চট্টগ্রামের রাস্তায় লোকজন কম, পাড়ায় পাড়ায় জটলা
১ জুলাই ২০২১ ১৫:০৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: মূল রাস্তার আশপাশে দোকানপাট বন্ধ ও লোকজনের চলাচল সীমিত। রিকশা ছাড়া অন্য তেমন কোনো যানবাহন নেই। কিন্তু, পাড়ায়-অলিগলিতে লোকজনের ‘অহেতুক জটলা’ আছে। আবার শহরতলী থেকে নগরীতে লোকজন প্রবেশও করছেন।
পুলিশ ও সেনাবাহিনীর চেকপোস্টে সুনির্দিষ্ট কারণ জানাতে পারলে ছাড় মিলছে। প্রচার-প্রচারণার পরও মুখে মাস্ক কিংবা স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না অনেকের মধ্যেই।
বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) দেশব্যাপী আরোপিত কঠোর বিধিনিষেধের প্রথমদিনে এমন ছিল বন্দরনগরীর চিত্র। সেনাবাহিনী এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তেমন কড়াকড়ি দেখা যায়নি।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওষুধ এবং খাবারের দোকান ছাড়া শহরে অন্য কোনো দোকানপাট খোলা নেই। জরুরি প্রয়োজনে কিছু লোক বের হচ্ছে। তারা আমাদের চেকপোস্টে কিংবা টহল টিমের কাছে যথাযথ কারণ দেখাচ্ছেন। প্রয়োজন হচ্ছে না, তাই আমরা আপাতত কঠোর হচ্ছি না। প্রয়োজনে অবশ্যই কঠোর হব। অলিগলিতে কিছু মানুষ অহেতুক বের হচ্ছেন বলে জানতে পেরেছি। থানার টহল টিমগুলোকে এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটাও বন্ধ হয়ে যাবে।’
চট্টগ্রাম সেনানিবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, লকডাউন নিশ্চিত করতে সরকারি নির্দেশে সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের অধীনে ২৮টি টহল টিম চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে টহল কার্যক্রম জোরদার ও চেকপোষ্ট স্থাপন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) সকাল ৭টা থেকে সেনাবাহিনী চট্টগ্রাম নগরীতে টহল দিতে শুরু করেছে। একইসঙ্গে, চেকপোস্টেও দায়িত্ব পালন করছে তারা।
এছাড়াও, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ছয়টি চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। মোতায়েন রয়েছে তিন শতাধিক অতিরিক্ত পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই নগরীর সিটি গেইট এলাকায় সীতাকুণ্ড থেকে পায়ে হেঁটে অথবা কার-মাইক্রোবাসে করে অনেককে নগরীতে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। তাদের অনেকেই সিটি গেইট সংলগ্ন কাছাকাছি এলাকায় বসবাস করেন এবং বিভিন্ন কলকারখানায় চাকরি করেন। চেকপোস্টে দায়িত্বরত সেনাসদস্যদের অফিসের পরিচয় পত্র দেখানোর পর তাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। একইভাবে ছাড় মিলছে জরুরি পণ্য ও শিল্প-কারখানার শ্রমিকবাহী গাড়িগুলোও।
সিটি গেইট এলাকায় চেকপোস্টে দায়িত্বরত ক্যাপ্টেন রিসালা মাশরুর মোশাররফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘অনেক লোকজন এবং গাড়ি আসছে। যারা পরিচয়পত্র দেখাতে পারছেন কিংবা সুনির্দিষ্ট কারণ বলতে পারছেন তাদের আমরা যেতে দিচ্ছি। অন্যদের আমরা ফেরত দিচ্ছি। মানুষজনকে বুঝিয়ে যতটুকু করা যায়, ততটুকু আমরা করছি।’
অন্যদিকে, দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে নগরীর প্রবেশপথ শাহ আমানত সেতু এলাকায় মোটর সাইকেল, প্রাইভেট সিএনজি অটোরিকশা করে লোকজনকে শহরে ঢুকতে দেখা গেছে। এদের অনেকেই কর্ণফুলী ও পটিয়া উপজেলার লোকজন। শহর সংলগ্ন বোয়ালখালী উপজেলা থেকেও লোকজন হেঁটে কালুরঘাট সেতু পার হয়ে প্রবেশ করেছেন নগরীতে। তবে সবাইকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর চেকপোস্টের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়েছে।
