প্রকল্প প্রস্তাবের গোড়ায়-ই গলদ, বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা!
৩০ জুন ২০২১ ১১:১৩
ঢাকা: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে বিদেশ ফেরত কর্মহীন শ্রমিকদের কর্মমুখী করতে প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন এবং টেকসই পল্লী উন্নয়নের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবের গোড়ায়-ই রয়েছে গলদ। কোনো ধরনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়াই প্রস্তাব করা হয়েছে ৯২৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকার একটি প্রকল্প। শুধুমাত্র অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে প্রকল্প তৈরি করায় বাস্তবায়ন সফল হবে কি না- তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ‘পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প-তৃতীয় পর্যায়’ শীর্ষক প্রকল্পের ক্ষেত্রে এ সব ঘটনা ঘটেছে।
সূত্র জানায়, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ২৫ কোটি টাকার বেশি প্রকল্পে অবশ্যই সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করতে হয়। কিন্তু প্রস্তাবিত এ প্রকল্পে তা করা হয়নি। তবে এর আগে বাস্তবায়িত পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) সফল বাস্তবায়নে অর্জিত অভিজ্ঞতা ও ইতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে নতুন এই প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে- ২২০টি উপজেলায় বিদ্যমান সমিতিসহ ২৩ হাজার ৩৩১টি পল্লী উন্নয়ন দল গঠন, সাত লাখ সদস্য রূপান্তর ও পুনর্গঠনের মাধ্যমে প্রকল্পভুক্তকরণ এবং ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মাধ্যমে বিদ্যমান ৬১ কোটি ১৩ লাখ ৭৭ হাজার টাকাসহ ২৫৯ কোটি ১৩ লাখ ৭৭ হাজার টাকার পুঁজি গঠন করা হবে। এছাড়া ২২০টি উপজেলা ও পল্লী উন্নয়ন দলের স্বনির্ভরতা অর্জন, উপকারভোগীদের যথাযথ উদ্ভুদ্ধকরণের মাধ্যমে প্রায় ৩০ লাখ পরিবেশবান্ধব ঔষধি, ফলজ ও বনজ বৃক্ষরোপন, মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে সুফলভোগীদের উৎপাদিত কৃষি ও অকৃষি পণ্য বিপণন সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করা, ক্ষুদ্র উদ্যোক্ত ঋণের মাধ্যমে ৭৫ হাজার ৯০০ জন উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং গ্রামীণ উন্নয়নে টেকসই ও উৎপাদনমুখী কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কোভিড-১৯ এর কারণে বিদেশ ফেরত কর্মহীন শ্রমিকদের কর্মমুখী করতে প্রশিক্ষণের পর ক্ষুদ্র ও উদ্যোক্তা ঋণ বিতরণ, ৭ লাখ লোকের আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং ২ লাখ ৬৪ হাজার নারীসহ ৩ লাখ ৩০ হাজার সুফলভোগীদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে সচেতন করে তোলা হবে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চাই প্রতিটি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা হোক। পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়) কতটা সফল হয়েছে সেটিরও একটি সমীক্ষার প্রয়োজন ছিল। হয়তো করাও হয়েছে। সেটি আমার জানা নেই। তবে নিয়ম অনুযায়ী ২৫ কোটি টাকার বেশি হলে সেই প্রকল্পের অবশ্যই সমীক্ষা পরিচালনা করা কথা। প্রস্তাবিত প্রকল্প সম্পর্কে নিশ্চয়ই পিইসি সভায় সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ১০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি)।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডের অধিকাংশ অঞ্চলই গ্রাম। পল্লী এলাকার দরিদ্র মানুষদের যথাযথ জীবিকায়নের মাধ্যমে সুষম পল্লী উন্নয়নের জন্য কৃষি ও অকৃষি ক্ষেত্রে টেকসই কর্মসংস্থানের সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য দেশের ৫টি বিভাগের ২৩টি জেলার ১৫২টি উপজেলায় ১৯৯৮ সালের জুলাই হতে ২০০৭ সালের জুন মেয়াদে পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প প্রথম পর্যায় সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়। পরবর্তী সময়ে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে প্রকল্পের কার্যক্রম ২০০৭ সালের জুলাই থেকে ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত সমাপ্ত প্রকল্পের আদলে নিজস্ব আয় দ্বারা কর্মসূচি হিসাবে বাস্তবায়িত হয়। এরপর পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প দ্বিতীয় পর্যায় ২০১২ সালের জুলাই হতে ২০১৮ সালের জুনে ১৯০টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হয়।
বর্তমানে প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুলাই হতে বিআরডিবির মাধ্যমে কর্মসূচি আকারে চলমান রয়েছে। ওই কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় দেশের গ্রামীণ নারী-পুরুষদের টেকসই দক্ষতা উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ ও আয়বর্ধনমূলক কার্যক্রমের জন্য মূলধন সহায়তা দিয়ে আত্ম-কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণের জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে এক হাজার ৩০১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২০ সালের জুলাই হতে ২০২৫ সালের ৩০ জুনে বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পটি পাঠানো হয়। পরে পিএসসি সভার মতামত পরিপালন করে শেষ পর্যন্ত ৯২৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকার প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) রমেন্দ্র নাথ পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, ‘দেশের আটটি বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলের দরিদ্র, অসহায়, সুবিধা-বঞ্চিত পরিবারের অব্যাহত শ্রমকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রচ্ছন্ন বেকারত্ব দূর করা, উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে পল্লীর জীবন জীবিকায় ইতিবাচক পরিবর্তনসহ দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য হ্রাস এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এসব কারণে প্রকল্পটি অনুমোদনযোগ্য।’
সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম
প্রকল্প প্রস্তাব বিদেশ ফেরত শ্রমিক শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়