কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকতা: টিআইবি
৩০ জুন ২০২১ ২১:১০
ঢাকা: বাজেট প্রস্তাবনায় না থাকার পরও অপ্রদর্শিত অর্থের মোড়কে কালো টাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ বহাল রেখে অর্থবিল ২০২১ পাসে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। নগদ টাকা থেকে শুরু করে সঞ্চয়পত্র, ব্যাংকে রাখা টাকা, প্লট ও ফ্ল্যাট কিংবা নতুন বিনিয়োগের জন্য দেওয়া সুযোগটিতে তথাকথিত বাড়তি কর ও নামমাত্র জরিমানা দেওয়ার বিধান করা হলেও, চূড়ান্ত বিচারে এটি দুর্নীতিবাজ ও এর পৃষ্ঠপোষকদেরকে মাল্যদানসম উপহার হিসেবে বিবেচনা করছে টিআইবি। কেননা বিনা প্রশ্নে দেওয়া এ সুযোগ কালো টাকার মালিকদের আরও অবৈধ অর্থ উপার্জনের আইনগত গ্যারান্টি হয়ে উঠতে যাচ্ছে, যেটি যেকোনো বিচারে নৈতিকতাবিরোধী, দুর্নীতিসহায়ক, বৈষম্যমূলক ও সংবিধান পরিপন্থি। বুধবার (৩০ জুন) এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা নিয়ে সরকার এবার রীতিমতো অশুভ চালাকির আশ্রয় নিয়েছে। কেননা ন্যায্যতা ও ন্যায়নিষ্ঠতার নামে অর্থমন্ত্রী যে বিষয়টি প্রথমে বিবেচনা করেননি, তা কোন নৈতিকতার বিচারে চূড়ান্তভাবে রেখে দিলেন, সে ব্যাখ্যা তিনি অর্থবিল পাসের সময়ও দেননি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এক্ষেত্রে বিতর্ক ও সমালোচনা এড়াতেই সুযোগটি প্রাথমিকভাবে বাজেটে কোথাও রাখা হয়নি। যদিও এ বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় শুরু থেকেই ছিল। এটি শুধু বাজেট প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেনি বরং সরকারের মাঝে জবাবদিহির সংস্কৃতি ক্রমেই বিলুপ্ত হওয়ার ইঙ্গিতও বহন করে। সরকারের এই পদক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতার’ অঙ্গীকারকে পদদলিত করছে।”
পাস হওয়া অর্থবিলে তালিকাভুক্ত শেয়ার, বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটসহ পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ, নগদ টাকা, ব্যাংক ডিপোজিটের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করতে ২৫ শতাংশ হারে কর এবং মোট করের ওপর ৫ শতাংশ জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এই হার ছিল ১০ শতাংশ। এছাড়া অঞ্চলভেদে জায়গা অনুপাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর ও জরিমানা দিয়ে জমি, ভবন, এপার্টমেন্ট কিনেও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে।
এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘কর ও জরিমানা নির্ধারণ করে সরকার যে বার্তাই দিতে চায় না কেন, এর ফলে যে অনৈতিকতা ও দুর্বৃত্তায়নের সুযোগ বর্ধিতমাত্রায় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করল তার বিনিময় মূল্য কোনোভাবেই তুলনীয় হতে পারে না। এতে সাময়িকভাবে কিঞ্চিৎ বেশি কর পাবার সুযোগ তৈরি হলেও, এর বিপরীতে দুর্নীতিগ্রস্ত স্বার্থান্বেষী শক্তির কাছে সরকারের যে নৈতিক পরাজয় ঘটল, তা সত্যিই শঙ্কিত হওয়ার মতো। সরকারের এই অবস্থান বৈষম্যমূলক, দুর্নীতিসহায়ক ও সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, যা কখনই কাম্য হতে পারে না।’
নতুন শিল্পকারখানা স্থাপনে মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা প্রসঙ্গে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে এমন সুযোগ আগে থেকে রাখা হলেও এর মাধ্যমে কত অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে কিংবা আদৌও হয়েছে কি-না তার কোনো হিসাব সরকার কখনও প্রকাশ করেনি। সরকার একদিকে কালো টাকার মালিকদের নতুন করে কালো টাকা তৈরির আইনি গ্যারান্টি দিচ্ছে, আর অন্যদিকে সৎ নাগরিকদের প্রলোভিত করছে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হতে।’
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম