Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেশ চলছে জগৎ শেঠ ও আমলাদের হাতে— সংসদে আলোচনায় এমপিরা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৮ জুন ২০২১ ১৮:৫৫

ঢাকা: দেশ চালাচ্ছে কারা— এমন প্রশ্ন তোলা হয়েছে সংসদে। যিনি প্রশ্ন তুলেছেন তিনিই আবার উত্তর দিয়ে বলেছেন, রাজনীতির মঞ্চগুলো আস্তে আস্তে ব্যবসায়ীরা দখল করছেন। দেশ চালাচ্ছেন জগৎ শেঠ ও আমলারা। রাজনীতিবিদরা এখন তৃতীয় লাইনে দাঁড়িয়ে। এই হচ্ছে আমাদের দুর্ভাগ্য। অথচ এই দেশ স্বাধীন করেছেন রাজনীতিবিদরা।

সোমবার (২৮ জুন) সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ এ কথা বলেন। পরে প্রায় একই সুরে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ দলীয় সিনিয়র সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ। টানা নয় দিন পর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশনের মূলতবি বৈঠক শুরু হয় এদিন।

বিজ্ঞাপন

জাতীয় পার্টির সিনিয়র এমপি কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে,। কারণ দেশে কোনো রাজনীতি নেই। রাজনীতির নামে এখন পালাগানের অনুষ্ঠান হয়। সন্ধ্যার সময় ওবায়দুল কাদের একদিকে পালাগান করেন, একটু পর টিভিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরেকটা পালাগান করেন। রাজনীতিবিদরা ঘরে বসে টেলিভিশনে পালাগানের রাজনীতি দেখি। এই পালাগান চলছে ১০ বছর। রাজনীতি শূন্য, কোথাও রাজনীতি নেই।’

জাতীয় পার্টির এই এমপি বলেন অভিযোগ করে বলেন, ‘এখন রাজনীতিবিদদের চেয়ে আমলাদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের সঙ্গে কথা বলেন। আর এমপিরা পাশাপাশি বসে থাকেন, দূরে। তারপর বলে ডিসি সাব, আমি একটু কথা বলব প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। এই হচ্ছে রাজনীতিবিদদের অবস্থা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের সঙ্গে যখন কথা বলেন, তখন এমপিদের কোনো দাম থাকে না।’

বিজ্ঞাপন

কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘পদ্মাসেতু, পায়রা বন্দর, মেট্রোরেল- যাই করা হোক, রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ছাড়া জনগণ এটার সুফল পাবে না। রাজনীতিবিদ ছাড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে এই প্রতিশ্রুতি থাকে না। বাতাস যেদিকে, তারা সেদিকে ছাতা ধরেন। জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় ছিল, সে তিক্ত অভিজ্ঞতা তাদের আছে।’

তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী এমপিরা সচিবদের ওপরে। এটা খেয়াল রাখতে হবে। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হন। তখন মন্ত্রীরা জেলার দায়িত্ব পালন করতেন। সেখানে গেলে কর্মীরা আসতো। মন্ত্রীরা গ্রামে-গঞ্জে যেতেন। কোথায় যেন সেই দিনগুলো হারিয়ে গেছে।’

আমলাদের নিয়ে বক্তৃতাকালে টেবিল চাপড়ে এমপিরা সমর্থন জানান। তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমরা যারা এই জাতীয় সংসদের সদস্য, এমন একজনও নেই যিনি এই করোনাকালে নিজস্ব অর্থায়নে বা যেভাবেই হোক গরিব–দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াননি। সবাই দাঁড়িয়েছে। আমি আমার নিজের এলাকায় ৪০ হাজার মানুষকে রিলিফ দিয়েছি। এখন আমাদের মাফ করবেন।’

তিনি বলেন, ‘এখন আমি যে কথাটা বলব, সেটা কতটা যুক্তিসঙ্গত জানি না; বর্তমানে জেলায় জেলায় দেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা। মানুষ মনে করে আমরা যা দিই, এটা প্রশাসনিক কর্মকর্তারাই দেয়। অথচ প্রশাসনিক যারা কর্মকর্তা, তারা কিন্তু ওই এলাকায় যাননি। এটা কিন্তু ঠিক না। একটা রাজনৈতিক সরকার এবং রাজনীতিবিদদের যে কর্তৃত্ব, সেটা কিন্তু ম্লান হয়ে যায়।’

তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, ফেরাউনের সময়ও আমলা ছিল। এসব কথাবার্তা মানুষ পছন্দ করে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, তিনি রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি করা কঠিন করে দেবেন। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজটা করেছেন।’ সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘যারা রাজনীতিবিদ, যারা নির্বাচিত প্রতিনিধি, তাদের জন্য নির্ধারিত স্থান থাকা উচিত। এছাড়া আমাদের জেলায় একজন সচিব যাবেন, আমরা তাকে বরণ করে নেব, ঠিক আছে। কিন্তু তারা যান না।’

এদিকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি হেফাজতে ইসলামকে স্বাধীনতাবিরোধী জঙ্গি সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের নিষিদ্ধ করার দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে বিএনপি, জামায়াত, হেফাজত দেশের বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডব চালিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল সরকার পতন। স্বাধীনতা দিবস ওরা সহ্য করতে পারে না, ওদের বুকে ব্যথা লাগে। কথা নেই, বার্তা নেই- বায়তুল মোকাররমে জমা হয়ে তাণ্ডব চালায়। সেখানে মুসল্লিরা নামাজ পড়তে পারেন না। বায়তুল মোকাররমে এ ধরনের সমাবেশ নিষিদ্ধ করা উচিত। তারা বায়তুল মোকাররমকে প্লাটফর্ম বানিয়েছে। কোরআন শরিফ পুড়িয়েছে, মানুষ পুড়িয়েছে। এই হেফাজতে ইসলাম ছিল স্বাধীনতাবিরোধী নেজামে ইসলামী। মানুষ মেরে এরা ইসলামকে হেফাজত করবে কীভাবে? এটা জঙ্গি সংগঠন, এ সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হোক।’

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন। পরে স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রপ্রদায়িক শক্তি আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। পরে জিয়াউর রহমান এসে এদের রাজনীতি করার অনুমতি দেয়। জিয়াউর রহমান বিএনপি গঠন করে। যার বাংলা করলে দাঁড়ায় বি মানে বাংলাদেশ, এন মানে না এবং পি মানে পাকিস্তান। অর্থাৎ, বাংলাদেশ না পাকিস্তান।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম

অধিবেশন বাজেট সংসদ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর