‘পরিষ্কার কথা— চাইলেও কেউ ঘর থেকে বের হতে পারবে না’
২৮ জুন ২০২১ ১৬:২৯
ঢাকা: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে তিন দিনের চলমান বিধিনিষেধ শেষে আরও কঠোর বিধিনিষেধ জারি হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। আর সেই বিধিনিষেধের আওতায় জরুরি কাজে নিয়োজিত ছাড়া বাকি সবাইকে ঘরে থাকতে বাধ্য করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সচিব বলেন, যারা জরুরি কাজে থাকবেন, তারা বের হতে পারবেন। এর বাইরে সবাইকে ঘরে থাকতে হবে। পরিষ্কার কথা— বিনা প্রয়োজনে কেউ চাইলেও ঘর থেকে বের হতে পারবে না।
সোমবার (২৮ জুন) মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের এ কথা বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ১ জুলাই থেকে কার্যকর হতে যাওয়া কঠোর বিধিনিষেধ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন-
- সোমবার থেকে কঠোর লকডাউন
- যা কিছু মানতে হবে সর্বাত্মক লকডাউনে
- ১ জুলাই থেকে মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী-বিজিবি
- সোমবার থেকে সীমিত লকডাউন, প্রজ্ঞাপন আজ
- সোমবার থেকে বুধবারের বিধিনিষেধে যা কিছু পালনীয়
- সোমবার থেকে সীমিত, বৃহস্পতিবার থেকে ‘কঠোর লকডাউন’
- কঠোর লকডাউনের আগে সোমবার থেকেই বন্ধ গণপরিবহন ও মার্কেট
সচিব বলেন, ১ জুলাই থেকে সরকারের অবস্থান হবে অত্যন্ত কঠোর। কোনো ধরনের মুভমেন্ট পাস থাকবে না। ফলে কেউ চাইলেও ঘর থেকে বের হতে পারবে না। এটি কঠোরভাবে মনিটরিং করা হবে।
বিশেষ প্রয়োজন থাকলে তাহলে কিভাবে মানুষ বের হবে— এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যারা জরুরি সেবায় (ইমারজেন্সি) নিয়োজিত, তারা সবসময় বের হতে পারবেন। এর বাইরে কারও বের হওয়া যাবে না। বাসায় থাকতে হবে সবাইকে। কিন্তু ধরুন দাফন-কাফন করতে হবে। সেটা তো বাসায় করা যাবে না। ওই সময় বের হওয়া যাবে। রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাবেন, সেক্ষেত্রে বের হতে পারবেন।
কঠোর বিধিনিষেধের বিষয়গুলো বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণে এর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভা হয়েছে জানিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ১ জুলাই থেকে স্ট্রিক্ট রেসট্রিকশনে যাচ্ছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এর আগে সভা হয়েছে। আগামীকাল বা পরশু আবার বসে বাস্তবায়নের কৌশল চূড়ান্ত করব। আর্মি, বিজিবি, ব্যাটেলিয়ান পুলিশ টহলে থাকবে। তাদের যতটুকু সম্ভব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অথরিটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনোভাবেই যেন মানুষ ঘর থেকে বের হতে না পারে, তারা সেটি মনিটর করবে।
সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
সশস্ত্র বাহিনীর টহলের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, ‘কেউ কথা না শুনলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া তাদের কাজের মধ্যে থাকবে।’
সোমবার থেকেই রিকশা ও পণ্যবাহী পরিবহন বাদে সব যাত্রীবাহী গণপরিবহন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ১ জুলাই থেকে রিকশা চলবে কি না, সে বিষয়টি আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
এর আগে, সোমবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত যেসব বিধিনিষেধ মানতে হবে, তার নির্দেশনা রোববার (২৭ জুন) জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে বলা হয়, পণ্যবাহী যানবাহন ও রিকশা ছাড়া সব ধরনের যাত্রীবাহী গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। শপিং মল, পর্যটনকেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টার, রিসোর্ট বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে এই সময়। হোটেল-রেস্তরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে শুধু খাবার বিক্রির জন্য। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় জনবল নিয়ে সীমিত পরিসরে কাজ করবে, যাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়া করতে হবে। পাশাপাশি মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিত করতে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়।
এর আগে, সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে কমপক্ষে দুই সপ্তাহের জন্য ‘সম্পূর্ণ শাটডাউন’ জারির সুপারিশ করেছিল কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এই সুপারিশের পর শুক্রবার (২৫ জুন) রাতে সরকারের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার গণমাধ্যমে পাঠানো বার্তায় জানান, সোমবার (২৮ জুন) থেকে সারাদেশে কঠোর লকডাউন জারি হবে। পরে শনিবার রাতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়, সোমবার থেকে সীমিত ও বৃহস্পতিবার থেকে কঠোর লকডাউন পালন করা হবে।
সারাবাংলা/জেআর/টিআর