আগামী বছরের জুনে চালু হচ্ছে স্বপ্নের মেট্রোরেল
২৭ জুন ২০২১ ১০:২৪
ঢাকা: দিন রাত এক করেই এখন কাজ চলছে স্বপ্নের মেট্রোরেলের। মেট্রোরেল প্রকল্প এলাকায় গেলে নতুন নতুন অগ্রগতি চোখে পড়বে। রাজধানীবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে আগামী জুনেই চালু হতে যাচ্ছে স্বপ্নের মেট্রোরেল। কর্তৃপক্ষও বলছে, উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা আগামী বছর। এরপরে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল। সবশেষে চালু করা হবে কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত অংশ। সেটিও হবে নির্ধারিত সময়ের আগে।
সরেজমিনে উত্তরা দিয়াবাড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পুরোদমে কাজ চলছে মেট্রোরেলের। এরই মধ্যে প্রথম তিনটি স্টেশনের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। চলছে মেট্রোরেলের ওপরে শেড নির্মাণের কাজ। একইসঙ্গে চলছে ইলেকট্রিক লাইন টানার কাজ। এমনকি মেট্রোরেলের ওপরে ইলেকট্রিক লাইনের তারও বসানো হচ্ছে। একইসঙ্গে মেট্রোরেলের আনুষঙ্গিক কাজগুলোও এগিয়ে চলছে সমানতালে।
মেট্রোরেল নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কর্তৃপক্ষ বলছে, মে মাস পর্যন্ত উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৬৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অগ্রগতি ৮৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ। আগারগাঁও মতিঝিল অংশ হয়েছে ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল ইকুইপমেন্টের কাজ হয়েছে ৫৬ দশমিক ০৪ শতাংশ। সবমিলিয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনার কারণে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল সার্ভিস চলতি বছরের ডিসেম্বরে চালু করার পরিকল্পনা থাকলেও সেটি সম্ভব নয়। কারণ হিসেবে করোনা ভাইরাসকে দুষছেন তারা। তবে এটাও বলছেন, প্রকল্পে তাদের কোনো গাফিলতি নেই।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, মেট্রোরেলের ইলেকট্রিক সিস্টেমে কাজ করছে ভারত। ভারতে করোনা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় ইক্যুইপমেন্ট আসতে সমস্যা হচ্ছে। বৈদ্যুতিক বিষয়ে কাজ করছে জাপান। এ ছাড়া কোচগুলোও জাপানে তৈরি হচ্ছে সেখান থেকে কোচ নিয়ে আসা সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া ইক্যুইপমেন্ট নিয়ে কাজ করছে ইতালি। করোনার কারণে ইতালির কাছ থেকে ইক্যুইপমেন্ট আসছে না। ফলে করোনায় এক প্রকার যাচ্ছেতাই অবস্থা মেট্রোরেলের।
এ বিষয়ে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের পক্ষে করোনার এ সময়ে ডিসেম্বরে মেট্রোরেল চালু করা সম্ভব নয়। আমরা আগে বলেছিলাম ডিসেম্বরে পরিকল্পনা আছে। কিন্তু করোনা যে হারে বাড়ছে তাতে আমাদের যেসব বিদেশি পরামর্শক বা শ্রমিক আছে তারা কিন্তু আসতে পারছে না। এ ছাড়া যারা বাংলাদেশ থেকে নিজ নিজ দেশে গিয়েছেন তারাও কিন্তু আসতে পারছেন না। ফলে আমাদের কাজে সবমিলিয়ে সমস্যা হচ্ছে।’
ডিসেম্বরে না হলে কবে চালু হতে পারে মেট্রোরেল এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রতিউত্তরে বলেন, ‘করোনার ওপর এখন সবকিছু নির্ভর করছে। তবে আমরা আগামী বছরের জুনে প্রথম অংশ চালু করার পরিকল্পনা নিয়ে এখন কাজ করছি। প্রাথমিকভাবে আমরা প্রথমে উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছি আগামী বছর। তবে করোনার অবস্থা যদি আরও খারাপ হয় তাহলে সেটিও হয়তো সম্ভব হবে না। তবে আমরা আশাবাদী আগামী জুনে চালু করা সম্ভব হবে।’
উল্লেখ্য, উত্তরার উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৬ এর ১৬টি স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে উত্তরা সেন্টার, বিজয় সরণী ও মতিঝিল মেট্রোরেল স্টেশন আইকনিক স্টেশন হিসেবে নির্মাণ করা হচ্ছে। সেগুলোর নির্মাণ কাজও এগিয়ে চলছে।
এরইমধ্যে মেট্রোরেলের প্রথম ও দ্বিতীয় সেট ঢাকায় পৌঁছেছে। গত ৩১ মার্চ মেট্রোরেলের প্রথম সেট মোংলা বন্দরে পৌঁছায়। আর ২১ এপ্রিল মেট্রোরেলের প্রথম সেট ঢাকায় পৌঁছায়। দ্বিতীয় সেট ঢাকায় পৌঁছায় ১জুন। তবে জাপান থেকে মেট্রোরেলের দ্বিতীয় সেট গত ৯ মে মোংলা বন্দরে পৌঁছে। আর তৃতীয় সেট আগামী ১৩ আগস্ট ডিপোতে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। জাপানের কাওয়াসাকি-মিতসুবিশি কনসোর্টিয়ামকে ২৪ সেট ট্রেন নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয় ২০১৭ সালে। দুই পাশে দুটি ইঞ্জিন আর চারটি কোচের সমন্বয়ে ট্রেনের সেটগুলো তৈরি হচ্ছে জাপানে। এরইমধ্যে ৫ সেট ট্রেন তৈরি হয়েছে যার মধ্যে ২ সেট ট্রেন বাংলাদেশে এসেছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১২ সালে। এর ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকা সিংহভাগ অর্থায়ন করছে।
ডিএমটিসিএল সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, করোনার সংক্রমণ শুরুর পর গত বছরের ২ মাস (এপ্রিল ও মে মাস) মেট্রোরেলের কাজ বন্ধ থাকে। কিন্তু এরপর চালু হলেও মেট্রোরেলের অনেক কর্মী নিজ নিজ দেশে চলে যান।
উল্লেখ্য, মেট্রোরেল প্রকল্পের অধিকাংশ পরামর্শক বিদেশি। যার ফলে করোনায় মেট্রোরেলের কাজের অনেক গতি হারিয়েছে। মেট্রোরেল প্রকল্পে এখন পর্যন্ত কাজ করতে গিয়ে ৩ শতাধিকের বেশি শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
সারাবাংলা/এসজে/একে