Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দুর্নীতিকে বৈধতা দেওয়ার সামিল’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৯ জুন ২০২১ ১৪:১৩

ঢাকা: কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা দুর্নীতিকে বৈধতা দেওয়ার সামিল বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম কাদের (জিএম কাদের)। একইসঙ্গে এটি সুশাসনের পরিপন্থী বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

মঙ্গলবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশগ্রহণ করে সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা এসব কথা বলেন।

এ বিষয়ে জিএম কাদের বলেন, কালোটাকা সাদা করার যে সুযোগ রাখা হয়েছে, সেটা দুর্নীতিকে বৈধতা দেওয়ার সামিল। এটি সুশাসনের পরিপন্থী। অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ বৈধতা দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতির সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। যেকোনো শর্তেই হোক কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বন্ধ হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, এ বিষয়টি নিশ্চিতভাবে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে। যে কারণে এ সুযোগ রাখা হয়েছে বলা হয়— সেটা হল দেশে বিনিয়োগবৃদ্ধি ও বিদেশে টাকা পাচার বন্ধ করা। বেশ কয়েকটি বাজেটে কিছু দিন থেকে এ সুযোগ দেওয়া হয়ে আসছে। কিন্তু ফলাফল শূন্য।

গোলাম কাদের আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী কালোটাকা পরিমাপের সবচেয়ে বড় গবেষক জার্মান অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ফ্রেডরিক স্নাইডারের হিসাবে বাংলাদেশের মোট কালোটাকার পরিমাণ জিডিপির ২৮ শতাংশ, যা প্রায় ১০ লাখ কোটি টাকার মতো। গত ৫০ বছরে ২০ বার কালোটাকা সদা করার সুযোগে মাত্র ১৮ হাজার কোটি টাকা সাদা হয়েছে।

বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) গত পাঁচ বছরে এক হাজার ২৪টি অর্থ পাচার ঘটনার প্রমাণ পেয়েছে। বিএফআইইউ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছে অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তথ্য-প্রমাণসহ প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। ফলাফল, এখন পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এমন কোনো তথ্য নেই— বলেন সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, আবার সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের সঞ্চয়ের পরিমাণ উধ্র্বমুখী এমন খবর আমরা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হতে দেখছি। ২০১৯ সাল পর্যন্ত এসব ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নামে পাচার হওয়া অর্থের তথ্য প্রকাশে বিশ্বব্যাপী নির্ভর যোগ্য প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেগ্রিটির (জিএফআই) তথ্য তুলে ধরে জিএম কাদের বলেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাণিজ্যের আড়ালে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে পাচার হয় ৭৩৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার বা (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা হিসাবে) প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা। বিভিন্নভাবে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে।

জিএম কাদের ব্যাংকিং খাতের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, হলমার্কের চার হাজার কোটি টাকা অর্থ লোপাট, বিসমিল্লাহ্ গ্রুপের আর্থিক অনিয়ম এবং বেসিক ব্যাংকের অনাদায়ী খেলাপি ঋণ উদ্ধারের বিষয়ে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ এখনো দৃশ্যমান নয়।

তিনি আরও বলেন, এবারের বাজেটে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সর্বোচ্চ ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে কৃষিতে। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো দিক। তবে আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় কৃষি ভর্তুকির টাকা যাদের কারণে দেওয়া হয়, তারা সাধারণত তা পায় না। তাদের বঞ্চিত করে কিছু মধ্যস্বত্বভোগী বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এ অর্থ আত্মসাৎ করে।

বাজেটে উচ্চ শিক্ষায় ১৫ শতাংশ কর আরোপ করা (বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল শিক্ষা) হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে এই খরচ শিক্ষার্থীদেরই বহন করতে হবে। এতে উচ্চ শিক্ষার ব্যয় বেড়ে যাবে ফলে উচ্চ শিক্ষার প্রসার বাধাগ্রস্থ হবে। তাই এই কর প্রত্যাহারের দাবি জানান জিএম কাদের।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এএইচএইচ/এনএস

কালোটাকা সাদা করার সুযোগ গোলাম কাদের জাতীয় পার্টি দুর্নীতিকে বৈধতা দেওয়ার সামিল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর