জুনে মৃত্যু মে’র দেড় গুণ, সংক্রমণ আড়াই গুণের বেশি
১ জুলাই ২০২১ ১৮:৩৫
ঢাকা: গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের পর পেরিয়ে গেছে ৪৮০ দিন। এর মধ্যে করোনা সংক্রমণের গ্রাফ উঠেছে-নেমেছে। তবে সংক্রমণের প্রায় ১৬ মাস পার হওয়ার পর জুন মাসে দেখা গেছে এক মাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণ। এই মাসে যে পরিমাণ করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, তা গত এপ্রিলের তুলনায় কম হলেও মে মাসের তুলনায় আড়াই গুণেরও বেশি। করোনা সংক্রমণ নিয়ে জুন মাসে মৃত্যুর পরিমাণও এপ্রিলের চেয়ে কিছুটা কম, তবে এটি মে মাসের তুলনায় প্রায় দেড় গুণ।
শুধু তাই না, জুনের শেষ ১০ দিনে ৬১ হাজার ৮৬০ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। অথচ পুরো মে মাসে ৪১ হাজার ৪০৮ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। অর্থাৎ মে মাসের তুলনায় জুনের শেষ ১০ দিনেই সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে প্রায় দেড় গুণ।
এপ্রিলের পরে ভয়ংকর জুন মাস
দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের পরে দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক হিসেবে আগের সব সর্বোচ্চ পরিসংখ্যান ছাড়িয়ে যায় ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে। দেশে জানুয়ারিতে ২১ হাজার ও ফেব্রুয়ারিতে ১১ হাজারের ঘরে নেমে আসে কোভিড-১৯ সংক্রমণ। তবে মার্চে সংক্রমণ শনাক্ত হয় ৬৫ হাজারের বেশি। এপ্রিলে গিয়ে সেই সংক্রমণ প্রায় দেড় লাখে গিয়ে ঠেকে, যা এখন পর্যন্ত একমাসে সর্বোচ্চ। আবার এপ্রিলেই প্রথমবারের মতো একমাসে মৃত্যুও পেরিয়ে যায় দুই হাজার। এপ্রিলকে ছাড়িয়ে যেতে না পারলেও জুনে এসে সংক্রমণ ও মৃত্যু ছাড়িয়ে অন্য সব মাসকে। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত দেশে করোনা সংক্রমণের পর জুনেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে।
এপ্রিল, মে ও জুনের পরিসংখ্যান
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এ বছরের এপ্রিলে দেশে ৭ লাখ ৯৯ হাজার ১২৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয় সারাদেশে। এসব নমুনার মধ্যে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮৩৭টি নমুনায় করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ মাসে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ছিল ১৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আর এ মাসে করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা যান ২ হাজার ৪০৪ জন।
এরপর মে মাসে নমুনা পরীক্ষা থেকে শুরু করে সব পরিসংখ্যানই কমে আসে। এই মাসে ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৮০৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪১ হাজার ৪০৮টিতে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ মাসে করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা যান ১ হাজার ১৬৯ জন। আর নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার নেমে আসে ৮ দশমিক ৬৭ শতাংশে।
জুনে এসে মে মাসের তুলনায় সব পরিসংখ্যানই অনেকটা বেড়ে গেছে। এই মাসে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৬ লাখ ৬১ হাজার ৪১৪টি। এর মধ্যে ১ লাখ ১২ হাজার ৯৮৮টি নমুনায় করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এই সংখ্যা মে মাসের তুলনায় আড়াই গুণেরও বেশি। আর এই মাসে সংক্রমণের হার ছিল ১৭ দশমিক ০৮ শতাংশ, যা মে মাসের প্রায় দ্বিগুণ।
অন্যদিকে জুন মাসে করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু হয় ১ হাজার ৮৮৪ জনের। এই সংখ্যাও মে মাসে করোনায় মৃত্যুর প্রায় দেড় গুণ।
চলতি বছরের জুন মাসের শেষ ১০ দিনে দেখা যায় ২ লাখ ৮১ হাজার ১৯৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ মাসে দেশে ৬ লাখ ৬১ হাজার ৪১৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা যায় যা দেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষা এখন পর্যন্ত। ৩০ জুন দেশে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ দিন ৩৫ হাজার ১০৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ২৮ জুন দেশে নমুনা পরীক্ষা করা হয় ৩৫ হাজার ৫৯ জনের যা দেশে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষা পরিসংখ্যান।
জুন মাসেই সংক্রমণ, মৃত্যুর নতুন রেকর্ড
দেশে গত বছরের মার্চে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর একদিনে সর্বোচ্চ করোনা সংক্রমণ শনাক্ত এবং একদিনে করোনা সংক্রমণ নিয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যুর সাক্ষী হয়ে এই জুন মাসই।
এ বছরের ৭ এপ্রিল দেশে একদিনে ৭ হাজার ৬২৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল। সেটিই ছিল ওই দিন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্তের রেকর্ড। তবে ২৮ জুন এসে সেই রেকর্ড ভেঙে যায়। ওই দিন প্রথমবারের মতো সংক্রমণ শনাক্তের পরিমাণ ছাড়িয়ে যায় ৮ হাজারের ঘর, সংক্রমণ শনাক্ত হয় ৮ হাজার ৬৩৪ জনের মধ্যে। সেই রেকর্ড অবশ্য ভেঙে যায় একদিন পরই। জুনের শেষ দিন ৮ হাজার ৮২২ জনের শরীরে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়।
এদিকে, দেশে একদিনে করোনা সংক্রমণ নিয়ে শতাধিক মৃত্যুর ঘটনাও প্রথম ঘটে এপ্রিল মাসে। এর মধ্যে গত ১৯ এপ্রিল করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা যান ১১২ জন, যা ওই সময় পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ছিল। তবে গত ২৭ জুন ভেঙে গেছে সেই রেকর্ড। ওই দিন করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু হয় ১১৯ জনের। এছাড়া জুনের শেষ দিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া শতাধিক মৃত্যুও রয়েছে আরও কয়েকদিন।
সংক্রমণের হারও বেড়েছে
এদিকে, করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর পাশাপাশি নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হারও অনেকটা বেড়েছে জুনের শেষ কয়েকটি দিনে। এর মধ্যে জুনের শেষ দিনে সংক্রমণের এই হার ছিল ২৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি চারটি নমুনার একটি করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। প্রায় একবছর আগে, গত বছরের ১৫ জুলাই ২৫ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল। এরপর এই প্রথম সংক্রমণের হার ২৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, এর চেয়ে বেশি হারে সংক্রমণ শনাক্তই হয়েছে মাত্র ছয় দিন।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর