Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ডিসির দায়িত্বে ওসি প্রদীপের সম্পদ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৯ জুন ২০২১ ১২:৩৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো: কক্সবাজারের টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ এবং তার স্ত্রী চুমকি কারণের অবরুদ্ধ সম্পদের ‘রিসিভার’ নিয়োগের আদেশ দিয়েছেন আদালত। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসককে এ দায়িত্ব পালনের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার (২৯ জুন) চট্টগ্রামের সিনিয়র স্পেশাল জজ-১ শেখ মো. আশফাকুর রহমান এ আদেশ দেন।

গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রদীপ-চুমকির মালিকানায় থাকা চার কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত। প্রদীপ ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে চার কোটি ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৭৯ টাকার সম্পদ অর্জন করে স্ত্রীর নামে হস্তান্তর ও স্থানান্তরের অভিযোগে দুদক তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল।

দুদকের কৌঁসুলি মাহমুদুল হক মাহমুদ সারাবাংলাকে জানান, ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রীর নামে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে থাকা স্থাবর সম্পদের রিসিভার নিয়োগের আবেদন করেছিলেন দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা। আদালত সেটা গ্রহণ করে চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটায় একটি ভবন, পাঁচলাইশে জমি এবং দুটি গাড়ির রিসিভার হিসেবে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে নিয়োগের আদেশ দিয়েছেন। এছাড়াও কক্সবাজারে প্রদীপের নামে থাকা একটি ফ্ল্যাটের রিসিভার হিসেবে নিয়োগের জন্য কক্সবাজারের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন।

‘আদালতের আদেশ অনুযায়ী এখন থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উল্লিখিত স্থাবর সম্পদের দেখভাল বা তদারক করবেন দুই জেলা প্রশাসক।’- বলেন মাহমুদুল হক

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, সম্পত্তি ক্রোক করার অর্থ হলো, মামলা চলাকালীন তিনি ওই সম্পত্তি হস্তান্তর বা বিক্রি করতে পারবেন না। মামলা নিষ্পত্তির পর তিনি খালাস পেলে সম্পত্তি তাকে ফেরত দেওয়া হবে, নয়তো সরকারি কোষাগারে চলে যাবে।

আইনজীবী মাহমুদুল বলেন, ক্রোকের আদেশ থেকে মামলার বিচার চলাকালীন রিসিভারের মাধ্যমে সেই সম্পদের দেখভাল করা হয়।

সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের উত্তর সারোয়াতলী গ্রামের মৃত হরেন্দ্র লাল দাশের ছেলে। নগরীর কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা আর সি চার্চ রোডে তাদের নিজস্ব একটি আবাসিক ভবন আছে। সেই ভবনে তার স্ত্রী চুমকি কারণ সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতেন।

গত বছরের (২০২০) ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলায় কারাবন্দী প্রদীপসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে গত ২৭ জুন অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন কক্সবাজারের আদালত। ঘটনার পর টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

এই ঘটনার পর গত বছরের ২৩ আগস্ট দুদক কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে চার কোটি ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৭৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি মামলা দায়ের করেন। দুদকের অভিযোগ- উল্লিখিত অর্থের মধ্যে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকা ‘ওসি প্রদীপ’ ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন। আরও ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকার অবৈধ সম্পদ তাদের মালিকানায় আছে যা তারা সম্পদের তথ্য বিবরণীতে গোপন করেছেন।

বিজ্ঞাপন

ওই মামলায় দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর প্রদীপের উপস্থিতিতে শুনানি করে তাকে গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ। এরপর ওই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর দুদক ‘অবৈধভাবে অর্জিত’ তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করার জন্য আদালতে আবেদন করে।

আবেদনে প্রদীপ ও চুমকির হেফাজতে থাকা ৪০ লাখ ৫৩ হাজার ৬০৪ টাকার স্থাবর সম্পদের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে- রেজিস্ট্রেশন খরচসহ ১৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা দামের একটি পুরনো মাইক্রোবাস, ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা দামের একটি পুরনো প্রাইভেটকার, বেসিক ব্যাংকের আসাদগঞ্জ শাখায় রক্ষিত ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ৬০৪ টাকা।

একই আবেদনে তিন কোটি ৬৬ লাখ ২৪ হাজার ৪৭৫ টাকার অস্থাবর সম্পদের কথা উল্লেখ আছে। এর মধ্যে আছে নগরীর কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটায় ২ কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৭০০ টাকা দামের ছয়তলা একটি বাড়ি। এর জমির দাম ৭২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, ভবনের দাম এক কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং রেজিস্ট্রেশন খরচ ১৪ কোটি ২১ লাখ ৭০০ টাকা।

এরপর আছে নগরীর পাঁচলাইশ থানার পশ্চিম ষোলশহর এলাকায় এক কোটি ২৯ লাখ ৯২ হাজার ৬০০ টাকা দামের জমির ওপর সাত লাখ টাকা দামের সেমিপাকা ঘর। কক্সবাজারের ঝিলংঝা মৌজায় ১২ লাখ ৫ হাজার ১৭৫ টাকায় একটি ফ্ল্যাটের বিষয়ও উল্লেখ আছে আবেদনে।

দুদকের আবেদনে বলা হয়, উল্লিখিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ স্থানান্তর ও হস্তান্তর হয়ে গেলে রাষ্ট্রের সমূহ ক্ষতির কারণ আছে। এজন্য এসব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধকরণপূর্বক দুদকের একজন রিসিভার নিয়োগ প্রয়োজন।

এজন্য এসব সম্পদ অবরুদ্ধকরণের জন্য চট্টগ্রাম সদরের সাব রেজিস্ট্রার, বেসিক ব্যাংকের আসাদগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক এবং চট্টগ্রামের বিআরটিএ’র উপ-পরিচালকের প্রতি আদেশ জারি করার আবেদন করেছিল দুদক। আদালত শুনানি করে দুদকের সম্পদ অবরুদ্ধ করার আবেদন মঞ্জুর করেছিলেন।

সারাবাংলা/আরডি/এএম

ওসি প্রদীপ টপ নিউজ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর