পুলিশি হয়রানির শিকার দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিক এমদাদুল হক তুহিন
২৯ জুন ২০২১ ২০:৩০
ঢাকা: পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশের হাতে হয়রানির শিকার হয়েছেন সারাবাংলা ডটনেটের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট এমদাদুল হক তুহিন। পুলিশের দায়িত্ব পালনের ছবি তুলতে গেলে তাকে বাধা দেওয়া হয়, কেড়ে নেওয়া হয় মোবাইল। পুলিশ বলছে, সাংবাদিক পরিচয় জানার পর এ ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯ জুন) দুপুরে রাজধানীর মহাখালী রেলক্রসিং এলাকায় পুলিশ চেকপোস্টে তেজগাঁও থানা পুলিশের হাতে তিনি হয়রানির শিকার হন বলে অভিযোগ করেছেন।
এমদাদুল হক তুহিন জানান, সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ কিভাবে পালন করা হচ্ছে, সে বিষয়ে প্রতিবেদন করতে রাজধানীর মহাখালী এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। সেখানে মোটরসাইকেলে চালকের সঙ্গে আরোহী থাকলে চেকপোস্টে থামিয়ে মামলা দেওয়া হচ্ছিল। কোনো কোনো বাইক চেকপোস্ট গলে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তেজগাঁও থানার পুলিশ কনস্টেবল আনোয়ার লাঠি দিয়ে যাত্রীদের আঘাত করছিলেন। যাত্রীদের ওপর অমানবিক এই নির্যাতনের ছবি তোলার কারণে তার কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয় এবং হয়রানি করা হয়।
তুহিন অভিযোগ জানিয়ে বলেন, মহাখালী রেলগেটে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে মোটরসাইকেল আটকাচ্ছিল। দু’জন যাত্রী থাকলেই বাইকগুলোকে থামানো হচ্ছিল। কোনো বাইক ফাঁকি দিয়ে এলাকা অতিক্রম করতে চাইলে আনোয়ার নামের এক পুলিশ সদস্য লাঠি দিয়ে অমানবিকভাবে আঘাত করছিলেন। এতে দুয়েকজনকে পড়ে যেতেও দেখা গেছে। স্বাভাবিকভাবেই সাংবাদিক হিসেবে হাতে থাকা মোবাইল ফোন দিয়ে এ ঘটনার ছবি তুলতে থাকি। এতে আনোয়ার ক্ষিপ্ত হয়ে আমার দিকে তেড়ে আসেন। আর পেছন থেকে আমার কলার চেপে ধরেন তেজগাঁও থানার উপপরির্দশক (এসআই) শরিফুল ইসলাম।
তুহিন আরও বলেন, সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর শরিফুল কলার থেকে সঙ্গে সঙ্গে হাত নামিয়ে ফেলেন। কিন্তু আনোয়ার আমার ওপর চড়াও হন। তার ভাই যমুনা টিভিতে কাজ করেন— এ কথা বলে আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। পরে জোর করে আমার হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। আমি হাতে ব্যথা পেয়েছি, আমার মোবাইলে স্ক্রিনও ফেটে গেছে। প্রায় ১৫ মিনিট আমাকে আটকে রাখার পর ঘটনাস্থলে তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহ আলম এসে উপস্থিত হলে ঘটনা শুনে আমার মোবাইল ফেরত দেন। পুলিশের এই আচরণে আমি মর্মাহত।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও থানার এসআই শরিফুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, আমরা দায়িত্ব পালন করার সময় উনি ভিডিও করেছেন। টের পেয়ে পেছন থেকে তাকে ধরেছি। তবে তিনি সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরই আমি তাকে ছেড়ে দেই। যদি তার আইডি কার্ড ঝুলানো থাকত, তাহলে আমি তাকে ধরতাম না। যাই হোক, পরে তদন্ত (পুলিশ পরিদর্শক) স্যার এসে ঘটনা শোনেন। এসময় তার ফোন ফেরত দেওয়া হয়। স্যারের উপস্থিতিতে আমরা তার কাছে দুঃখপ্রকাশও করেছি। তবে তিনি হয়তো মনের ভেতরে ক্ষোভ রেখে দিয়েছেন। ঘটনার বিষয়ে আমার আর কিছু বলার নেই।
জানতে চাইলে তেজগাঁও থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহ আলম বলেন, একজন পুলিশ সদস্যের দায় সবার ওপর বর্তায় না। আর তার (এমদাদুল হক তুহিন) সঙ্গে অন্যায় করে থাকলে তিনি থানায় অভিযোগ করতে পারেন। আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।
এদিকে, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিক এমদাদুল হক তুহিনকে হয়রানির প্রতিবাদ জানিয়েছে বৃহত্তর ময়মনসিংহ রিপোটার্স ফোরাম (জিএমআরএফ) ও বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম (বিএজেএফ)। সংগঠন দুইটির মধ্যে এমদাদুল হক তুহিন জিএমআরএফের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং বিএজেএফের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
জিএমআরএফ সভাপতি কবির আহমেদ খান ও সাধারণ সম্পাদক রুকনুজ্জামান অঞ্জন এ ঘটনায় দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, ‘লকডাউন চলাকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে আরও দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত। কোনোভাবেই যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।’ তারা এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।
বিএজেএফ সভাপতি গোলাম ইফতেখার মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সাইদ শাহীন এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে পুরো ঘটনা তদন্ত করে দায়ী পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। বিএজেএফ নেতাদের প্রত্যাশ্যা— লকডাউন চলাকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে দায়িত্বশীল আচরণ করবে, যেন কোনোভাবেই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থির কাররণ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন না হয়।
সারাবাংলা/টিআর