Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নীতিমালার তোয়াক্কা নেই, সংরক্ষিত বনের পাশে অবৈধ করাত কল

মনিরুল ইসলাম, লোকাল করেসপন্ডেন্ট
২৯ জুন ২০২১ ০৮:০৭

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী): সংরক্ষিত বনভূমির ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ধরনের করাত কল স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা গায়েই মাখছে না কেউ। কুয়াকাটার  কলাপাড়ার মহিপুর ও হাজিপুরে সংরক্ষিত বনের কোল ঘেঁষেই গড়ে তোলা হয়েছে করাত কল। শুধু তাই নয়, এসব করাত কলের জন্য নেওয়া হয়নি কোনো লাইসেন্স, নেই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রও। আর এসব করাত কলে কাঠ জোগান দিতে গিয়ে উজাড় হচ্ছে বন বিভাগের গাছ। তাতে পরিবেশের ওপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব। সরকারও বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব থেকে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়রা বলছেন, বন ও পরিবেশ বিভাগের তদারকি ও যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে হাজিপুর ও মহিপুরে সংরক্ষিত ফাতরা বনের পাশে এভাবে লাইসেন্স ও ছাড়পত্রবিহীন অবৈধ করাত কল গড়ে উঠেছে। আর বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা ‘শিগগিরই’ ব্যবস্থা নেবে।

কুয়াকাটার মহিপুরের খাপড়াভাঙা নদীর তীরবর্তী এলাকায় এবং হাজিপুর ইউনিয়নের সোনাতলা নদীর তীরে এলাকার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাশেই রয়েছে বেশ কয়েকটি করাত কল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর কোনোটিরই লাইসেন্স বা ছাড়পত্র নেই। অথচ এ সংক্রান্ত বিধিমালা অনুযায়ী করাত কল স্থাপনের জন্য প্রথমে বন বিভাগের লাইসেন্স নিতে হয়। ২০০০ টাকা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা দিয়ে তারপর আবেদন করতে হয় লাইসেন্সের জন্য। এরপর লাইসেন্স পেলে নিতে হয় পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র।

করাত কল (লাইসেন্স) বিধিমালায় ২০১২-তে আরও বলা হয়েছে— সংরক্ষিত, রক্ষিত, অর্পিত বা অন্য যেকোনো ধরনের সরকারি বনভূমির সীমানা থেকে ন্যূনতম ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কিংবা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক স্থল সীমানা থেকে ন্যূনতম ৫ কিলোমিটারের মধ্যে করাত কল স্থাপন করা যাবে না। এছাড়া সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিনোদন পার্ক, উদ্যান ও জনস্বাস্থ্য বা পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোনো স্থানের ২০০ মিটারের মধ্যে করাত কল স্থাপন করা যাবে না।

বিধিমালায় আরও বলা আছে, এই আইন কার্যকর হওয়ার আগে কোনো নিষিদ্ধ স্থানে করাত কল স্থাপন করা হয়ে থাকলে আইন কার্যকরের তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে সেগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। তা না করা হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তা বন্ধের জন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

বিজ্ঞাপন

জাতীয় এই বিধিমালার কোনো তোয়াক্কা না করেই কুয়াকাটার হাজিপুর ও মহিপুরে যেখানে সেখানে গড়ে উঠেছে অবৈধ করাত কল। বন বিভাগের ভূমির ১০ কিলোমিটারের বিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে। তাছাড়া একই বিধিমালায় অনুমোদিত স্থানে লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নিয়ে করাত কল স্থাপন করা হলে সেগুলোর কার্যক্রম সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে বলা হয়েছে। এই বিধানও মানছে না কোনো করাত কল। বন ও পরিবেশ বিভাগের তদারকি ও যথাযথ পদক্ষেপের অভাব এ সংকট তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

মহিপুরের করাত কলের মালিক মালেক আকন,হাজিপুরেরটির বুলেট হাওলাদার। মালেক আকনের সঙ্গে যোগাযোগ না করতে পেরে তার ছেলে সোহাগ আকনের মোবাইল নম্বরে বারবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। অন্যদিকে বুলেট হাওলাদার বলছেন, এলাকার জনসাধারণ উপকারের স্বার্থে করাত কল স্থাপন করেছেন। তবে এর লাইসেন্স বা পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র সম্পর্কে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে বন বিভাগ বলছে, এদের কোনোটিরই লাইসেন্স নেই।

কলাপাড়া কন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আবদুস ছালাম সারাবাংলাকে বলেন, করাত কল বসানোর জন্য কোনো ধরনের অনুমতির আবেদন আমরা পাইনি। আমাদের কিছু না জানিয়েই করাত কল নির্মাণ করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে নানা ধরনের বিধিনিষেধ ও লকডাউন চলছে। এই সুযোগে তারা মিলটি স্থাপন করছে। আমরা খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।

জানতে চাইলে মহিপুরের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদও বললেন, জোর করেই করাত কল স্থাপন করা হচ্ছে। অনুমতি না থাকায় তারা বন্ধ করতে বলেছিলেন। কিন্তু তাদের নিষেধ অমান্য করা হচ্ছে। তারা শিগগিরই সংশ্লিষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থ নেবেন।

ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছেন পটুয়াখালী জেলা সহকারী বন কর্মকর্তা মো.তরিকুল ইসলামও। তিনি বলেন, কারও কোনো অনুমতি না নিয়েই করাত কল স্থাপনের বিষয়টি জানতে পেরেছি। বন বিভাগের নীতিমালা অনুযায়ী এ বিষয়ে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সারাবাংলা/টিআর

অবৈধ করাত কল সংরক্ষিত বন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর