Tuesday 06 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জলাবদ্ধতা: অর্ধেক কাজ শেষ, এবার ত্রুটি খুঁজতে কমিটি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৬ জুন ২০২১ ১৮:৫০ | আপডেট: ২৭ জুন ২০২১ ০০:১৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চার বছর আগে নেওয়া প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে ৫৫ ভাগ শেষ হয়েছে। এ অবস্থায় প্রকল্পের নকশা ও কাজে কোনো ত্রুটি আছে কি না সেটা চিহ্নিত করার তাগিদ দিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। এজন্য চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই কমিটি জলাবদ্ধতা নিরসন ছাড়াও চট্টগ্রাম নগরীতে বাস্তবায়নাধীন মহাপ্রকল্পগুলোর কাজ ঠিকভাবে হচ্ছে কি না সেটা তদারক করবে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৬ জুন) নগরীর সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন, কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি, দখল ও দূষণ রোধে গৃহীত কার্যক্রম পর্যালোচনা’ সংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভা শেষে মন্ত্রী এসব কথা জানান। সকাল ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ওয়াসা, জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা অংশ নেন।

বিজ্ঞাপন

সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত সম্পর্কে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনসহ একটি সুন্দর নগরী বিনির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন এবং সেগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে। এই কাজগুলো যাতে দ্রুততার সঙ্গে সঠিকভাবে হয় এবং বাস্তবায়নের সময় কোথাও কোনো ত্রুটি চিহ্নিত হলে সেটার সমাধানের জন্য বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে একটি কমিটি হয়েছে। কমিটিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসকও থাকবেন। সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরাও থাকবেন। কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে বিভাগীয় কমিশনার দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিষয়টি আমাকে অবহিত করবেন। কমিটি প্রতিমাসে একটি করে সভা করবে।’

২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। সিডিএর ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়। ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল থেকে খালের আবর্জনা অপসারণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রকল্পের কার্যক্রম। ইতোমধ্যে নগরের ৩৫টি খাল থেকে ৩ হাজার ১৭৯টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৫৪টি ব্রিজ-কালভার্টের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।

নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু ও শেষ করতে না পারায় প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে চলতি বছর জুন পর্যন্ত করা হয়েছিল। এরপর এখন আরও দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ করার আলোচনা চলছে।

নগরীতে বাস্তবায়নাধীন জলাবদ্ধতা নিরসনের এই প্রকল্প নিয়ে শুরু থেকে চসিক ও সিডিএ’র মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ আছে। সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের আমলে সেটি ‍দৃশ্যমান ছিল। রেজাউল করিম চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করে সমন্বিতভাবে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু জুন মাসে দুই দফায় টানা বৃষ্টিতে নগরীজুড়ে মারাত্মক জলাবদ্ধতার পর চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী সুর পাল্টান। তিনি নগরবাসীর দুর্ভোগের দায় সিডিএকে নিতে হবে বলে বক্তব্য দেন।

এ অবস্থায় শুক্রবার (২৫ জুন) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর চাক্তাই খাল এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে যান। তিনি এসময় প্রকল্পের কাজের মধ্যেই খালের প্রশস্ত মুখ সংকীর্ণ হয়ে যাওয়া দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলে চসিকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজের ত্রুটি থাকায় খাল ভরাট হয়ে পুরো শহর ডুবে গেছে কি না?- শনিবারের সভাশেষে এমন এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল (শুক্রবার) আমি পরিদর্শন করেছিলাম। ওনারা যেভাবে ডিজাইন করেছেন, সেই ডিজাইনগুলোতে কোনো ত্রুটি আছে কি না সেটা যাচাই করা হবে। বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে যে কমিটি হয়েছে তারা সব ডকুমেন্ট দেখে বিচার বিশ্লেষণ করে দেখবে এবং কোনো ত্রুটি পেলে আমাদের অবহিত করবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেনাবাহিনীর নিযুক্ত প্রকল্প পরিচালক লে.কর্নেল শাহ আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের ৫৫ ভাগ কাজ আমরা ইতোমধ্যে শেষ করেছি। প্রকল্পের সার্বিক ডিজাইনে কোনো সমস্যা নেই বা সেটা পরিবর্তনের কোনো বিষয় নেই। মন্ত্রী মহোদয় রেগুলেটরগুলো দেখে যেটা বলেছেন, সেটা হচ্ছে- সেগুলো আরও বড় হলে ভালো হতো। কিন্তু এগুলো তো ড্রইং-ডিজাইন দেখেই হয়েছে। যারা ডিজাইন করেছেন সেটা নিয়ে আমরা তাদের সঙ্গে একটু বসব। তারা ডিজাইন দেখে জানাবেন যে কোনো ত্রুটি আছে কি না। শুধু এতটুকুই সিদ্ধান্ত সভায় হয়েছে।’

তবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেছেন, প্রকল্পের কাজ শেষ হলে কোনো ত্রুটি ছিল কি না সেটা ধরা পড়বে। কিন্তু কাজ চলাকালীন মনিটরিং করা হচ্ছে, যদি কোনো ত্রুটি ধরা পড়ে সেটা সংশোধন করা হবে।

‘আজকের সিদ্ধান্ত হচ্ছে- সব প্রকল্পগুলো যাতে দ্রুত বাস্তবায়ন হয়, সঠিকভাবে হয় এবং কোনো ত্রুটি থাকলে সেগুলো চিহ্নিত করে যেন সংশোধন করা হয়। ত্রুটি আছে কি না সেটা বিজ্ঞানসম্মতভাবে বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে। জোয়ারের সময় কত পানি আসছে এবং যেসব অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে সেগুলো দিয়ে কত পানি নিষ্কাশন করা যাবে সেটা বিশ্লেষণ করলে তখন বলা যাবে’- বলেন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

শনিবারের সভার পর চসিক এবং সিডিএ’র মধ্যে আর কোনো সমন্বয়হীনতা থাকবে না বলেও আশা করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী।

কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে সভায় উপস্থিত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেয়র এবং জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান উপদেষ্টা হিসেবে থাকবেন। কমিটির প্রধান হবেন বিভাগীয় কমিশনার। সদসসংখ্যা এখনও নির্ধারণ হয়নি। তবে সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসনসহ প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত সব সংস্থার প্রতিনিধিরা থাকবেন। এটা বিভাগীয় কমিশনার আমাদের সঙ্গে বসে ঠিক করবেন।’

এদিকে সভার শুরুতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী জানান, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ তদারকি ও সমন্বয়ের জন্য যে মন্ত্রীকে আহবায়ক করে যে একটি কমিটি আছে সেটা তিনি অনেকদিন জানতেই পারেননি। তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালে জলাবদ্ধতা নিরসনের যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল, তা তদারকি ও সমন্বয়ের জন্য একটি কমিটি তখনই করা হয়েছিল। সেখানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে আহ্বায়ক করা হয়েছিল। এটা আমি অনেক পরে জেনেছি।’

সভায় মন্ত্রী আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মহানগরী পর্যন্ত কর্ণফুলী নদীর পাড় লিজ দিয়ে কোনো ধরনের শিল্প, কল-কারখানা নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না। চট্টগ্রাম দেশের অর্থনীতির প্রাণ। এ শহরকে নিয়ে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। নদীর পাড়ে অবকাঠামো নির্মাণ করা হলে দখল ও দূষণ বাড়বে। পরিবেশ এবং কর্ণফুলী নদীর স্বকীয়তা ও সৌন্দর্য নষ্ট হবে, যা কোনো অবস্থাতেই করতে দেওয়া হবে না। কারণ এ নদীর সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর ও দেশের অর্থনীতির স্বার্থ জড়িত।’

চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে সভায় চসিকের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, ওয়াসার এমডি প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ, সিডিএ’র চেয়ারম্যান জহিরুল আলম বক্তব্য দেন।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

চট্টগ্রাম জলাবদ্ধতা টপ নিউজ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর