Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকার সড়কে সেনা টহল, পুলিশের কড়াকড়ি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১ জুলাই ২০২১ ১৭:০০

ঢাকা: করোনাভাইরাসের কঠোর বিধিনিষেধের প্রথম দিনে রাজধানীর সব সড়কে সেনাবাহিনী ও পুলিশের টহল ছিল। বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) সকালে রাজধানীর অন্যান্য এলাকার মতোই মিরপুর রোডের সোবহানবাগ, ধানমন্ডির পুরাতন ২৭ নম্বর, আসাদ গেট, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, শ্যামলী, কল্যাণপুর, টেকনিক্যাল মোড় ও গাবতলী এলাকায় সেনাবাহিনী ও পুলিশের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে পুলিশের কড়াকড়ি অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে একটু বেশি। এদিন রাস্তায় লোক চলাচলও ছিল খুবই কম। যদিও কিছু কিছু রিকশা, পণবাহীবাহী যানবাহন ও রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সের চলাচল ছিল প্রায় স্বাভাবিক।

সকালে শ্যামলীর শিশুমেলার ফুটপাত ধরে একদল শ্রমিককে মাটিকাটার দোদাল-টুপড়ি নিয়ে হেঁটে যেতে দেখা যায়। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে সালাম নামের একজন জানান, গাবতলী এলাকায় একটি নির্মাণাধীণ ভবনে কাজ করতেন। তবে আজ মালিক বলেছে করোনার জন্য মালামাল আনতে পারেনি। এ জন্য কাজ কয়েকদিন বন্ধ থাকবে। কতদিন বন্ধ থাকবে তা মালিক বলেনি। কাজ নেই তাই বসিলায় (সেখানে ভাড়া বাসায় থাকেন) ফিরে যাচ্ছেন বলে জানান তারা।

সাড়ে ১০টার দিকে গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, টেকনিক্যাল মোড় থেকে আমিনবাজার সেতু পর্যন্ত চারটি চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। এ সময় প্রতিটি টেকপোস্টে লোকজনকে থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতেও দেখা গেছে।

আমির বাজার সেতুর পূর্ব প্রান্তে ট্রাফিক পুলিশের দুটি চেকপোস্ট দেখা যায়। সেখানে দায়িত্বপালনরত ট্রাফিক পরিদর্শক পলাশ সরকারের সঙ্গে কথা হয়।

ট্রাফিক পুলিশের সারাবাংলাকে বলেন, ‘টেকনিক্যাল মোড়ের পর থেকে আমিন বাজার সেতুর পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত এলাকায় চারটি চেক পোস্ট বসানো হয়েছে। সকালে থেকে আমরা এ এলাকায় কাজ করছি। লোকজন যেন অকারণে সড়কে ঘোরাফেরা না করে সে জন্য আমরা কাউকে সন্দেহ হলে বাইরে বের হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করছি। এ ছাড়া প্রতিটি গাড়ি চেক করা হচ্ছে। যদিও রাস্তায় স্বল্প সংখ্যক যানবাহন চলাচল করছে। যেসব গাড়ি চলাচল করছে তাদের সুনির্দিষ্ট কারণ দেখাতে না পারলে ওইসব গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া অপ্রয়োজনে যারা বের হয়েছে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’

আমিন বাজার সেতুর পূর্ব প্রান্তের সড়কের পাশে বিষণ্ন মনে রিকশা নিয়ে বসে থাকা রিকশাচালক নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে, ‘খেপ নাই, খামু কী! কিছুদিন আগে সাতক্ষীরা থেকে আইছি। আজকে রিকশা চালিয়ে পুষাবে না। সড়কে রিকশা চালালি খালি খালি পুলিশ জিজ্ঞেস করে আবার অনেক সময় যাত্রী নামিয়ে দেয়। তখন আর ভাড়া পাইনে।’

গাবতলী বাসস্টেন্ডের সামনে দায়িত্বপালনরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য শফিকুল সারাবাংলাকে জানান, সকাল থেকে রাস্তায় যানবাহন ও লোকজনের চলাচল কম। দীর্ঘদিন ধরে টার্মিনাল বন্ধ। এ ছাড়া রাস্তায় অপ্রয়োজনে কাউকে ঘোড়াফেরা করতে দেখলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

দারুস সালামের টেকনিক্যাল মোড়ে দায়িত্বপালনরত উপ-পরিদর্শক রিয়াজ জানান, ঢাকা শহরের অন্যান্য এলাকার মতো এখানেও চেকপোস্টে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। বিনা প্রয়োজনে যেসব যানবাহন চলাচল করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সেনাবাহিনীর টহল অব্যাহত আছে। আবার কিছুদূর সামনে (মিরপুরের দিকে) ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো হয়েছে।

দারুস সালাম এলাকায় সাড়ে ১১ টার দিকে একদল মানুষের জটলা দেখে কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে তারা জানায়, তাদের বেশিরভাগ লোক সিটি করপোরশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে কাজ করে। আবার কয়েকজন জানান, তারা পাতাল রেল প্রকল্পে কাজ করেন। এ সময় সেখানে মাস্ক ছাড়াও কয়েকজনকে দেখা যায়। সেনাবাহিনীর টহল গাড়ির চলাচল দেখে তাদের অনেককে তাড়াহুড়া করে চলে যেতে দেখা গেছে।

আগারগাঁওয়ের পঙ্গু হাসাপাতাল, শিশু হাসপাতাল, যক্ষ্মা হাসপাতাল, মানসিক হাসপাতাল, হৃদরোগ হাসপাতাল, কিডনি হাসপাতাল এবং সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় অন্যান্য দিনের মতোই মানুষের চলাচল স্বাভাবিক দেখা গেছে।

তবে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনের রাস্তায় রিকশা চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। ওই এলাকায় বসানো চেকপোস্টে প্রতিটি গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে।

শ্যামলীর মুদি দোকানি সাইফুল সারাবাংলাকে বলেন, ‘দোকান খুলে বসে আছি। কাস্টমার নাই। বেচা-কেনাও নাই। মানুষ যদি ঘরে থাকে তাহলেই করোনার সংক্রমণ কমবে। আমরাও চাই মানুষ সরকারের বিধি নিষেধ মেনে চলুক। আগে বাঁচতে হবে। তারপর আয়-রোজগার করা যাবে।’

মিরপুরোড়ের আসাদগেট, সংসদ ভবন এলাকা, সোবহানবাগ, ধানমন্ডি পুরাতন ২৭ নম্বর এলাকার সর্বত্রই পুলিশ কড়াকড়ি চোখে পড়েছে। প্রতিটি চেকপোস্ট যানবাহন থামিয়ে পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা যায়। আবার কিছুক্ষণ পর পর সেনাবাহিনীর টহল গাড়ি ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে দুপুর ১টার পর থেকে রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা ও মানুষের চলাচল সকালের তুলনায় কিছুটা বেশি দেখা গেছে।

সারাবাংলা/কেআইএফ/একে

করোনা কোভিড-১৯ টপ নিউজ নভেল করোনাভাইরাস বিধিনিষেধ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর