বাবুল-মিতুর সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যেতে হবে মাগুরায়
৩০ জুন ২০২১ ১৮:১৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের দুই শিশু সন্তানকে চট্টগ্রামে পিবিআই কার্যালয়ে হাজিরের পরিবর্তে মাগুরায় গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন আদালত। মাগুরা সমাজসেবা কার্যালয়ে অথবা বিধিনিষেধের কারণে সেটা বন্ধ থাকলে মাগুরা সদর থানায় গিয়ে শিশু আইন কঠোরভাবে অনুসরণ করে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মিতু হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
শিশু আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ ফেরদৌস আরা বুধবার (৩০ জুন) এ আদেশ দিয়েছেন।
বাবুল আক্তারের স্ত্রীর মৃত্যুর ছেলের বয়স ছিল সাত বছর ও মেয়ের বয়স ছিল তিন বছর। তাদের মা মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় বাবুল গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে তারা দাদা আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া ও চাচা হাবিবুর রহমান লাবুর হেফাজতে আছেন। দুই শিশুকে জিজ্ঞাসাবাদের কয়েকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) চট্টগ্রাম মহানগরের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা।
গত ১৩ জুন বাবুল আক্তারের ছেলে ও মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চট্টগ্রাম নগরীতে পিবিআই কার্যালয়ে হাজিরের জন্য চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা সন্তোষ। আদালত তাদের ১৫ দিনের মধ্যে হাজিরের জন্য বাবুল আক্তারের বাবা ও ভাইকে নির্দেশ দেন।
কিন্তু গত ২৮ জুন হাবিবুর রহমান লাবু করোনা মহামারি ও বিধিনিষেধের কারণে বাবুল আক্তারের দুই সন্তানকে চট্টগ্রামে হাজিরে অপারগতার কথা উল্লেখ করে এবং শিশু আইন অনুসারে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশনা চেয়ে চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে আবেদন করেন। পরে তা শুনানির জন্য শিশু আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এ পাঠানো হয়। বুধবার এ আবেদনের ওপর আদালতের পূর্ণাঙ্গ শুনানি হয়েছে। এরপর শিশু আইন, ২০১৩ এর ৫৪ (৩) ধারা অনুযায়ী আদেশ দিয়েছেন।
লাবুর আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী সারাবাংলাকে জানান, শুনানির পর আদালত আদেশে বলেছেন- দুই শিশুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের বাড়ি মাগুরা জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয়কে উপযুক্ত স্থান হিসেবে নির্ধারণ করাকে যৌক্তিক বিবেচনা করেছেন আদালত। তবে বিধিনিষেধের কারণে সরকারি এই অফিস বন্ধ থাকলে মাগুরা জেলার সদর থানাকে বিকল্প স্থান হিসেবে নির্ধারণ করতেও বলেছেন আদালত।
‘সেক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিজের সুবিধামতো জিজ্ঞাসাবাদের সময় নির্ধারণ করতে পারবেন। তবে ধার্য তারিখের কমপক্ষে তিন দিন আগে শিশুদের হেফাজতকারী তার দাদা অথবা চাচাকে নোটিশ অথবা অন্য কোনো আইনগত মাধ্যমে বিষয়টি অবগত করতে হবে। অবগত হওয়ার পর দুই শিশুর দাদা ও চাচা তাদের হাজির করতে বাধ্য থাকবেন। অন্যথায় তারা আদালতের নির্দেশ অমান্য করেছেন মর্মে গণ্য হবেন এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তাকে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে শিশু আইন কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে বলে আদালত আদেশে উল্লেখ করেছেন।’- বলেন আইনজীবী ইফতেখার সাইমুল
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। ছেলের সামনেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।
স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর ওই বছরের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন প্রথম এই খুনে বাবুলের জড়িত থাকার সন্দেহ প্রকাশ করেন।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাত ঘুরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার তদন্তভার পড়ে পিবিআই’র ওপর। এরপর আস্তে আস্তে জট খুলতে থাকে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টিকারী চাঞ্চল্যকর এই মামলার।
গত ১১ মে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। তদন্তে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের লক্ষ্যে ১২ মে ওই মামলার ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পিবিআই।
একইদিন (১২ মে) দুপুরে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার বাকি সাত আসামি হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু, মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু এবং শাহজাহান মিয়া।
মামলা করতে এসে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করেছিলেন, চার বছর ধরে তাদের সঙ্গে মিতুর ছেলেমেয়েদের কোনো যোগাযোগ নেই। তারা নাতি-নাতনির মুখও দেখতে পারছেন না। বাবুল আক্তার ও তার পরিবারের সদস্যরা ইচ্ছাকৃতভাবে মিতুর ছেলেমেয়েদের তাদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন।
১২ মে বাবুল আক্তারকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে জবানবন্দি দেননি বাবুল আক্তার।
সারাবাংলা/আরডি/এসএসএ