যা কিছু মানতে হবে সর্বাত্মক লকডাউনে
২৮ জুন ২০২১ ১৩:১০
ঢাকা: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ফের শুরু হয়েছে বিধিনিষেধ। বন্ধ হয়েছে গণপরিবহন, মার্কেট, শপিং মল, বিনোদনকেন্দ্র। তিন দিনের জন্য এই বিধিনিষেধের পর বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে কার্যকর হবে আরও কঠোর বিধিনিষেধ, যাকে বলা হচ্ছে সর্বাত্মক লকডাউন। এরই মধ্যে গণপরিবহন ও মার্কেট-শপিং মল বন্ধ হওয়ার পর এই কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় আর কী থাকছে— সে প্রশ্ন অনেকেরই। কত দিনের জন্যই বা এই সর্বাত্মক লকডাউন— সেটিও জিজ্ঞাসা সবার।
সরকারের একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন দিনের বিধিনিষেধে প্রয়োজনীয়সংখ্যক জনবল দিয়ে অফিস খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হলেও বৃহস্পতিবার থেকে জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ রাখার ঘোষণা আসতে পারে। সেই সঙ্গে গণপরিবহন, মার্কেট বন্ধ রাখার নির্দেশনা নিশ্চিতভাবেই অব্যাহত থাকবে। আর প্রাথমিকভাবে সাত দিনের জন্য জারি হতে পারে এই সর্বাত্মক লকডাউন, পরিস্থিতি বুঝে যার মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে।
রোববার (২৭ জুন) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সমন্বয় অধিশাখা থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে আজ সোমবার (২৮ জুন) তিন দিনের জন্য পালনীয় বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। এই বিধিনিষেধের আওতায় বন্ধ হয়েছে গণপরিবহন। একইসঙ্গে দোকানপাট ও শপিং মলও বন্ধ রয়েছে। কেবল প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়ার মাধ্যমে অফিস খোলা রাখার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সোমবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার মধ্যরাত পেরিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত তিন দিন এই বিধিনিষেধ প্রতিপালনের পর বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকেই কার্যকর হবে কঠোর লকডাউন, যার নির্দেশনা আসতে পারে বুধবার (৩০ জুন)।
আরও পড়ুন-
- সোমবার থেকে কঠোর লকডাউন
- সোমবার থেকে সীমিত লকডাউন, প্রজ্ঞাপন আজ
- সোমবার থেকে বুধবারের বিধিনিষেধে যা কিছু পালনীয়
- সোমবার থেকে সীমিত, বৃহস্পতিবার থেকে ‘কঠোর লকডাউন’
- কঠোর লকডাউনের আগে সোমবার থেকেই বন্ধ গণপরিবহন ও মার্কেট
সরকারের একাধিক সূত্র বলছে, সর্বাত্মক লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত যানবাহন চলাচল করতে পারবে। কর্মীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মকাণ্ড চালিয়ে নেওয়ার শর্ত মেনে চালু রাখা যাবে শিল্প কারখানা। খোলা থাকবে হিসাব বিভাগের প্রতিষ্ঠান, খাদ্যপণ্য পরিবহন, কৃষি ও পোল্ট্রিসহ প্রাণিসম্পদ খাতের সঙ্গে যুক্ত যানবাহন। এছাড়া ওষুধ পরিবহন ও বিপণন ছাড়াও হাসপাতাল ও চিকিৎসাসেবা সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত গাড়ি চলাচল করবে নির্বিঘ্নে। গণমাধ্যমকর্মীদের চলাচলেও বাধা থাকবে না।
সূত্রগুলো আরও বলছে, রফতানিমুখী শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম চলবে সীমিত পরিসরে। তবে এর সময়সীমা নির্ধারণ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চালু থাকতে পারে শেয়ার বাজারও। এছাড়া যেসব প্রবাসী টিকেট সংগ্রহ করেছেন তাদের চলাচল কিভাবে অব্যাহত রাখা যায়, সে বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে। তবে সব ধরনের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু রাখা হবে নাকি কেবল বিশেষ ফ্লাইট চালু থাকবে— এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এর মধ্যে অবশ্য রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে জানান, এর আগে যেভাবে কঠোর লকডাউন দেওয়া হয়েছে, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। তবে কিছু কিছু বিষয়ে শিথিলতা থাকতে পারে। প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিষয়গুলো স্পষ্ট করা হবে, তার আগে সুনির্দিষ্টভাবে এ বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, বুধবার (৩০ জুন) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রথমিকভাবে সাত দিনের জন্য সর্বাত্মক লকডাউন দেওয়া হলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় তা বাড়ানো হতে পারে।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি গত বেশ কয়েকদিন ধরেই অবনতিশীল। সবশেষ ১৩ দিনে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ঠিক এক হাজার। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭৭ জন করে মারা গেছেন। এর মধ্যেই একদিনেই এখন পর্যন্ত রেকর্ড ১১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে, সবশেষ দুই সপ্তাহেই নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৬১ হাজার ৪৮৪টি। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪ হাজার ৪শ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ১৮ শতাংশের বেশি।
এ পরিস্থিতিতে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে কমপক্ষে দুই সপ্তাহের জন্য ‘সম্পূর্ণ শাটডাউন’ জারির সুপারিশ করেছিল কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এই সুপারিশের পর শুক্রবার (২৫ জুন) রাতে সরকারের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার গণমাধ্যমে পাঠানো বার্তায় জানান, সোমবার (২৮ জুন) থেকে সারাদেশে কঠোর লকডাউন জারি হবে। পরে শনিবার রাতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়, সোমবার থেকে সীমিত ও বৃহস্পতিবার থেকে কঠোর লকডাউন পালন করা হবে।
রোববার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সোমবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত তিন দিন পণ্যবাহী যানবাহন ও রিকশা ছাড়া সব ধরনের যাত্রীবাহী গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহলের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করবে। শপিং মল, পর্যটনকেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টার, রিসোর্ট বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে এই সময়। হোটেল-রেস্তরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে শুধু খাবার বিক্রির জন্য। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় জনবল নিয়ে সীমিত পরিসরে কাজ করবে, যাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়া করতে হবে। পাশাপাশি মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিত করতে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়।
সারাবাংলা/জেআর/টিআর