সড়ক উন্নয়নে সাড়ে ১২ কোটি টাকার পরামর্শক ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন
২৮ জুন ২০২১ ১৩:৫৫
ঢাকা: সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে সাড়ে ১২ কোটি টাকা পরামর্শক প্রস্তাব করা হয়েছে। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশেনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়কসমূহ উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ প্রস্তাব করা হয়। প্রকল্পটি নিয়ে গত ২২ জুন অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব ) মামুন-আল-রশিদ।
সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, আইএমইডি’র মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলী খান বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পে ৩৬ জনমাসের জন্য পরামর্শক বাবদ ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। এছাড়া ক্রয় পদ্ধতি এসএসএস বা একক উৎস উল্লেখ করা হয়েছে। রাস্তা উন্নয়ন, গোলচত্ত্বর, ব্রীজ, কালভার্ট, ফুটওভার ব্রিজ ইত্যাদি রুটিন মাফিক কাজের জন্য পরামর্শক ব্যয় কমাতে হবে এবং ক্রয় পদ্ধতি সংশোধন করার প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, পণ্য ও পূর্ত কাজ অনেকগুলো প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে যা কমানো প্রয়োজন। এ ছাড়া যন্ত্রপাতি ক্রয়ে প্রথম ৮টি অংশে ক্রয় পদ্ধতি ও ক্রয় অনুমোদনকারী ডিপিপিতে উল্লেখ করা হয়নি।
পিইসি সভায় আলোচনার শুরুতে বলা হয়, প্রস্তাবিত প্রকল্পে ৭৬২ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়ন বাবদ ২ হাজার ১০৪ কোটি ৩৯ লাখ ২৪ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। এ ছাড়া ৬০০ মিটার ওভারপাস নির্মাণ বাবদ ৮৪ লাখ টাকা, ৩৮টি ফুটওভার ব্রীজ নির্মাণ বাবদ ৫৮ কোটি টাকা, ১৪টি ব্রিজ নির্মাণ বাবদ ৫৬ কোটি টাকা, ২২টি কালভার্ট নির্মাণ বাবদ ১৪ কোটি টাকা ও ১০টি গোলচত্বর নির্মাণ বাবদ ১২ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। কিন্তু এ সব অবকাঠামো নির্মাণের বিস্তারিত একক ব্যয় বিভাজন এবং এগুলোর ধারণাগত ড্রইং, ডিজাইন ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংযুক্ত করা হয়নি।
সভায় আরও বলা হয়, ডিপিপিতে শুধু ফুটওভার ব্রিজ কোথায় কোথায় নির্মাণ করা হবে তার উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু ব্রিজ, কালভার্ট, গোলচত্বর কোথায় কোথায় নির্মাণ করা হবে তার স্থান উল্লেখ করা হয়নি।
সভায় এতগুলো ব্রিজ, কালভার্ট, গোলচত্বর, ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের যৌক্তিকতার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী বলেন, সম্ভাব্যতা সমীক্ষার প্রাপ্ত সুপারিশ ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় এ সকল অবকাঠামোগুলোর সংখ্যা ও পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে এবং এলজিইডি রেট সিডিউল ২০২০ অনুযায়ী ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। বিস্তারিত আলোচনার পর প্রকল্পে প্রস্তাবিত প্রতিটি রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট, গোলচত্বর, ফুটওভার ব্রিজের ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি উল্লেখসহ একক ব্যয়ের বিস্তারিত বিভাজন ডিপিপিতে উল্লেখ করতে হবে পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ৩৮টি ফুটওভার ব্রিজ, ১৪টি ব্রিজ, ১২টি কালভার্ট, ১০টি গোলচত্বর, ৭৬২ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার রাস্তা এবং ৬০০ মিটার ওভারপাস নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা এগুলো নির্মাণের নির্ধারিত স্থান, আকার, প্রাক্কলিত ব্যয় ম্যাট্রিক্স ডিপিপিতে সংযুক্ত করতে এবং ব্রিজ, কালভার্ট, গোলচত্বর, ফুটওভার ব্রিজ ও ওভারপাস নির্মাণের ধারণাগত ড্রইং, ডিজাইন ও লে-আউট প্ল্যান ডিপিপিতে সংযুক্ত করতে সুপারিশ দেওয়া হয়।
