১৪ হাজার ছাড়াল মৃত্যু, শেষ ১৫ দিনেই ১ হাজার ২১ জন
২৭ জুন ২০২১ ১২:০৩
ঢাকা: ২০২০ সালের ৮ মার্চ কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পরে প্রথম মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায় ১৮ মার্চ। এর পরে ৪৭৯ দিনে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল ১৪ হাজার। সর্বশেষ ১৫ দিনে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে দেশে এক হাজার ২১ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।
শনিবার (২৬ জুন) স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গেলেন মোট ১৪ হাজার ৫৩ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, গত ১১ জুন দেশে করোনায় মৃত্যু পেরিয়ে গিয়েছিল ১৩ হাজার। তার ঠিক ১৫ দিনে অর্থাৎ ২৬ জুন এসে সেই সংখ্যা পেরিয়ে গেল ১৪ হাজার। সে হিসাবে দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্তের ৪৭৯ দিনের মাথায় এসে মৃত্যু ছাড়াল ১৪ হাজারের ঘরে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে বর্তমানে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি চলছে। একদিকে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সামাজিক সংক্রমণ আর অন্যদিকে স্বাস্থ্যবিধি পালনের বিষয়ে যে অনীহা তাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এমন অবস্থায় পুরো দেশে কমপক্ষে ১৪ দিনের ‘শাটডাউন’ দেওয়ার সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটি।
করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু যেভাবে ১৪ হাজার ছাড়াল
দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৮ মার্চ। সেদিন একজনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের ব্রিফিংয়ে। প্রায় একমাস পর ১৫ এপ্রিল করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা স্পর্শ করে ৫০-এর ঘর। ২০ এপ্রিল পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১০১ জন।
একমাস পাঁচ দিন পর ২৫ মে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় পাঁচশ। ১৫ দিনের মাথায় ১০ জুন এই সংখ্যা স্পর্শ করে হাজারের ঘর। সে হিসাবে দেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের ৯৫ দিনে করোনায় মৃত্যু স্পর্শ করে হাজারের ঘর।
এর ২৫ দিনের মধ্যেই আরও একহাজার মৃত্যুর কারণ হয় কোভিড-১৯। ৫ জুলাই দুই হাজার ছাড়িয়ে যায় মৃত্যু। এর পরের এক হাজার মৃত্যু হয় আরও দ্রুত— মাত্র ২৩ দিনে। ২৮ জুলাই তিন হাজারের ঘর ছাড়িয়ে যায় করোনায় মৃত্যু।
দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে চতুর্থ ও পঞ্চম হাজার মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে সময় লাগে ২৮ দিন করে। ২৫ আগস্ট চার হাজার ও ২২ সেপ্টেম্বর পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে যায় মৃত্যু। এরপর করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর গতি সামান্য কমে যায়।
২২ সেপ্টেম্বরের ৪৩ দিন পর ৪ নভেম্বর ছয় হাজার, এর ৩৮ দিন পর ১২ ডিসেম্বর সাত হাজার এবং এর ৪২ দিন পর ২৩ জানুয়ারি করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু পেরিয়ে যায় আট হাজারের ঘর।
এরপর করোনায় মৃত্যুর গতিতে লাগাম ধরানো যায়। আট হাজারের পর ৯ হাজারের ঘরে যেতে সময় লাগে দুই মাসেরও বেশি— ৬৭ দিন। এ বছরের ৩১ মার্চ দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা পেরিয়ে যায় ৯ হাজার।
এপ্রিলে এসে করোনায় মৃত্যু সর্বোচ্চ চূড়া স্পর্শ করে। এই মাসেই একদিনে সর্বোচ্চ ১১২ জনের মৃত্যুও দেখেছে বাংলাদেশ। তাতে এপ্রিলের প্রথম ২৫ দিনেই করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু হয়ে দুই হাজার ৭ জনের। ২৫ এপ্রিল করোনায় মোট মৃত্যু ছাড়িয়ে যায় ১১ হাজার। এপ্রিলের এই ২৫ দিনে গড়ে প্রতিদিন মারা গেছেন ৮০ জন করে। এপ্রিল মাসে মোট দুই হাজার ৪০৪ জন মৃত্যুবরণ করেন কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পরে।
এর ১৬ দিন পরে অর্থাৎ ১১ মে মৃত্যু ছাড়ায় ১২ হাজারের ঘর। এই ১৬ দিনে সুনির্দিষ্টভাবে ৯৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের পরে।
১১ মে ১২ হাজার পাড় হওয়ার পরে গড়ে ৩২ জন করে মারা যায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ে। ১১ জুন দেশে মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় ১৩ হাজার।
দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে ১৮ মার্চ প্রথম একজন মৃত্যুবরণ করেন। এরপরে মাস হিসেবে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী মারা যায় ২০২০ সালের জুলাইয়ে। ওই মাসে মৃত্যু হয় এক হাজার ২৬৪ জনের। তবে ২০২১ সালের এপ্রিলে মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় সেই পরিসংখ্যান। এই মাসে মারা যায় দুই হাজার ৪০৪ জন। চলতি বছরের জুন মাসের প্রথম ২৬ দিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক ব্যক্তি মারা গেছে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে। এ মাসে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৪৩৪ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা গেছে। যা এপ্রিলের পরে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যাওয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ পরিসংখ্যান এখন।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ে মাসে সর্বোচ্চ মৃত্যুর পরিসংখ্যান
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ। এরপর থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত পর্যন্ত দেশে ১৪ হাজার ৫৩ জন মারা গেলেন এই ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে।
দেশে ২০২০ সালের মার্চ মাসে মোট পাঁচ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যান। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে দেশে ১৬৩ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যান। মে মাসে মারা যান এক হাজার ১৯৭ জন। ২০২০ সালের জুলাইয়ে দেশে এক হাজার ২৬৪ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যান। এটিই ছিল ২০২০ সালের ১৮ এপ্রিলের আগে মাসের হিসেবে সর্বোচ্চ মৃত্যুর পরিসংখ্যান।
২০২০ সালের আগস্ট মাসে দেশে এক হাজার ১৭০ জন মারা যান। সেপ্টেম্বর মাসে দেশে মারা যান ৯৭০ জন। অক্টোবর মাসে দেশে ৬৭২ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা যান। নভেম্বর মাসে দেশে ৭২১ জন ও ডিসেম্বর মাসে মারা যান ৯১৫ জন।
২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ৫৬৮ জন ও ফেব্রুয়ারি মাসে ২৮১ জনের মৃত্যু হয় কোভিডে। মার্চে ৬৩৮ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যান। আর ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যায় দুই হাজার ৪০৪ জন। মে মাসে মৃত্যুর সংখ্যা কমে এলেও এক হাজার ১৬৯ জন মৃত্যুবরণ করেন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে।
২০২১ সালের জুন মাসের প্রথম ২৬ দিনে এখন পর্যন্ত দেশে এক হাজার ৪৩৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে। যা দেশে মাসের হিসেবে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর পরিসংখ্যান।
২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ মৃত্যু যে পাঁচ দিনে
২০২১ সালের ১৯ এপ্রিল: এ দিন দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে ১১২ জন মৃত্যুবরণ করেন। যা দেশে এখন পর্যন্ত এক দিনে কোভিড-১০ সংক্রমণ নিয়ে মারা যাওয়ার সর্বোচ্চ পরিসংখ্যান।
২০২১ সালের ২৫ জুন: এ দিন দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ে মারা যান ১০৮ জন। যা দেশে এখন পর্যন্ত এক দিনে কোভিড-১০ সংক্রমণ নিয়ে মারা যাওয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পরিসংখ্যান।
২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল: এদিন দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে ১০২ জন মারা যান। এখন পর্যন্ত একদিনে করোনা সংক্রমণ নিয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর পরিসংখ্যান এটি।
২০২১ সালের ১৬ এপ্রিল: এদিন দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে ১০১ জন মারা যান। এখন পর্যন্ত একদিনে করোনা সংক্রমণ নিয়ে চতুর্থ সর্বোচ্চ মৃত্যুর তথ্য এটি।
২০২১ সালের ১৭ এপ্রিল: এদিন দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে ১০১ জন মারা যান। এখন পর্যন্ত একদিনে করোনা সংক্রমণ নিয়ে যৌথভাবে চতুর্থ সর্বোচ্চ মৃত্যুর তথ্য এটি।
২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল: এদিন দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে ১০১ জন মারা যান। এখন পর্যন্ত একদিনে করোনা সংক্রমণ নিয়ে যৌথভাবে চতুর্থ সর্বোচ্চ মৃত্যুর তথ্য এটি।
২০২১ সালের ২২ এপ্রিল: এদিন দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে ৯৮ জন মারা যান। এখন পর্যন্ত একদিনে করোনা সংক্রমণ নিয়ে পঞ্চম সর্বোচ্চ মৃত্যুর তথ্য এটিই।
২০২১ সালের ১৪ এপ্রিল: এদিন দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ে মারা যান ৯৬ জন। এখন পর্যন্ত এটি একদিনে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ মৃত্যু।
করোনায় মৃত্যুর প্রায় তিন-চতুর্থাংশই পুরুষ
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যুবরণকারী ৭৭ জনের ৪৮ জন পুরুষ, ২৯ জন নারী। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট ১০ হাজার ৪৩ জন পুরুষ ও চার হাজার ১০ জন নারী করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গেছেন। শতাংশ হিসাবে করোনায় মোট মৃত ব্যক্তির ৭১ দশমিক ৪৭ শতাংশ পুরুষ, ২৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ নারী।
বয়সভিত্তিক মৃত্যুর পরিসংখ্যান
গত ২৪ ঘণ্টায় যে ৭৭ জন করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গেছেন, তার মধ্যে ৩৮ জনের বয়স ষাটের বেশি, ১৭ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। এছাড়া ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ১৩ জন ও ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী পাঁচ জন মারা গেছেন। দেশে ০ থেকে ১০ বছর বয়সসীমার মাঝে গত ২৪ ঘণ্টায় কেউ মারা না গেলেও ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী ১ জন ও ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৩ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা গেছে।
গত ২৪ ঘণ্টার মতোই এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুবরণকারী ১৪ হাজার ৫৩ জনের অর্ধেকেরই বেশি ষাটোর্ধ্ব। সবচেয়ে কম মৃত্যু হয়েছে নবজাতকসহ অনূর্ধ্ব-১০ বছর বয়সীদের।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত করোনায় মৃত ১৪ হাজার ৫৩ জনের মধ্যে সাত হাজার ৪৮৯ জনই ষাটোর্ধ্ব। অর্থাৎ করোনায় মোট মৃত্যুর ৫৩ দশমিক ২৯ শতাংশই এই বয়সী।
এছাড়া ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ৩ হাজার ৩৯২ জন (২৪ দশমিক ১৪ শতাংশ) ও ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী এক হাজার ৫৮৬ জন (১১ দশমিক ২৯ শতাংশ) মারা গেছেন করোনা সংক্রমণ নিয়ে।
মৃত্যুর হার কম বয়সীদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে কম। এর মধ্যে নবজাতক থেকে শুরু করে ১০ বছর বয়সীদের মধ্যে মারা গেছে ৫১ জন (শূন্য দশমিক ৩৬ শতাংশ), ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী মারা গেছে ৯৪ জন (শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ)। এছাড়া করোনা সংক্রমণ নিয়ে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ২৬৪ জন (১ দশমিক ৮৮ শতাংশ) ও ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ৭৫০ জন (৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ) মারা গেছেন।
বিভাগভিত্তিক মৃত্যুর পরিসংখ্যান
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণ নিয়ে সবচাইতে বেশি ২০ জন মারা গেছে চট্টগ্রাম বিভাগে। এছাড়া ১৭ জন মারা গেছেন ঢাকা বিভাগে, ৯ জন মারা গেছেন রাজশাহী বিভাগে। সিলেটে বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা গেছে। খুলনা বিভাগে ১৯ জন ও বরিশাল বিভাগে ১ জন মারা গেছে। এছাড়া রংপুর বিভাগে ৪ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৩ জন মারা গেছে গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে।
এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মৃত্যুও ঘটেছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগেই।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, ঢাকা বিভাগে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গেছেন ৭ হাজার ৪৮৯ জন, যা মোট মৃত্যুর ৫৩ দশমিক ২৯ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দুই হাজার ৬৭০ জন জন মারা গেছেন চট্টগ্রাম বিভাগে। এই বিভাগে মৃত্যুর হার মোট মৃত্যুর ১৯ শতাংশ। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ এক হাজার ১৩৩ জন মারা গেছেন খুলনা বিভাগে, যা মোট মৃত্যুর ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ।
এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ৯৬১ জন (৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ), রংপুর বিভাগে ৫৬৯ জন (৪ দশমিক ০৫ শতাংশ), সিলেট বিভাগে ৫১৮ জন (৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ), বরিশাল বিভাগে ৪১৪ জন (২ দশমিক ৯৫ শতাংশ) ও ময়মনসিংহ বিভাগে মারা গেছেন ২৯৯ জন (২ দশমিক ১৩ শতাংশ)।
এ পরিস্থিতিতে করণীয় কী
