Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আসছে ‘বীরের কণ্ঠে বীর গাঁথা’, ভিডিওচিত্র জানাবে রণাঙ্গনের কথা

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৬ জুন ২০২১ ২২:৪৩

ঢাকা: চলছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর। এই ৫০ বছরে অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধাই মৃত্যুবরণ করেছেন। আর যারা বেঁচে আছেন তাদেরও বয়স বাড়ছে। বীর মুক্তিযোদ্ধারা দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। যুদ্ধকালীন তাদের বীরত্বগাঁথা আগামী প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে এবার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মুক্তিযোদ্ধাদের রণাঙ্গণের কথা ক্যামেরায় ধারণ করে সেগুলো দিয়ে ভিডিও ডকুমেন্টারি তৈরি করা হবে। এরপর সেগুলো জাতীয় আর্কাইভে সংরক্ষণ করা হবে। যাতে আগামী প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে জানতে পারে। সেজন্য ‘বীরের কণ্ঠে বীর গাঁথা’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। আগামী দুয়েক মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার। তবে তালিকা থেকে বাদ পড়াদের অনেকেই আবেদন করেছেন। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আরও আপিল বাকি আছে। সেসব যাচাই-বাছাই শেষে আরও দশ হাজার বাড়তে পারে। জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নয় মাসের রণাঙ্গনের কথা এবং ঘটনাপ্রবাহ ভিডিও চিত্রে ধারণের করে মাধ্যমে সংরক্ষণ করবে সরকার। সেই উদ্দেশ্যে এরই মধ্যে ‘বীরের কণ্ঠে বীর গাঁথা’ শীর্ষক একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪৮ কোটি টাকা। আগামী দুই মাসের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হবে।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী যে সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা এখনও বেঁচে আছেন তাদের সাক্ষাৎকার আগামী প্রজন্মের জন্য সংগ্রহ, সম্প্রচার ও সরক্ষণ করা জরুরি। পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে সম্মিলন ঘটানো এবং তাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের রণাঙ্গনের স্মৃতি নিয়ে তথ্যচিত্র এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে বিভিন্ন সেক্টরে সংগঠিত সম্মুখ যুদ্ধসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী নিয়ে ডকুমেন্টারি নির্মাণ করে জাতীয়ভাবে আর্কাইভ করা হবে। এতে আগামী প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে।

এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক মোজাম্মেল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘যে সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা বেঁচে আছেন, তাদের সকলের বক্তব্য রেকর্ড করা হবে। তারা বলবেন তাদের যুদ্ধকালীন ঘটনার কথা। কীভাবে যুদ্ধ করেছেন, কোথায় কোথায় যুদ্ধ করেছেন এবং যুদ্ধকালীন স্মৃতি বর্ণনা করবেন। ৫ থেকে ১০ মিনিটের ভিডিওতে একেকজনের বক্তব্য ধারণ করা হবে। পরে তা আর্কাইভে রাখা হবে। যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম ওই রেকর্ড করা কাহিনী থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, বীর মুক্তিযোদ্ধারা মারা যাওয়ার পর তাদের সমাধি চিহ্নিত করে রাখতেও একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সকলের কবর হবে একই নকশায়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এরই মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের যেসব স্থানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধ হয়েছে, সেসব স্থানে একই নকশার স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে।

এ বিষয়ে আ ক ম মোজাম্মেল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবর হবে একই নকশায়। যাতে একটা কবর একশ’ বছর পর দেখলেও মানুষ সহজে চিনতে পারে- এটা কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধার সমাধি। ২০২০ সাল থেকে এ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া মুক্তিবাহিনী যেসব স্থানে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে সেসব স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। সেই স্মৃতিস্তম্ভগুলোও হবে একই নকশায়। পাশাপাশি দেশের সব বধ্যভূমি সংরক্ষণ হবে একই নকশার আদলে।’

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘ইতিহাস সংরক্ষণ ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এসব উদ্যোগের পাশাপাশি আমরা দেশের উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ করব। সেজন্য তিন কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এসব কমপ্লেক্সে গেলে ভবিষ্যত প্রজন্ম যাতে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে জানতে পারে সে ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।’

তিনি জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে মাসিক সম্মানী বাড়ানো হয়েছে। আবার অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দেশের প্রত্যেক উপজেলায় যে বাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তা দ্বিগুণ করা হচ্ছে। কেবলমাত্র অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধারাই এইসব বাড়ি পাবেন।

উল্লেখ্য, সরকার এরই মধ্যে তিন ধাপে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত করেছে। আরও ১৮ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম যাচাই-বাছাই হয়েছে। শিগগিরই তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশের কথা রয়েছে।

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর