Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সপ্তাহের ব্যবধানে সংক্রমণ-মৃত্যু বেড়ে দেড় গুণ

সারাবাংলা ডেস্ক
২৬ জুন ২০২১ ১৯:৪০

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি থামানো যাচ্ছে না। এপ্রিল মাসে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ চূড়া স্পর্শ করার সংক্রমণ কমতে শুরু করেছিল। তবে এবারে সেই সংক্রমণ ফের বাড়তে শুরু করেছে। শুধু তাই নয়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে সংক্রমণ ও করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর বেড়ে প্রায় দেড় গুণ হয়েছে। তবে সে তুলনায় নমুনা পরীক্ষা ততটা বাড়েনি। ফলে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার অনেকটাই বেড়েছে আগের সপ্তাহের তুলনায়।

বিজ্ঞাপন

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর থেকে আজ শনিবার (২৬ জুন) পর্যন্ত শেষ হয়েছে ৬৮তম সপ্তাহ। এর মধ্যে ২০ থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত সাত দিন ছিল ৬৮তম সপ্তাহ, যা ২০২১ সালের ২৫তম এপিডেমিওলজিক্যাল সপ্তাহ। এর আগের ১৩ থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত ছিল ৬৭তম সপ্তাহ, যা ২০২১ সালের ২৪তম এপিডেমিওলজিক্যাল সপ্তাহ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব বলছে, ৬৭তম সপ্তাহের তুলনায় ৬৮তম সপ্তাহে এসে নমুনা পরীক্ষা বেড়েছে ২০ শতাংশেরও কম। কিন্তু একই সময়ের ব্যবধানে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে প্রায় দেড় গুণ হয়েছে। আর নমুনা পরীক্ষার তুলনায় সংক্রমণ বেশি শনাক্ত হওয়ায় নমুনা পরীক্ষার হারও যথেষ্ট বেড়েছে। শনিবার (২৬ জুন) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে করোনা সংক্রমণের সাপ্তাহিক এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

বেড়েছে নমুনা পরীক্ষা

স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তির তথ্য বলছে, ৬৭তম সপ্তাহে দেশে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১ লাখ ৪৯ হাজার ১৪০টি। পরের ৬৮তম সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা বেড়েছে ২৫ হাজারেরও বেশি। এই নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৮৭৮টি। সপ্তাহের ব্যবধানে নমুনা পরীক্ষা বেড়েছে ১৮ দশমিক ৬০ শতাংশ।

সংক্রমণ দেড় গুণ

নমুনা পরীক্ষার তুলনায় এ সপ্তাহে এসে সংক্রমণের পরিমাণ যথেষ্ট বেড়েছে। আগের সপ্তাহে ২৩ হাজার ৫৪১ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল। এর বিপরীতে এ সপ্তাহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ১১১ জনের শরীরে। অর্থাৎ প্রায় ১২ হাজার বেশি সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে এ সপ্তাহে। সপ্তাহের ব্যবধানে সংক্রমণ বেড়েছে ৪৯ দশমিক ১৫ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

নমুনা পরীক্ষার তুলনায় সংক্রমণ অনেক বেশি বেড়ে যাওয়ায় আগের সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে সংক্রমণের হারও বেড়েছে। আগের সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ছিল ১৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। সেখানে গত সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ছিল ১৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ। শতাংশের হারে ৪ দশমিক ০৭ পয়েন্ট বেড়েছে সংক্রমণের হার।

মৃত্যুও বেড়ে দেড় গুণ

গত কয়েক সপ্তাহ হলো সংক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে করোনায় মৃত্যুর পরিমাণও বাড়ছে। কয়েক সপ্তাহ পেরিয়ে এসে এই সপ্তাহে এর পরিমাণ বেড়েছে অনেকটা। ১৩ জুন থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত ৬৭তম সপ্তাহে দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩৯৫। সেখানে ২০ জুন থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত ৬৮তম সপ্তাহে দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গেছেন ৫৮৭ জন। অর্থাৎ আগের সপ্তাহের তুলনায় ১৯২ জন বেশি মারা গেছেন এ সপ্তাহে। শতকরা হারে তা ৪৮ দশমিক ৬১ শতাংশ। অথচ দুই সপ্তাহ আগেও দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে এক সপ্তাহে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল আড়াইশ’র কাছাকাছি। ৩০ মে থেকে ৫ জুন পর্যন্ত ৬৫তম সপ্তাহেও দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গেছেন ২৫২ জন। ৬৮তম সপ্তাহে এসে সেই সপ্তাহের তুলনায় মৃত্যু হয়েছে সোয়া দুই গুণেরও বেশি।

বেড়েছে সুস্থতাও

সংক্রমণ-মৃত্যুর পাশাপাশি এ সপ্তাহে এসে করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থ হওয়া ব্যক্তির পরিমাণও বেড়েছে। তবে সংক্রমণ ও মৃত্যুর তুলনায় তা একটু কম।

আগের সপ্তাহে দেশে করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়েছিলেন ১৬ হাজার ১২২ জন। সে তুলনায় এ সপ্তাহে সুস্থ হয়েছেন ২০ হাজার ৭০৮ জন। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষ বেশি সুস্থ হয়েছেন। শতকরা হারে এর পরিমাণ ২৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি।

প্রয়োজন সতর্কতা, আসছেকঠোর লকডাউন

গত কয়েক সপ্তাহে যেভাবে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে, তাতে সংক্রমণ ও মৃত্যু এরই মধ্যে আবার প্রায় সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে। এই সপ্তাহেই একদিনে ৬ হাজারেরও বেশি সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। আবার একদিনে ১০৮ জনের মৃত্যুও দেখেছে বাংলাদেশ, যা এখন পর্যন্ত দেশে করোনার ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এরই মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি দেশে অন্তত ১৪ দিনের জন্য ‘সম্পূর্ণ শাটডাউন’ জারির সুপারিশ করেছিল। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে তা হলো— সোমবার (২৮ জুন) থেকে সারাদেশে চালু হবে ‘কঠোর লকডাউন’। সরকারের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা এক বার্তায় এ তথ্য জানান। পরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এই ‘কঠোর লকডাউনে’র আওতায় জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ থাকবে। জন ও যানচলাচল বন্ধ রাখতে প্রয়োজনে পুলিশ, বিজিবির পাশাপাশি মাঠে সেনাবাহিনীও মোতায়েন করা হতে পারে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এই কঠোর লকডাউনের বিস্তারিত নির্দেশনা জারির কথা থাকলেও শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সেই নির্দেশনা আসেনি। জনস্বাস্থ্য বিশেজ্ঞরা বলছেন, সরকার প্রকৃত অর্থেই সবকিছু বন্ধ রেখে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন করতে পারলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

সারাবাংলা/টিআর

করোনা সংক্রমণ করোনায় মৃত্যু স্বাস্থ্য অধিদফতর

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর