখিল ভদ্রের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, সংসদ সদস্য সৈয়দা রুবিনা আক্তার ও আ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক কাজী আ খ ম মহিউল ইসলাম, কেএনএইচ জার্মানীর প্রতিনিধি মাটিলদা টিনা বৈদ্য, টিম অ্যাসোসিয়েটের টিম লিডার পুলক রাহা, স্ক্যান সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল, পরিবার পরিকল্পনা সমিতির জেলা কর্মকর্তা অরুন কুমার শীল, ফেইথ ইন একশনের নৃপেন বৈদ্য, সাংবাদিক মো. মুজিবুল ইসলাম, শফিক আজাদ, এস এম আনোয়ার ও পলাশ বড়ুয়া, স্কাসের তৌহিদুল মোস্তফা প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উত্থাপন করেন পার্লামেন্টনিউজ সম্পাদক সাকিলা পারভীন।
সংলাপে সাবেক প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেন, ‘নারীর জীবনমান উন্নয়নে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। জাতীয় বাজেটে বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপের কথাও বলা হয়েছে। এমনকি নারী ও শিশুদের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। তারপরও নারীর ক্ষমতায়নে শিক্ষা ও সচেতনতা বাড়াতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ নিতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর কাঙ্ক্ষিত উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।’ যেখানে নারীর সমাধিকার নিশ্চিত ও জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকারের অনেক উন্নয়ন কার্যক্রম আটকে আছে উল্লেখ করে সংসদ সদস্য রুবিনা আক্তার বলেন, ‘নারী নির্যাতন বন্ধ ও বাল্যবিবাহ কমাতে সরকার কাজ করছে। নারীর ক্ষমতায়নেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একাধিক আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।’ তবে এ সকল বিষয়ে সমাজের দৃষ্টি ভঙ্গিও পরিবর্তন করা প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রান্তিক নারীদের উন্নয়নে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারই উদ্যোগ নিয়েছে বলে উল্লেখ করেন এমপি গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে নারীর সমতা অর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। সেই লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে।’
এই লক্ষ্য অর্জনে সম্মিলিত ভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী আ খ ম মহিউল ইসলাম বলেন, সকল ক্ষেত্রে নারীদের অংশ গ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে। নারীদের উন্নয়নে সরকার বাজেট বরাদ্দও দিচ্ছে। তবে বাজেট সঠিকভাবে বাস্তবায়িত না হলে বরাদ্দ বৃথা হয়ে যাবে। বাজেটের যথাযথ বাস্তবায়নে মনিটারিং জোরদারের আহ্বান জানান তিনি।
বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থার গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে সংলাপে উত্থাপিত মূল প্রবন্ধে জানানো হয়, করোনাকালে পারিবারিক সহিংসতার শিকার ৯৭ দশমিক ৪ শতাংশ নারী। এই সময়ে ৯১ শতাংশ নারীর বাসায় কাজের চাপ বেড়েছে। একইসঙ্গে পরিবারে ও পাড়ায় নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে। বিশেষ করে সাইবার অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ৮০ শতাংশই নারীর বিরুদ্ধে। এছাড়া করোনাকালে বাল্যবিবাহ ছয়গুন বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সংলাপের প্রস্তাবিত বাজেটের নানান ইতিবাচক তুলে ধরে বাজেট যথাযথভাবে বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। একইসঙ্গে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে গৃহীত জাতীয় কর্মপরিকল্পণা ২০১৩ – ২০২৫ যথাযথ বাস্তবায়ন, নারীর অর্থনেতিক ক্ষমতায়নে তৃণমূলের নারীদের মুলধারার অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত করা, গৃহস্থালী কাজের স্বীকৃতি প্রদান, নির্যাতিত নারীর বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত এবং বাজেট বাস্তবায়নে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে