Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যাত্রীবাহী গাড়ি নেই, গরু ও পণ্যবাহী ট্রাকের দখলে মহাসড়ক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২ জুলাই ২০২১ ০০:৫১

ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে শুরু হয়েছে এক সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ। এর প্রথম দিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দেখা যায়নি কোনো যাত্রীবাহী গণপরিবহন। তবে পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মহাসড়কে চলেছে দিনভর। ঈদুল আজহা সামনে রেখে গরু বহনকারী ট্রাকও চোখে পড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। এ অবস্থায় রিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সিএনজি অটোরিকশায় করেই চলাচল করতে দেখা গেছে জনসাধারণকে।

বিজ্ঞাপন

হাইওয়ে পুলিশ বলছে, সড়কে গণপরিবহন চলতে না দেওয়ার বিষয়ে তারা বদ্ধপরিকর। স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করে যাত্রীবাহী কোনো গাড়ি যেন না চলতে পারে, তা কঠোরভাবে মনিটরিং করছেন তারা। অন্যদিকে গরু বহনকারী ট্রাকগুলো যেখানে সেখানে থেমে যেন বেচাকেনা করতে না পারে, সেদিকেও কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে।

কঠোর বিধিনিষেধের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের প্রবেশপথ বলে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ জেলার সাইনবোর্ড এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও আনসার বাহিনীর সদস্যদের দেখা যায় দায়িত্ব পালন করতে। এদিন সকাল থেকে জরুরি প্রয়োজনে কর্মস্থলে যাওয়ার উদ্দেশে বের হওয়া যানবাহন বাদে অন্যান্য গাড়ির উপস্থিতি ছিল কম। রাস্তায় রিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা দেখা গেলেও সিএনজিচালিত অটোরিকশার পরিমাণও ছিল কম।

সরেজমিনে ঢাকা-কাঁচপুর মহাসড়ক পার হয়ে দেখা যায়, পণ্যবাহী বিভিন্ন গাড়ি চলাচল করছে। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জামালপুর থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে গরু নিয়ে যাচ্ছিলেন আবদুল হাকিম নামে একজন বিক্রেতা। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, প্রতিবছর চট্টগ্রামের সাগরিকায় পশুর হাটে আমি গরু বিক্রি করতে যাই। এবারও তাই গতকাল রওনা দিয়েছি। আজ চট্টগ্রাম পৌঁছাব।

রাস্তায় গরু বহনকারী উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ট্রাকের পাশাপাশি ছিল জরুরি পণ্যবাহী গাড়ি হিসেবে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান। তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় এদিন সড়কে এসব ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের সংখ্যা কম ছিল বলে মনে করছেন গৌরীপুর ট্রাক স্ট্যান্ডের নূরজাহান হোটেলের মালিক সোহেল মিয়া।

তিনি সারাবাংলাকে বলেন, অন্যান্য সময় এই সময়ে (বিকেল ৩টা) প্রচুর গাড়ির লোকেরা আমার এখানে ভাত খেত। আজকে সেই সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। অন্যান্য বছর এই সময়ে কোরবানির গরু নিয়ে যাওয়া ট্রাকও থাকত প্রচুর। সেই তুলনায় রাস্তায় গাড়ি অনেক কম। তাই আমার বেচাবিক্রিও তেমন নেই বললেই চলে।

বিজ্ঞাপন

কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের সুপার মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, আমরা এবার সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ সফল করার জন্য প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছি। রাস্তায় যেন কেউ স্বাস্থ্যবিধি ভেঙে চলাচল করতে না পারে, সে বিষয়ে নজরদারি করা হচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে রাস্তায়। সিএনজিচালিত অটোরিকশা রাস্তায় তেমন নেই। জরুরি পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করছে কিছু। কোরবানির পশুর হাটের জন্য কিছু গাড়ি চলাচল করলেও সেগুলো যেন যেখানে সেখানে নামতে না পারে, তা নজরদারি করা হচ্ছে। একইসঙ্গে ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর হাট সামনে রেখে আমাদের বিভিন্ন পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুতই তা সবাইকে জানাতে পারব।

এর আগে, এদিন সকালে থেকেই সাইনবোর্ড এলাকায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেজা মাসুম প্রধান ও আব্দুল জব্বার স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে নানা তৎপরতা চালান। এ সময় পুলিশবাহিনীর সদস্যরা ছাড়াও উপস্থিত ছিল আনসার ও বিজিবির সদস্যরা।

পরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী হাকিম রেজা মাসুম প্রধান সারাবাংলাকে বলেন, সরকার নির্দেশিত কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া কাউকেই রাস্তায় অবাধে চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। যারা সরকার নির্দেশিত অফিস বা অন্যান্য স্থানে চাকরির জন্য যাচ্ছেন, তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়াও পণ্যবাহী যানবাহন ছাড়া অন্যান্য যানবাহনের সবাইকে কোথায় যাচ্ছে ও কেন যাচ্ছে তা জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে মানুষকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে আমরা চেষ্টা করছি যেন অপ্রয়োজনে কেউ বাইরে এসে স্বাস্থ্যবিধি না ভাঙেন। এই সময়ে যেন কেউ জীবাণু বোমা হয়ে বাসায় প্রবেশ না করেন, সে বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।

এদিন দুপুর ১২ টার দিকে সাইনবোর্ড মোড়ে দাঁড়িয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন যানবাহনের চালকদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিশ্চিত করতে নানা তৎপরতা চালান। এসময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী হাকিম মাহমুদা জাহান। এখানে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় দু’জনকে আর্থিক জরিমানা করা হয়।

হাকিম মাহমুদা জাহান সারাবাংলাকে বলেন, দেশে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে ও জনগণকে নিরাপদে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর বিধিনিষেধের নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এ জন্য নারায়ণগঞ্জে ৩ পেট্রোল সেনাবাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছে। কেউ যেন স্বাস্থ্যবিধি ভেঙে রাস্তায় অবাধে চলাচল করতে না পারে সেদিকে কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে।

এদিকে, ঢাকা-ফেনী ও ফেনী-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যেন অপ্রয়োজনে কেউ বাইরে বের না হতে পারেন, সেজন্য জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফেনীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান।

তিনি সারাবাংলাকে বলেন, শুধুমাত্র ফেনী শহরই নয়, বরং অন্যান্য স্থানেও যেন কেউ অপ্রয়োজনে চলাচল না করে সে বিষয়ে আমরা নজরদারি করছি। আমি নিজেই সকাল থেকে বিভিন্ন স্থানে গিয়েছি। এছাড়াও এখানে স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সঙ্গে নিয়েই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে। অপ্রয়োজনে যেন কেউ বাইরে চলাচল করতে না পারে সেজন্য পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা ছাড়াও অন্যান্যরা সাহায্য করছেন। একইভাবে মহাসড়কেও নজরদারি করা হচ্ছে প্রশাসনিকভাবে। ভবিষ্যতেও আমরা এভাবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যেতে চাই।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

কঠোর বিধিনিষেধ গরুর ট্রাক টপ নিউজ পণ্যবাহী ট্রাক বিধিনিষেধ মহাসড়ক

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর