শুধু সাজা নয়, ক্ষতিপূরণের বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে
২ জুলাই ২০২১ ২২:২৯
ঢাকা: কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে শুধু সাজা নিশ্চিত নয়, পাশাপাশি ক্ষতিপূরণের বিষয়গুলোর দিকে এগিয়ে আসতে হবে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আইনি প্রতিকার পাওয়ার জন্য তাদের এগিয়ে আসতে হবে।
সারাবাংলার আইন বিষয়ক নিয়মিত আয়োজন ‘সারাবাংলা লিগ্যাল চেম্বারস’-এ যুক্ত হয়ে আইনজীবীরা এ কথা বলেন। এ পর্বে আলোচনার বিষয় ছিল ‘মগবাজের বিস্ফোরণ: আইনি প্রতিকার।’
অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা ও সঞ্চালনায় ছিলেন ব্যারিস্টার ইফ্ফাত গিয়াস আরেফিন।
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহ মনজুরুল হক এবং বিশেষ আলোচক ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সুহান খান।
গত ২৭ জুন রোববার মগবাজারে যে বিস্ফোরক ঘটে সেখানে তিনতলার ভবনের পুরোটাই ধ্বসে পড়ে। ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যু হয়, আহত হয় অনেকেই। এখনও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বেশ কয়েকজন।
বিস্ফোরণের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। ঘটনার অনুসন্ধানে সাত সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা আইনের আওতায় কোনো ক্ষতিপূরণ পাবে কি না সেই বিষয়ে উল্লেখ করে অ্যাডভোকেট শাহ মনজুরুল হক বলেন, ‘এর আগে আমাদের এ ধরনের অনেক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন দোকান, কারখানা বিস্ফোরণ। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে বিশেষ করে কমিটি গঠন করা হয়। মগবাজারের ঘটনায় দুটো কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির কাজ হচ্ছে রিপোর্ট পেশ করা। রিপোর্ট পাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্তদের বিশেষ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে, এ ধরনের নজির কিন্তু খুবই কম।’
তিনি আরও বলেন, ‘হয়ত অনেকে মারা যায়, নগদ টাকা দিয়ে দেওয়া হয় কিন্তু এখানে কত দেওয়া হয়েছে আমার জানা নেই। বেসিক্যালি এটিই ক্ষতিপূরণ। ক্ষতিপূরণ নির্ণয়ের যে জায়গাটা, অপরাধের যে জায়গাটি অনেক নেগলিজেন্স রয়েছে। যদি ইনটেনশসহ সহকারে ঘটনা ঘটে তাহলে অবশ্যই মার্ডার হবে। আর যদি নেগলিজেন্সের কারণে হয়, তাহলে অবশ্যই দোষী সাব্যস্ত হবে। এখানে দুইটা বিষয় হতে পারে, যদি কোনো নিদিষ্ট ব্যক্তির দ্বারা নেগলিজেন্স হয়, তাহলে যাদের নাম আসবে তাদের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল মামলা হতে পারে হত্যাসহ অন্যান্য ঘটনা ঘটেছে সবগুলোর ঘটনায়। যদি গ্যাস থেকে ঘটনা না ঘটে, অন্যভাবে ঘটে তাহলে বিস্ফোরণ দ্রব্য আইনের মামলা হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে আইনে বিভিন্ন ক্ষতিপূরণের কথা বলা হয়েছে, নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য মাত্র ২ লাখ টাকা, ট্রাফিক আইনে ৩/৫ লাখ জরিমানা আদায়ের কথা উল্লেখ রয়েছে। এটি মূলত টর্ট আইনে করতে হয়, আমাদের দেশে সিভিল আইনে এটির প্র্যাকটিস নেই। এর আগে, এ রকম ৪/৫ টা মামলা রায় হয়েছে। কেউ যদি ক্ষতিপূরণের জন্য মামলা করতে আসে, আদালত হইত ক্ষতিপূরণ দিতে পারে।’
ব্যারিস্টার সুহান খান বলেন, ‘যখন কোনো একটা একজন ব্যক্তি নেগলিজেন্সলের মাধ্যমে মৃত্যু ঘটায় আমাদের পেনাল কোডের ৫ বছরের সাজার কথা বলা হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে এই, যখন এ ধরনের অবস্থা হয় তখন কি পেনাল কোডের আন্ডারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়? উত্তর না। বাংলাদেশে যখন কোনো ঘটনা ঘটে কিছুদিন মিডিয়াতে ফলোআপ হয়, এরপর আবার বিষয়টি হারিয়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি পুরনো আইন আছে। এটি ১৮৫৫ সালের ফিটাল অ্যাক্সিডেন্ট অ্যাক্ট নামে পরিচিত। সেই আইনের কিন্তু একটা বিধান আছে, যখন কোনো একজন দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছেন বা মারা গেছেন, এ আইনের আওতায় তার পরিবার ক্ষতিপূরণ চেয়ে একটি মামলা দায়ের করতে পারবেন। আইনের প্রয়োগের জন্য ব্যক্তিকে উদ্যোগ নিতে হবে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার জন্য। যিনি মারা গেছেন তার স্ত্রী সন্তান, পরিবারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। যেহেতু আমাদের দেশে টর্ট ‘ল’ টার খুব একটা প্র্যাকটিস নেই। বর্তমানে আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়ে ট্রেন্ডস চালু হয়েছে। এর মাঝে একবারও যে ক্ষতিপূরণ পাননি এমনই নজির কিন্তু নেই। কয়েকটি মামলার অলরেডি প্রিসিডেন্ট আছে, যে ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। তবে বিদেশি এর কার্যকারিতা ব্যাপক, সেই তুলনায় বাংলাদেশ অনেক নগণ্য।’
এক প্রশ্ন জবাবে মনজুরুল বলেন, ‘আমাদের দেশে যদি কেউ মারা যায়, তাহলে পেনাল কোডের আইনে শাস্তি দেওয়া হয় এবং জরিমানা করা হয়। সেখানে ভিকটিম শুধু পাচ্ছেন রিভেঞ্জ, অর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে না। জরিমানা টাকা চলে যাচ্ছে সরকারি কোষাগারে। এ ক্ষেত্রে আমাদের আইন প্রণেতার উচিত ভিকটিমের পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে সহয়তার ব্যবস্থা করা।’
সুহান খান বলেন, ‘যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। আপনাদের প্রতিকার আগে চাইতে হবে। পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশনের আলোকেই কিন্তু ক্ষতিপূরণগুলো আসছে। বিদেশে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার বিষয়টি তারা কালচারে নিয়ে এসেছে। আমাদেরকেও নিয়ে আসতে হবে। শুধু সাজা নয়, আমাদের ক্ষতিপূরণের বিষয়গুলো নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।’
সারাবাংলা/এআই/একে