অক্সিজেন সরবরাহে সংকট, মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ৭
২ জুলাই ২০২১ ১২:২৭
বগুড়া: বগুড়ায় করোনাভাইরাসের বিশেষায়িত সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। এই হাসপাতালে শ্বাসকষ্টের সমস্যাজনিত রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহে মাত্র দুইটি হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা রয়েছে। এ অবস্থায় সংকটাপন্ন রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অবশ্য কেবল মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল নয়, বগুড়ায় করোনা ডেডিকেটেড শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) ও ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস) হাসপাতালেও হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার সংকট রয়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয় বলছে, হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার চাহিদার কথা জানালেও তা পাওয়া যাচ্ছে না।
এ অবস্থায় আজ শুক্রবার (২ জুলাই) সকাল ৯টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরাই জানিয়েছেন, শ্বাসকষ্টজনিত কারণে তারা মারা গেছেন। পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারত।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য বলছে, মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের ধারণক্ষমতা ২০০ রোগী হলেও শুক্রবার সকালের তথ্য বলছে, সেখানে রোগী ভর্তি আছেন ২২৩ জন। এর মধ্যে কমপক্ষে ১০ জন রোগীর অক্সিজেনের মাত্রা একেবারেই কম, যাদের হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করা প্রয়োজন। কিন্তু গোটা হাসপাতালে এরকম হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা আছে মাত্র দু’টি।
হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা সংকটের একই চিত্র জেলার অন্যান্য হাসপাতালেও। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ার তিন হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে শ্বাসকষ্ট থাকা রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহের জন্য হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা আছে মোট ২৩টি। এর মধ্যে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে দুইটি, শজিমেক হাসপাতালে ১১টি এবং বেসরকারি টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০টি।
বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শফিক আমিন কাজল বলেন, এই হাসপাতালে রোগীর যে পরিমাণ চাপ, তাতে অন্তত ২০টি হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা প্রয়োজন। কিন্তু আছে মাত্র দুইটি। এ কারণে চাহিদা অনুযায়ী রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বেশি শ্বাসকষ্টে থাকা রোগীদের বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
জানতে চাইলে বগুড়ার সিভিল সার্জন গউসুল আজিম চৌধুরী বলেন, গত বছর মোহাম্মদ আলী হাসপাতালকে করোনা বিশেষায়িত ঘোষণা করার সময় আইসিইউ ও কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থার কোনোটিই ছিল না। পরে আট শয্যার আইসিইউ চালু করা হয় সেখানে। কিন্তু হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার বরাদ্দ পেয়েছে মাত্র দু’টি। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা না থাকলে আইসিইউয়ে থাকা করোনা রোগীদের খুব বেশি উপকার হয় না জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, শজিমেক হাসপাতাল ও মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে আরও কমপক্ষে ২৫টি হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা দরকার। বরাদ্দ চেয়ে দফায় দফায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো বরাদ্দ মেলেনি।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় শজিমেক হাসপাতালেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিন জন মারা গেছেন। অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় এই জেলায় কোভিডে আক্রান্ত ১০ জন মারা গেছেন।
সারাবাংলা/টিআর