সভায় আরও বলা হয়, প্রস্তাবিত প্রকল্পে স্ট্রাকচার ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫৭ কোটি টাকা এবং ইউটিলিটি স্থানান্তর বাবদ ২০ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। স্ট্রাকচার ক্ষতিপূরণ গণপূর্ত অধিদপ্তরের দরের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু সাল উল্লেখ করা হয়নি এবং ইফটিলিটি স্থানান্তর এলজিইডি ২০২০ সালের দর অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী সভায় বলেন, ‘স্ট্রাকচার ক্ষতিপুরণ প্রকল্প আরম্ভ হওয়ার পর প্রকৃতপক্ষে সঠিকভাবে নিরূপণ করা সম্ভব হবে এবং প্রতিটি ইউটিলিটি স্থানান্তরের জন্য বিস্তারিত ব্যয় বিভাজন ডিপিপিতে সংযুক্ত করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সেক্টর থেকে বলা হয়, প্রস্তাবিত প্রকল্পে ১৫টি বিভিন্ন ধরণের নির্মাণ যানযন্ত্রপাতি ক্রয় বাবদ ২৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং জীপ গাড়ি ক্রয় বাবদ ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা যা অত্যধিক মনে হয় এবং এগুলোর বিস্তারিত কারিগরি বর্ণনাও ডিপিপিতে সংযুক্ত করা হয়নি। সিটি করপোরেশনের নির্মাণ যানযন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও প্রস্তাবিত প্রকল্পে এত বেশিপরিমাণ নির্মাণ যানযন্ত্রপাতির প্রয়োজনীয় রয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি বলেন, ‘এগুলো মূলত রাস্তা মেরামত ও নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যান যন্ত্রপাতি।’
সভায় অর্থ বিভাগের প্রতিনিধি উপসচিব লিজা বলেন, ‘প্রকল্পটির কার্যক্রম ও ব্যয় অনেক বেশি তাই সার্বক্ষণিক একজন প্রকল্প পরিচালকের সংস্থান রাখার বিষয়ে তিনি অভিমত দেন।’
সভায় পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট সেক্টর থেকে বলা হয়, প্রস্তাবিত প্রকল্পে ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণের ব্যয় প্রায় একই রকম প্রাক্কলন করা হয়েছে যা রিভিউ করে যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা প্রয়োজন। সভায় আর ও বলা হয়, প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশলি বিভাগ এবং সলিডিও ডিজাইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
আরও বলা হয়, প্রস্তাবিত ডিপিপিতে বেশ কিছু ক্রুটি রয়েছে যা সংশোধন করা প্রয়োজন। এই প্রকল্পটি ২০২১ সালের জানুয়ারিতে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। এরইমধ্যে ২০২১ সালের জুন মাস পার হয়ে গেছে তাই বাস্তবতার নিরিখে স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদকাল পুনঃনির্ধারণ করা প্রয়োজন এবং সে অনুযায়ী এমটিবিএফ প্রত্যয়নপত্র ও ক্রয় পরিকল্পনা সংশোধন করা প্রয়োজন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী প্রকল্পটির সার্বিক প্রস্তাবনা সভায় তুলে ধরেন। তিনি জানান, চট্টগ্রাম বালাদেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর ও দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। চট্টগ্রাম বন্দর, আমদানি, রফতানি এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রমের মাধ্যমে রাজস্ব অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার জন্য পণ্যবাহী গাড়ি সিটি করপোরেশন এলাকার সড়ক ব্যবহার করে থাকে। শহরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং সুযোগ সুবিধা লাভের জন্য নাগরিকদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন কার্যক্রম গত এক দশকে অনেক গুণ বেড়েছে। তাই শহরের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন অত্যন্ত জরুরি। এর জন্য শহর এলাকায় ফুট ওভারব্রিজ, কালভার্ট, ব্রিজ, ওভারপাস, গোলচত্বর এবং রাস্তা নির্মাণ ও উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী ক্রয়, ইউটিলিটি স্থানান্তর, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীর নগরবাসীকে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া, যানজট নিরসন, নগরীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি তথা নাগরিক সেবা বৃদ্ধি করার জন্য এ প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
সারাবাংলা/জেজে/একে