শাহ আমানত সেতু এলাকায় চেকপোস্টে দায়িত্বরত মেজর আবদুল্লাহ আল মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজনেই অধিকাংশ লোকজন ঢুকছেন। আমরা সর্বোচ্চ সহানুভূতি ও মানবিকতা প্রদর্শন করছি। যারা প্রয়োজনে আসছেন তাদের জন্য কোনো বাধা নেই। কিন্তু অন্যদের আমরা অ্যালাউ করতে পারছি না। তাদের আমরা প্রাথমিকভাবে সতর্ক করছি।’
রাতভর টানা বৃষ্টির পর বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর অনেক নিচু এলাকা জলমগ্ন ছিল। এজন্য খোলা থাকা কলকারখানার শ্রমিক-কর্মজীবীদের সকালে কর্মস্থলে যাবার জন্য বের হতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। তবে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিস, আদালত বন্ধ থাকায় বৃহস্পতিবার সড়কে শ্রমিক-কর্মচারির সংখ্যা কম ছিল। অনেকে কারখানা কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় বাস-মাইক্রোবাসে করে, আবার অনেককে রিকশায় করেও কর্মস্থলে যেতে দেখা গেছে।
নগরীর আন্দরকিল্লা, কাজির দেউড়ির মোড়, ওয়াসা মোড়সহ আশপাশের এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে সড়ক মূলত রিকশার দখলে। মাঝে মাঝে কিছু মোটর সাইকেল, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার দেখা গেছে। তবে সংখ্যায় খুবই কম। হেমসেন লেইন কাঁচাবাজারে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব অনুসরণের কোনো ব্যবস্থাই দেখা যায়নি। সড়কে বের হওয়া অনেকের, বিশেষ করে রিকশাচালকদের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। বিভিন্ন চেকপোস্টে মাস্কবিহীন লোকজন দেখলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের মাস্ক দেওয়া হয়েছে।
নগরীর সার্সন রোডের মুখে কথা হয় রিকশাচালক জসিমের সঙ্গে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘মুখে মাস্ক দিয়ে রিকশা চালাতে গেলে খুব সমস্যা হয়। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। সেজন্য মাস্ক খুলে পকেটে রাখি।’
অপরদিকে, সরকারি কঠোর বিধিনিষেধ প্রতিপালন বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ৯ জন ম্যাজিস্ট্রেট বিভিন্ন এলাকায় টহলে আছেন। দুপুর পর্যন্ত কোনো মামলা বা বড় কোনো পদক্ষেপের খবর পাওয়া যায়নি। লোকজন ঘরবন্দিই আছেন। অলিগলিতে যারা বের হচ্ছেন তাদের প্রথমে সচেতন করা হবে। এরপরও বিনা কারণে কেউ বের হলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
কঠোর বিধিনিষেধের নির্দেশনা না মেনে বিনা প্রয়োজনে বের হওয়া ২১ জনকে নগরীর আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড় থেকে আটক করে ডবলমুরিং থানা পুলিশ। পরে মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় বলে ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন জানিয়েছেন।
চট্টগ্রামে কঠোর বিধিনিষেধের নির্দেশনা বাস্তবায়নের ব্যাপারে সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘আপাতত সুন্দরভাবে লকডাউন চলছে। আমরা বড় ধরনের কোনো মামলা বা গ্রেফতারের দিকে এখনও যাইনি। আশা করি, নগরবাসী সরকারের নির্দেশনা মেনে ঘরে থাকবেন।’
সারাবাংলা/আরডি/একেএম