নোয়াখালী: প্রায় দেড়মাস আগে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন নিয়োগ দেয় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) প্রশাসন। নিয়োগের ক্ষেত্রে আইনকে তোয়াক্কা না করা ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন লঙ্ঘন করে বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপককে করা হয়েছে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন। এ নিয়োগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভাগীয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সমালোচনার ঝড় তুললে তা পরবর্তীতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে আসে। তবু সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
গত ৫ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আগামী ২ বছরের জন্য ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ও বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ড. সেলিম হোসেনকে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের এই ডিন নিয়োগকে নিয়মবহির্ভূত বলছেন বিভাগের জ্যৈষ্ঠ শিক্ষকরা। ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে তিনজন সহযোগী অধ্যাপক থাকার পরও অন্য একটি অনুষদ থেকে ডিন নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সুস্পষ্ট করেছে লঙ্ঘন বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০১ এর ২৩ নং ধারার, ৫ নং উপধারায় উল্লেখ আছে— ‘প্রত্যেক অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে এবং ভাইস-চ্যান্সেলর কর্তৃক নির্দিষ্টকৃতভাবে অধ্যাপকের মধ্যে ইহার ডিন পদ আবর্তিত হইবে এবং তিনি দুই বৎসরের মেয়াদে তাহার পদে বহাল থাকিবেন।
তবে শর্ত থাকে যে, কোনো বিভাগে অধ্যাপক না থাকিলে সেই বিভাগের জ্যেষ্ঠতম সহযোগী অধ্যাপক ডিন পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হইবে এবং কোনো বিভাগের একজন অধ্যাপক ডিনের দায়িত্ব পালন করিয়া থাকিলে ওই বিভাগের পরবর্তী পালাসমূহে বাকী অধ্যাপকগণ জ্যেষ্ঠার ভিত্তিতে ডীন পদে নিযুক্তির সুযোগ পাইবেন।
আরও শর্ত থাকে যে, একাধিক বিভাগে সমজ্যেষ্ঠ অধ্যাপক অথবা সহযোগী অধ্যাপক থাকিলে, সেক্ষেত্রে তাহাদের মধ্যে ডিন পদের আবর্তনক্রম ভাইস-চ্যান্সেলর কর্তৃক নির্দিষ্ট হইবে।’
আইন লঙ্ঘন করে ডিন নিয়োগের সিদ্ধান্তে অটল থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. এস এম মাহবুবুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইন জানার পরও যা ভাল মনে করেছে তাই করছে। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে অসম্মতি জানায় ফ্যাকাল্টির অন্য দুই সহযোগী অধ্যাপক। তবে দেড় মাস আগে অবৈধ ডিন নিয়োগের পর তা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন ওই শিক্ষকরা।
নিয়োগ পরবর্তী সময়ে জিজ্ঞেস করা হলে তখন ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. এস এম নজরুল ইসলাম প্রশ্ন রাখেন— আইন অনুযায়ী অনুষদে ডিন হওয়ার মতো যোগ্য লোক থাকা সত্ত্বেও ভিন্ন অনুষদ থেকে ডিন নিয়োগ কতটা যুক্তিসংগত?
তিনি আরও বলেন, আমরা চাই, সরকার কর্তৃক প্রণীত বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী যিনি ব্যবসা প্রশাসন অনুষদের ডিন হওয়ার যোগ্য তাকেই নিয়োগ দেওয়া হোক।
নজরুল ইসলাম আরও বলেন, এর আগেও এই অনুষদে ডিন হিসেবে অন্য বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ায় নানান সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে বিভাগগুলো। এর আগের ডিন গত দুই বছরে একটিও অফিসিয়াল মিটিং ডাকেননি।
ডিন নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল হোসেন বলেন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে বিজ্ঞান অনুষদ থেকে ডিন নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে উপাচার্য মহোদয়ের ক্ষমতা আছে বলেই তিনি দিয়েছেন। ডিন পরিবর্তন করার বিষয় নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনা শুনিনি।
এ বিষয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম বলেন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে কোনো অধ্যাপক না থাকায় ভিন্ন অনুষদের অভিজ্ঞ অধ্যাপককে আমরা সেখানে ডিন হিসেবে নিয়োগ দিয়েছি।
তবে বিবিএতে একাধিক সহযোগী অধ্যাপক থাকলেও তাদের বাহিরে ডিন নিয়োগের কারণ হিসেবে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিপূর্বের ইতিহাস উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, পূর্বে কোনো সহযোগী অধ্যাপক এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষদের ডিন হয়নি, সেজন্য এবারও ভিন্ন অনুষদ থেকে অধ্যাপক এনে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে ডিন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ওই অনুষদে কোনো শিক্ষক অধ্যাপক হলেই তাকে ডিন করা হবে এবং বর্তমান ডিনকে সরিয়ে দেওয়া হবে।