গরুর ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারিরা
২৭ জুন ২০২১ ০৮:৫৭
সিরাজগঞ্জ: কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার গ্রামগুলোতে দেশি-বিদেশি জাতের গরু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা। তবে করোনা মহামারির মধ্যে ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে চাপা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এসব ব্যবসায়ীরা।
ঈদ যতই এগিয়ে আসছে গো-খাদ্যের দাম ততই বাড়ছে। গো-খাদ্যের দাম বাড়া নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। তারা বলছেন, বেশি দামে খাদ্য কিনে গরুকে খাইয়ে গত বছর ন্যায্য দাম পাননি তারা। এবারও যদি একই অবস্থা হয় তাহলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হবে এসব খামারিদের।
১৯৭৩ সালে মিল্কভিটার একটি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এখানে গড়ে ওঠে শত শত গরুর খামার। এ সকল গো-খামারে মোটাতাজা করা ষাঁড় প্রতি বছরেই দেশের বিভিন্নস্থানে কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। এ বছরে জেলার নয়টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মোটাতাজা করা হচ্ছে প্রায় দুই লক্ষাধিক গরু।
জানা গেছে, আগে নিয়মিত খামারিদের পাশাপাশি কিছু মৌসুমি খামারি মানব-স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অবৈধ স্টেরয়েড হরমোন ব্যবহার করে দ্রুত গরু মোটাতাজা করতেন। জনসচেতনতা ও প্রাণীসম্পদ বিভাগের তৎপরতার কারণে চলতি বছরে এই প্রবণতা কমে এসেছে অনেকটাই। এ বছর প্রাকৃতিক উপায়ে ধানের খড়, সবুজ ঘাস, বিভিন্ন প্রকারের ভুষি, খোল ও কিছু ভিটামিন খাইয়ে গরু মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে।
খামারিরা জানান, কাউফিড বস্তা প্রতি ৯০০ টাকার জায়গায় এখন বেড়ে এক হাজার ৫০ টাকা। গমের ছালের দাম বস্তা প্রতি এক হাজার ১০০। বর্তমানে তা এক হাজার ২০০ টাকা। এ্যাংকর ডালের ভুষি ৮০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। ধানের খড় কিনতে হচ্ছে ৬০০ টাকা মণ দরে। প্রতি শতাংশ জমির জাম্বু ঘাস কিনতে হচ্ছে ৩০০ টাকায়, প্রতি শতাংশ জমির নেপিয়ার ঘাস ৪০০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। গো-খাদ্যের দাম কমানো না হলে খামার রাখা অসম্ভব হয়ে উঠবে।
কামারখন্দ উপজেলার আলোকদিয়ার গ্রামের খামারি সুজন সরকার জানান, করোনা ও লকডাউনের অজুহাতে গো-খাদ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে প্রতি বস্তায় তিন থেকে ৪০০ টাকা। এতে ষাঁড় মোটাতাজা করার ব্যয় বেড়ে গেছে অনেক। গত বছরের মতো এ বছরেও যদি পশুরহাটে ক্রেতা বা পাইকার আসা-যাওয়ায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়, তাহলে ভালো দাম পাওয়া যাবে না। তাতে আমাদের লোকসান হবে।
শাহজাদপুর উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের মশিপুর গ্রামের খামারি বুলবুল হোসেন জানান, এ বছর ৪০টি ষাঁড় গরু তার খামারে মোটাতাজা করা হচ্ছে। প্রতিটি গরুর দাম ৩ লাখ টাকা পার হবে বলে আশা করছি।
উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের রেশমবাড়ি গ্রামের খামারি রাব্বি শেখ বলেন, আমি ৪৫টি ষাঁড় মোটাতাজা করছি। দেশিয় পদ্ধতিতে শুধু সবুজ ঘাস, খড়, গম ও কলাইয়ের ভুসি, খৈল এবং ফিড খাওয়ানো হচ্ছে।
সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের তালুকদার ডেইরি ফার্মের পরিচালক রেজা তালুকদার বলেন, খামারে ৮০টি গরু রয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে গরুগুলোকে মোটাতাজা করছি। খামার করতে গেলে প্রচুর বিদ্যুৎ বিল আসে। কৃষির মত যদি খামারেও বিদ্যুৎ বিলে ভর্তুকি দেওয়া হত তাহলে উপকার হতো।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আকতারুজ্জামান ভূইয়া বলেন, গরু মোটাতাজা করতে খামারিদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিকর ওষুধের ব্যবহার বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ভেজাল খাদ্য যাতে ব্যবহার না হয় তার জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি।
তিনি আরও বলেন, খাদ্যের দাম বেড়েছে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। খামারিরা যাতে লোকসানে না পড়ে এ জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। এ বছর জেলায় প্রায় ২ লাখ গবাদি পশু মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। যার মধ্যে ষাঁড় রয়েছে প্রায় ৯০ হাজার।
সারাবাংলা/এএম