চলমান করোনা পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যায় সম্প্রতি ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। তবে এই সময়ে কিন্তু সংক্রমণও অনেক বেড়েছে।
তিনি বলেন, সংক্রমণ বাড়লেই বয়স্ক মানুষদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বৃদ্ধি পাবে। যারা অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত, তাদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে। আর বয়স্ক এবং এ ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা করোনায় আক্রান্ত হলে বরং মৃত্যুর হার আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে। তাই করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকলে সবচাইতে বেশি জরুরি হলো ব্যক্তি সচেতনতা। সরকার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে অবশ্যই সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু ব্যক্তি যদি সচেতন হয়ে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপে সহযোগিতা না করে তবে বিপদ বাড়বে। কারণ একজন যদি কোনো এলাকায় সংক্রমিত হয়ে থাকেন তবে তিনি তার পরিবার, সমাজে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। আর মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সচেতন থাকতে হবে। একই সঙ্গে অবশ্যই মৃত্যুর ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে নমুনা পরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
বিধিনিষেধ থাকুক না থাকুক, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে প্রত্যেককে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বিষয়টি ফের মনে করিয়ে দিলেন কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম।
তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাস্ক পরা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। ভ্যাকসিন দেওয়া হোক, লকডাউন দেওয়া হোক বা আর যাই কিছু করা হোক না কেন— যে বা যারা মাস্ক পরবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে, তাদের কিন্তু সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি কম। আবার তারা নিজেরা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও তাদের কাছ থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকিও কম থাকবে। প্রত্যেককেই যদি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করানো সম্ভব হয়, তাহলেই কেবল সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা সম্ভব।’
এ দিকে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে বর্তমানে সংক্রমণ বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও। আর তাই রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ও জনগণের জীবনের ক্ষতি প্রতিরোধ করার জন্য কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে সারাদেশে কমপক্ষে ১৪ দিন সম্পূর্ণ শাটডউন দেওয়ার সুপারিশ করছে। জরুরি সেবা ছাড়া যানবাহন, অফিস-আদালত সহ সবকিছু বন্ধ রাখা প্রয়োজন। এ ব্যবস্থা কঠোরভাবে পালন করতে না পারলে আমাদের যত প্রস্তুতিই থাকুক না কেন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অপ্রতুল হয়ে পড়বে।’
তিনি বলেন, ‘শাটডাউন মানে হচ্ছে সবকিছু বন্ধ থাকবে, শুধু জরুরি সেবা ছাড়া। অফিস-আদালত, বাজারঘাট, গণপরিবহনসহ সব বন্ধ থাকবে। সবাই বাসায় থাকবে।’
শাটডাউন পদ্ধতিতে প্রতিবেশি দেশ ভারতের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘দিল্লি এবং মুম্বাইতে শাটডাউন দিয়ে ফলাফল পেয়েছে। সেখানে ছয় সপ্তাহ গণপরিবহন বন্ধ ছিল, এছাড়াও দিল্লিতে আরও ছিল তিন সপ্তাহ। দিল্লিতে প্রতিদিন একসময় ২৮ হাজার শনাক্ত হতেন, কিন্তু এখন সেখানে ১৫০ শনাক্ত হচ্ছেন। মৃত্যুও কমে এসেছে।’
এদিকে, চলমান লকডাউন ও বিধিনিষেধ মানাতে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর হতে অনুরোধ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
প্রতিষ্ঠানটি অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন জানিয়েছেন, সীমান্তবর্তী এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এর বিস্তার ছড়িয়ে পড়ছে। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে মৃত্যু।
তিনি বলেন, ‘সংক্রমণ কমিয়ে আনার জন্য চলমান লকডাউন ও বিধিনিষেধ কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য সবাইকে অনুরোধ করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রয়োজনে কঠোর হতে অনুরোধ করা হলো।’
সারাবাংলা/এসবি/একে