Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বাস্থ্যে লুটপাট: জনপ্রতি বরাদ্দ ১৭ হাজার, খরচ ১ লাখ ১২ হাজার!

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৯ জুন ২০২১ ২০:২০

ঢাকা: স্বাস্থ্যের এক অপারেশন প্লানে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য প্রশিক্ষণে ব্যয় করা হয়েছে বরাদ্দের অতিরিক্ত অর্থ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ ব্যয়ের পরিমাণ ৫৬৭ শতাংশ বেশি। প্রশিক্ষণের জন্য জনপ্রতি ১৬ হাজার ৭৬৬ টাকা বরাদ্দ থাকলেও বাস্তবে জনপ্রতি ব্যয় করা হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৯৩১ টাকা। যা নির্ধারিত ব্যয়ের প্রায় ৬ দশমিক ৬৭ গুণ বেশি। সেইসঙ্গে অন্য কর্মসূচি থেকে স্থানান্তরিত ১৬টি গাড়িও পড়ে আছে অচল হয়ে। চলমান ‘ক্লিনিক্যাল কন্ট্রাসেপশন সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রেগাম’ শীর্ষক অপারেশন প্ল্যানে ঘটেছে এমন ঘটনা।

বিজ্ঞাপন

চলতি মাসে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। শিগগিরই প্রতিবেদনটি পাঠানো হবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচির (৪র্থ এইচপিএনএসপি) আওতায় প্ল্যানটি বাস্তবায়ন করছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা। প্ল্যানটি ২০১৭ সালের জানুয়ারি হতে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়ন হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুরু থেকে গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্ল্যানটিতে ব্যয় হয়েছে ৬৯৮ কোটি টাকা। যা মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৪৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ। প্ল্যানটির আওতায় ১১ লাখ স্থায়ী পদ্ধতি, সাড়ে ১৪ লাখ আইইউডি স্থাপন এবং ২৪ লাখ ইমপ্ল্যান্ট স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কিন্তু গত মার্চ পর্যন্ত মোট ২৭ লাখ ৮৯ হাজার জনকে স্থায়ী ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিবার পরিকল্পনা সেবা দেওয়া হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার ৫৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

আইএমইডির সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত করেছি। শিগগিরই এটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পাঠানো হবে। শুধু প্রতিবেদন দিয়েই দায় আমরা বসে থাকব না। বরং এর পরিপ্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে- একটি নির্দিষ্ট সময় পরে সেটিও জানতে চাওয়া হবে।’

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদানকারীদের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে অপারেশন প্ল্যানে (ওপি) ১ হাজার ৫০ জন চিকিৎসকের জন্য বেসিক ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত মাত্র ৩৩৮ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এছাড়া চিকিৎসকদের জন্য বেসিক এবং রিফ্রেশার ট্রেনিং খাতে প্রাক্কলিত ব্যয়ের ১৭ শতাংশ ইতোমধ্যে ব্যয় করা হয়েছে। ওপিতে প্রশিক্ষণের জন্য জনপ্রতি ১৬ হাজার ৭৬৬ টাকা বরাদ্দ থাকলেও বাস্তবে জনপ্রতি ব্যয় করা হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৯৩১ টাকা। যা নির্ধারিত ব্যয়ের প্রায় ৬ দশমিক ৬৭ গুণ বেশি। রিফ্রেশার ট্রেনিং বাবদ জনপ্রতি ৫৬৭ শতাংশ বেশি ব্যয় করা হয়েছে। করোনাকালীন পরিস্থিতিতে ২০২০-২১ অর্থবছরে দীর্ঘ মেয়াদী ও স্থায়ী পরিবার পরিকল্পনা সেবা দেওয়ার সক্ষমতা বাড়াতে চিকিৎসকদের কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, লোকাল ট্রেনিং (এমআর/এমআরএম/প্যাক-এফপি পদ্ধতির) খাতে ৫২০ জনকে ট্রেনিং দেওয়ার উল্লেখ থাকলেও এখন পর্যন্ত কাউকে এ বিষয়ে ট্রেনিং দেওয়া সম্ভব হয়নি। বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বাবদ ৩০০ জনের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ কোটি ৮০ লাখ টাকা। কিন্তু করোনাকালীন বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বন্ধ রয়েছে। তবে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত ১১৬ জনের বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বাবদ ব্যয় হয়েছে ৫ কোটি ১২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এই খাতে জনপ্রতি ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও বাস্তবে ব্যয় হয়েছে ৪ লাখ ৪২ হাজার ১০৩ টাকা করে।

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রেনিং খাতে অতিরিক্ত ব্যয়ের ধারাবাহিকতায় এক দিনব্যাপী ওরিয়েন্টেশন ওয়ার্কশপ অন পিপিএফপি আয়োজনে জনপ্রতি প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি ব্যয় করা হয়েছে । মাঠ কর্মীদের ওরিয়েন্টেশন ওয়ার্কশপ বাবদ ২৯ হাজার জনের জন্য মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা । কিন্তু বাস্তবে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত মাত্র ৭ হাজার ৬৬৮ জনের ওরিয়েন্টশন ওয়ার্কশপ বাবদ ব্যয় করা হয়েছে ২ কোটি ৫৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ মাঠ কর্মীদের সংখ্যা ও হিসাবে মাত্র ২৬ শতাংশ কর্মীর জন্য ইতোমধ্যে মোট বরাদ্দের ৪৫ শতাংশ ব্যয় করা হয়েছে । একইভাবে ২৮ হাজার জনের এলএআরসি এবং পিএএম ওরিয়েন্টশন ওয়ার্কশপ বাবদ ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত মূল্য নির্ধারিত থাকলেও ইতোমধ্যে ১২ হাজার ৬৪০ জনের ওরিয়েন্টেশন ওয়ার্কশপ বাবদ ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পরিবার পরিকল্পনা সেবার গুণগত মান বাড়ানোর অংশ হিসেবে ৩৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭০টি নতুন যানবাহন কেনা হয়েছে। যানবাহন হিসাবে ৬৪টি জিপ এবং ১২টি মাইক্রোবাসের সংস্থান থাকলেও এখন পর্যন্ত ৬৪টি জিপ এবং ৬টি মাইক্রোবাসের কেনা হয়েছে। এছাড়া তৃতীয় সেক্টর প্রোগ্রাম এইচপিএনএসডিপি থেকে হস্তান্তর করা ২৩টি যানবাহন এই ওপির আওতায় সংযুক্ত বর্তমানে হস্তান্তর করা চারটি মোবাইল ক্লিনিক কাম অ্যাম্বুলেন্স অচল অবস্থায় পড়ে আছে। এছাড়াও এচইপিএনএসডিপি থেকে হস্তান্তর করা ১৯টি জিপের মধ্যে ১২টি অচল অবস্থায় রয়েছে।

এছাড়া সিসিএসডিপি ওপিতে যানবাহন রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ আছে। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত যানবাহন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ১ কোটি ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। তবে হস্তান্তর করা ২৩টি যানবাহনের মধ্যে ১৬টি (৭০ শতাংশ) যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এর বাইরে গ্যাস ও জ্বালানি খাতে নয় কোটি ৬২ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে এবং চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এই খাতে ৩ কোটি ৪৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ব্যয় হযেছে। আর পেট্রোল, তেল এবং লুব্রিক্যান্ট খাতে ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ আছে এবং চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ২৬ লাখ ১৯ হাজার টাকা।

সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম

আইএমইডি খরচ নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় প্রশিক্ষণ বরাদ্দ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর