কঠোর বিধিনিষেধেও অপ্রয়োজনে রাস্তায় মানুষ, মামলা-জরিমানা পুলিশের
১ জুলাই ২০২১ ১৩:৫০
ঢাকা: সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় লোকজন ও যানবাহন চলাচল থেমে নেই। এ সময় যাতে অপ্রয়োজনে লোকজন ও যানবাহন বের না হতে পারে সেজন্য রাজধানীর প্রতিটি মোড়ে বসানো হয়েছে পুলিশ চেকপোস্ট। সেই সঙ্গে প্রতিটি রাস্তায় জোরদার করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল। তারপরেও উৎসুক মানুষদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এদের বেশিরভাগই অপ্রয়োজনে বের হচ্ছেন। কেউবা বের হচ্ছেন লকডাউন কেমন হচ্ছে তা দেখার জন্য। আবার অনেকে বাইক নিয়ে ফাঁকা রাস্তায় ঘুরতে বের হচ্ছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তা কঠোরভাবে দমনের চেষ্টা করছেন।
কঠোর বিধিনিষেধের প্রথমদিন বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) রাজধানীর মতিঝিল, আরামবাগ, ফকিরাপুর, রাজারবাগ, দৈনিক বাংলা, পল্টন, কমলাপুর, শান্তিনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিটি মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চেকপোষ্ট বসিয়ে পায়ে হাঁটা ও যানবাহনে চলা লোকজনদের বাইরে বের হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করছেন। এদের মধ্যে যারা সুনির্দিষ্ট কারণে কিংবা দরকারে বের হয়েছেন তাদের চলাচলে কোনো বাধা দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু যারা বিনা কারণে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হচ্ছেন তাদের মামলা দেওয়া হচ্ছে এবং জরিমানা করা হচ্ছে। চেকপোস্টে জিজ্ঞাসাবাদের কবলে পড়া লোকজনের বড় অংশই অপ্রয়োজনে বের হচ্ছেন।
এদিকে লকডাউনে খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন দোকানপাঠ খোলা রাখার কারণে অপ্রয়োজনে অনেক লোকজন এসব জায়গায় আড্ডা দিচ্ছেন। খাবারের দোকানগুলোতে কেবল পার্সেলে খাবার বিক্রির অনুমতি থাকলেও বেশিরভাগ লোকজন হোটেলে বসে খাবার খাচ্ছেন। এই অপরাধে পুলিশ বেশ কয়েকটি হোটেলের ম্যানেজারকে জরিমানা করেছেন। এছাড়া এই অভিযোগে রাজধানীর ফকিরাপুলের ডিআইটি রোডের হোটেল সৌখিন ও প্রিন্স রেস্তোরার ম্যানেজারকে আটক করেছে মতিঝিল থানা পুলিশ।
এদিকে রাস্তায় প্রচুর রিকশা চলছে। প্রতিটি মোড়ে প্রচুর সংখ্যাক রিকশাচালক যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন মোড়ে ভ্যান চালকদের বসে অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের পাশাপাশি দিনমজুরদেরও দা-কোদাল নিয়ে ফুটপাতে কাজের জন্য বসে থাকতে দেখা গেছে। হোটেল-রেস্টুরেন্ট ও কাঁচাবাজার খোলা থাকলেও কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। তবে প্রশাসনের সর্বাত্মক তৎপরতা দেখা গেছে রাজধানীর পথে পথে।
মতিঝিল শাপলা চত্বরে চেকপোস্টে দায়িত্ব পালন করা পুলিশ সার্জেন্ট এনাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘যারা বের হওয়াদের একটা বড় অংশই বিনা কারণে বের হচ্ছেন। আমরা বিনা কারণে বের হওয়া লোকজনকে জরিমানা করছি। অনেকে বিনা কারণেই গাড়ি নিয়ে বের হয়েছেন। তাদের নামে মামলা দিচ্ছি। আর যারা সুনির্দিষ্ট কারণে বের হয়েছেন তাদের কোনো বাধা দেওয়া হচ্ছে না।’
মতিঝিল থানার এসআই শফিক আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘হোটেল বসে খাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কেউ কেউ তা মানছে না। এই কারণে এই দুই হোটেলের ম্যানেজারকে আটক করে মতিঝিল থানায় নেওয়া হয়েছে। কোনো হোটেলে বসে কাউকে খেতে দেওয়া হচ্ছে না।’
এদিকে অফিস-আদালত বন্ধ থাকায় রাস্তায় প্রচুর রিকশা চলাচল করলেও যাত্রীর সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক কম। ফলে অধিকাংশ রিকশাচালক রাস্তায় বসে অলস সময় কাটাচ্ছে। তবে কঠোর বিধিনিষেধে ভ্যান চালকদের অবস্থা বেশি খারাপ। তাদের প্রত্যেকেই বলতে গেলে অলস সময় কাঠাচ্ছেন।
মতিঝিলের গরম পানির গলিতে থাকেন ভ্যানচালক মোস্তফা। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আজ মাসের ১ তারিখ। এই সময় প্রচুর মানুষ বাসা বদল করে। কিন্তু লকডাউনের কারণে এবার তা হচ্ছে না। ফলে কোনো আয়-রোজগার নেই। সরকারের উচিত আমাদের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করা।’
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম