Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২ ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণকারীর সংক্রমণ ও মৃত্যুঝুঁকি কম পাওয়া গেছে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১ জুলাই ২০২১ ২০:০২

ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম ব্যুরো : করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সংক্রমণের হার কম। আক্রান্ত হলেও তাদের মৃত্যুঝুঁকি কম। দুই ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণের পর আক্রান্ত হলেও তাদের মধ্যে ভালো অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ায় স্বাস্থ্যগত তেমন কোনো জটিলতাও নেই। চলমান সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের অধিকাংশই করোনার কোনো ভ্যাকসিন পাননি অথবা প্রথম ডোজ পেয়েছেন।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) একদল গবেষক চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ে করোনায় আক্রান্তদের ওপর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে এই ফলাফল পেয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য গৌতম বুদ্ধ দাশের নেতৃত্বে সিভাসুর অধ্যাপক শারমিন চৌধুরী, চিকিৎসক মোহাম্মদ খালেদ মোশাররফ হোসেন, ইফতেখার আহমেদ, ত্রিদীপ দাশ, প্রনেশ দত্ত, সিরাজুল ইসলাম ও তানভীর আহমদ নিজামী এই গবেষণা করেন।

সিভাসুর উপাচার্য গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, ‘দুই মাস ধরে গবেষণায় আমরা পেয়েছি যে, যারা করোনার দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাদের মধ্যে করোনা মোকাবিলার ভালো শক্তি তৈরি হচ্ছে। তাদের মধ্যে আক্রান্তও কম। সুতরাং ভ্যাকসিনের বিকল্প নেই।’

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত ২২ এপ্রিল থেকে ২২ জুন পর্যন্ত দুইমাসের মধ্যে সিভাসু ও চাঁদপুর কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ ল্যাবে মোট ১২ হাজার ৯৩৬ ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করা হয়। চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর অঞ্চলের এসব ব্যক্তির মধ্যে অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন গ্রহণকারী যেমন আছেন, ভ্যাকসিন গ্রহণ না করা ব্যক্তিও আছেন।

নমুনা পরীক্ষা করা ১২ হাজার ৯৩৬ জনের মধ্যে ২ হাজার ১৩৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী সংক্রমণের হার ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ। আক্রান্ত ২ হাজার ১৩৭ জনের মধ্যে ১ হাজার ৯৫ জনের স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট তথ্য ও উপাত্ত সম্পূর্ণরূপে পর্যবেক্ষণ করে গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

বিজ্ঞাপন

গবেষণায় পাওয়া ফলাফলে দেখা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে ৯৬৮ জন করোনার কোনো ভ্যাকসিনই গ্রহণ করেননি। আক্রান্ত ৬৩ জন শুধুমাত্র প্রথম ডোজ নিয়েছেন। ৬৪ জন ভ্যাকসিনের দুই ডোজই গ্রহণ করেছেন। নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের আক্রান্তের হার শূন্য দশমিক ৪৮ শতাংশ। উভয় ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের আক্রান্তের হার শূন্য দশমিক ৪৯ শতাংশ।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ভ্যাকসিন না নেওয়া ৯৬৮ জন রোগীর মধ্যে ১৩৭ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। তাদের ৮৩ জনের মধ্যে শ্বাসকষ্ট ছিল এবং ৭৯ জনকে অতিরিক্ত অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে হয়েছে। তাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশনের মাত্রা ছিল ৭০ শতাংশের মতো। তাদের সাতজনকে আইসিইউ সেবা দিতে হয়েছে।

পক্ষান্তরে শুধুমাত্র প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের মধ্যে ৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। উভয় ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৬ দশমিক ৭ শতাংশ অর্থাৎ স্বাভাবিক পাওয়া গেছে। তাদের আইসিইউ সেবার প্রয়োজন হয়নি।

গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত রোগীদের মধ্যে মোট ১০ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে কেউই ভ্যাকসিন নেননি এবং তাদের বয়স পঞ্চাশের বেশি বলে গবেষণায় এসেছে।

এ ছাড়া গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ভ্যাকসিন না নেওয়া ৭৬ দশমিক ৭ শতাংশ ব্যক্তি আক্রান্তের আগে থেকেই বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। অন্যদিকে ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের মধ্যে এ হার ছিল মাত্র ১২ শতাংশ।

গবেষকদের মতে, দেশের জনগোষ্ঠীর বড় অংশকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা গেলে দেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকানো যাবে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের কোভিড-১৯ বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মো. আবদুর রব সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভ্যাকসিনের দুই ডোজ নেওয়ার পরও আক্রান্ত হয়েছেন এমন রোগী পেয়েছি। তবে তাদের শারীরিক জটিলতা ভ্যাকসিন না নেওয়া রোগীদের মতো নয়। ভ্যাকসিনের প্রতি মানুষের আগ্রহ তৈরি করতে এই গবেষণা ভূমিকা রাখবে।’

এর আগে, সিভাসুর গবেষক দল করোনার প্রথম ডোজ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সংক্রমণ ও শারীরিক জটিলতা নিয়ে গবেষণা করেছিলেন।

সারাবাংলা/আরডি/একে

করোনা করোনার ভ্যাকসিন করোনার সংক্রমণ কোভিড-১৯ টপ নিউজ দুই ডোজ ভ্যাকসিন নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর