ঢাকা: ভূ-রাজনীতি পরিবর্তিত হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়া এখন বিশ্বের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসছে এবং বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতির সমীকরণের মূলবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক অনুপস্থিত এবং রাজনৈতিক যোগাযোগ প্রত্যাশিত মাত্রায় গড়ে ওঠেনি। এই অঞ্চলের বৈচিত্রপূর্ণ সম্ভাবণাকে কাজে লাগাতে হলে দেশগুলোর মধ্যে বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়তে হবে।
রোববার (২৭ জুন) ‘রিভিজিটিং কনটেম্পোরারি পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি চ্যালেঞ্জেস ইন দ্য সাউথ এশিয়ান রিজিওন’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সেমিনারটি আয়োজন করে বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস)।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, দ্বিতীয় বিশযুদ্ধের পর বৈশ্বিক ব্যাবস্থায় কোভিড-১৯ বিশ্ব মানবতার জন্য সম্ভবত সবচেয়ে বেশি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষতি করেছে। তবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মহামারির প্রথম ও প্রধানতম শিকার সম্ভবত আন্তর্জাতিক সম্প্রীতি ও বৈশ্বিক সার্বজনীন সম্পদ তৈরির সক্ষমতা। এ কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে নিজেদের মধ্যে বহুপাক্ষিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের দীর্ঘ মেয়াদি সুবিধার বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে। যদি এ অঞ্চলটি সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারে, তবে দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বে সাফল্য লাভ করবে তার বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানবসম্পদকে কাজে লাগিয়ে তার ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির প্রয়োজন পূরণের মাধ্যমে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী একটি রাষ্ট্র। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে মিয়ানমার থেকে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসার ফলে এ দেশকে একটি বড় মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের আর্থসামাজিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও পরিবেশের ওপরে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নির্যাতনের শিকার মানুষদের কথা বিবেচনা করে অতি সত্বর রোহিঙ্গা সমস্যার একটি টেকসই সমাধান খুঁজে বের করা সম্ভব হবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো আঞ্চলিক-বহুপাক্ষিক সহযোগিতার সুদূরপ্রসারী লাভের ব্যাপারটা যেন অনুধাবন করে, সে বিষয়টিতেও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।
বিআইআইএসএসের বোর্ড অব গভর্নরসের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এম ফজলুল করিম দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসা উচিত বলে মন্তব্য করেন। তিনি সেমিনারে বলেন, যেকোনো একটি অঞ্চলের উন্নয়নে জন্যে সে অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক থাকা আবশ্যক। দুঃখজনক বিষয় হলো— দক্ষিণ এশিয়ায় এটি অনুপস্থিত। এখানে বরং বিভিন্ন দেশের মধ্যে সন্দেহের সম্পর্ক বিরাজমান। এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক যোগাযোগ প্রত্যাশিত মাত্রায় গড়ে ওঠেনি, যেটি আঞ্চলিক সহযোগিতা ও সম্প্রীতির পথে অন্যতম একটি অন্তরায়। যেখানে সমস্যাগুলোর ধরন, এক সেখানে সমাধান ও অনুরূপ হওয়া প্রয়োজন।
বিআইআইএসএসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. এমদাদ উল বারী বলেন, বিশ্ব শক্তি ভিত্তির রাজনীতির ভরকেন্দ্র ক্রমান্বয়ে পরিবর্তিত হওয়ায় এবং চীনের (পুনরায়) উত্থানের ফলে একবিংশ শতাব্দীতে দক্ষিণ এশিয়া অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসছে এবং বিশ্ব ভূ-রাজনীতির সমীকরণে মূলবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ এয়ার রাজনীতি কিছু বাহরাগত বিষয় যেমন— জোট রাজনীতি, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার প্রতিযোগিতার কারণে জটিলতর হচ্ছে।
মেজর জেনারেল এমদাদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা সমস্যা এ অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যে নতুন হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। অতি দ্রুত, টেকসই ও সম্মানজনকভাবে রোহিঙ্গাদেরকে মিয়ানমারে পুনর্বাসন করা গেলে তা এ অঞ্চলের শান্তি ও সংহতি বয়ে আনবে। আঞ্চলিক ও বাইরের গুরুত্বপূর্ণ শক্তিগুলো রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসবে এবং সংকটের গভীরতা বিবেচনায় একটি সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্যোগী হবে বলে আশাবাদ জানান তিনি।