‘দুর্যোগে বাংলাদেশের আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা অনুসরণীয়’
৩০ জুন ২০২১ ২১:১৬
ঢাকা: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন বলেছেন, একটা সময় ছিল যখন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশের লাখো মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এখন তা নেমে এসেছে একক সংখ্যায়। আর সেটা শুধুমাত্র সম্ভব হয়েছে মানুষের কাছে দুর্যোগের আগাম সর্তকবার্তা পৌঁছে দেওয়ার কারণে। দুর্যোগে বাংলাদেশের এই আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা এখন সমগ্র বিশ্বে সমাদৃত এবং অনুসরণীয়।
বুধবার (৩০ জুন) ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (ইউসিএল)-এ দুর্যোগ সতর্কীকরণ গবেষণা কেন্দ্রের (ওয়ার্নিং রিসার্চ সেন্টার) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থায় অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীনকে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা তুলে ধরার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে দুর্যোগ সচিব মো. মোহসীন বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ত্রাণ নির্ভর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার পরিবর্তে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আগাম সতর্কবার্তা প্রচার ব্যবস্থা শুরু করেন । উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবন ও সম্পদ বাঁচাতে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মাঝে প্রচারে সিপিপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে সিপিপি’র যাত্রা শুরু করেছিলেন, যারা আগাম সতর্ক সংকেত প্রচার এবং সন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষের জানমাল রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রেখে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক সংখ্যা ৭৬ হাজার ২০ জনে উন্নীত হয়েছে । এই স্বেচ্ছাসেবকদের ৫০ শতাংশই নারী ।
সচিব আরও জানান, পুরো দেশজুড়ে আধুনিক আবহাওয়ার রাডার এবং পূর্বাভাস ব্যবস্থা রয়েছে । উপকূলে ৫ হাজারের বেশি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দুর্যোগ বিষয়ে গবেষক, বিশেষজ্ঞদের কাছে এ খাতে বাংলাদেশের উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, জরুরি পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করে সচিব বলেন, সেই ঘূর্ণিঝড়ে ১০ লাখের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন । বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বে সাম্প্রতিককালে একই মাত্রার ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানি একক সংখ্যায় নেমে এসেছে ।
দুর্যোগ সতর্কীকরণ গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. কারিনা ফার্নলি বাংলাদেশের দুর্যোগ সতর্কীকরণ ব্যবস্থার সাফল্যের কারণ হিসেবে কার্যকর নীতি ও সবল প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, উন্নত প্রযুক্তি ও দক্ষ মানবসম্পদে সমৃদ্ধ সতর্কীকরণ কেন্দ্র, মানবতার সেবায় বলীয়ান প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক,পর্যাপ্ত সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র ও সমাজের সকলকে সম্পৃক্ত করে কাজ করার নীতির বিষয় উল্লেখ করেন । তিনি বাংলাদেশের আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত ও অনুসরণীয় বলেও মন্তব্য করেন ।
অনুষ্ঠানে ইউসিএল সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড ডিজাস্টারের পরিচালক অধ্যাপক মওরিন ফর্ডহ্যাম বলেন, দুর্যোগঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সকল পর্যায়ে নারীর নেতৃত্ব বিকাশের পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরি । বাংলাদেশের আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থায় নারীর নেতৃত্ব বিশেষভাবে প্রশংসার যোগ্য ।
আর্লি ওয়ার্নিং বিশেষজ্ঞ এলিস বেনেট বলেন, বিপূল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবকের অংশগ্রহণের কারণে বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি একটি বিরল উদাহরণ সৃষ্টি করেছে । এই প্রক্রিয়ায় দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলো তাদের দুর্যোগজনিত ক্ষয়ক্ষতি কমাতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে ।
এসময় অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা যুক্ত ছিলেন।
সারাবাংলা/জেআর/এসএসএ