Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মেট্রোরেল চালু করতে প্রস্তুত বিদ্যুৎ সরবরাহ

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩ জুলাই ২০২১ ০৮:৩৫

ঢাকা: স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেই মেট্রোরেল চালু করার চিন্তা করছে সরকার। প্রথম পর্যায়ে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালুর লক্ষ্যে এরইমধ্যে মেট্রোরেলের উত্তরা স্টেশনের মূল অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ শেষ করেছে। স্বপ্নের এই গণপরিবহন বিদ্যুতে চলবে তাই বিদ্যুৎ সরবরাহের সকল প্রক্রিয়াও এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা বলছেন, মেট্রোরেল চালুর জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সব প্রস্তুতি শেষ করেছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা অনুযায়ী মেট্রোরেল চলবে বিদ্যুতে। প্রথম পর্যায়ে যেটুকু চালু করা হচ্ছে তাতে ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের দরকার হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আর এ বিদ্যুৎ সরাসরি গ্রিড লাইন থেকে সরবরাহ করা হবে। এর ব্যবস্থাপনায় থাকবে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ- পিজিসিবি। পিজিসিবি ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া সারাবাংলাকে জানান, ডেসকো, ডিপিডিসি মিলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে মেট্রোরেলে।

বিজ্ঞাপন

পিজিসিবি মূল কার্যক্রমের ব্যবস্থাপনায় থাকবে। এই প্রকল্পে পিজিসিবির যে অংশ রয়েছে তা শেষ। মতিঝিলের দিকে কাজ চলছে।

তিনি আরও বলেন, ‘মেট্রোরেল বিদ্যুতের সাহায্যে পরিচালিত হওয়ায় ডিজেলের ব্যবহার কমবে, কমবে কার্বন নিঃসরণ। ফলে এটি হবে পরিবেশসম্মত গণপরিবহন।’

মেট্রোরেলে গ্রিড থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য দিয়াবাড়িতে ১৩২ কেভি উপকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দিয়াবাড়ি উপকেন্দ্রের কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে সেখান থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এদিকে মতিঝিলে আরেকটি উপকেন্দ্রের কাজ চলছে। মেট্রোরেলের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্থাপন করছে জাপানের মারুবেনি ও ভারতের এল অ্যান্ড টি। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড- ডেসকো ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. কাওসার আমীর আলি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের অধীনে যতটুকু সরবরাহ করার কথা এরইমধ্যে তা করা হচ্ছে। আমাদের সরবরাহ করা বিদ্যুৎ দিয়েই এখন মেট্রোরেলের ট্রায়ালসহ যাবতীয় কাজ হচ্ছে।’

মেট্রোরেল চলাচলের জন্য যে বিদ্যুৎ দরকার তা সরবরাহের জন্য সবকিছু প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান তিনি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত যতটুকু চালু করার চিন্তা করা হচ্ছে সেখানে পুরোদমে কাজ চলছে। পিলারের ওপরে স্প্যান বসানো হয়েছে। পিলারে বসানো স্প্যানের ওপরে বৈদ্যুতিক খুঁটি বসানো হয়েছে। দেখা গেছে, এরইমধ্যে দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও আবহাওয়া পর্যন্ত শেষ করা হয়েছে। আর বৈদ্যুতিক তার বসানো হয়েছে মিরপুর ডিওএইচএস পর্যন্ত। প্রথম পর্যায়ে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু করা হলেও মতিঝিল পর্যন্তই স্প্যান বসানোর কাজ চলছে।

ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি- ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, মেট্রোর প্রথম ট্রেনটি আগামী আগস্ট মাসে ডিপোর বাইরে উড়ালপথে তোলা হবে। সেখানে প্রাথমিক পরীক্ষা হবে। তারপর সমন্বিত পরীক্ষামূলক চালানো হবে। তারপরে আবার পরীক্ষামূলকভাবে পুরোটা চালানো হবে। এভাবে কয়েকপর্যায়ে পরীক্ষার পর যাত্রীদের জন্য চালু করা হবে স্বপ্নের মেট্রোরেল। ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এসব প্রক্রিয়া শেষ করার কথা জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আপাতত উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হবে। তারপর উত্তরা থেকে মতিঝিল। ডিএমটিসিএল এর ভেরিফায়েড ফেইসবুক পাতায় ও বলা হয়েছে, ডিপোর অভ্যন্তরের ১০৫০ মিটার টেস্ট ট্রাকে বাংলাদেশের প্রথম মেট্রো ট্রেন সেট এর পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হয়েছে।

ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি- ডিএমটিসিএল সূত্র অনুযায়ী, চলতি বছরের মে পর্যন্ত মেট্রোরেলের দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অগ্রগতি ৮৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী পাঁচ মাসে বাকি ১৪ দশমিক ২৬ শতাংশ কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হবে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক জানান, করোনার কারণে যদিও কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। কিন্তু টার্গেট রয়েছে আগামী ডিসেম্বরেই উত্তরা থেকে দিয়াবাড়ি অংশ শেষ করার। সে লক্ষ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ এগিয়ে চলছে।

তথ্যমতে, বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের সার্বিক অগ্রগতি ৬৪ দশমিক ৯১ শতাংশ হয়েছে। এরমধ্যে উড়াল সেতুর ২০ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ১৫ কিলোমিটার শেষ। ডিপোর মধ্যে রেললাইন নির্মাণ শেষ হয়েছে। উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রেলপথ এখন দৃশ্যমান। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা ও এর আশেপাশের সংযোগসহ প্রায় ১২৯ কিলোমিটার হবে মেট্রোরেল। এরমধ্যে পাতাল (মাটির নিচে) হবে ৬৮ কিলোমিটার। মানুষ ওঠানামার জন্য স্টেশন হবে ১০৪ টি। এরমধ্যে ৫৩টি স্টেশন হবে মাটির নিচে। ৬ রুটে এই রেল চলবে।

এদিকে প্রথম পর্যায়ে মেট্রোরেল চালুর জন্য মেট্রোরেলের প্রথম ও দ্বিতীয় কোচ ঢাকায় চলে এসেছে। যা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে ট্রায়াল রান চলছে। বাংলাদেশের রেলপথে নতুন যুগের সূচনা করে প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রেন এরই মধ্যে ডিপোতে পরীক্ষামূলকভাবে প্রায় ৫০০ মিটার চলছে। জাপান থেকে দুই দফায় ১২টি কোচ আনা হয়েছে সেগুলো দিয়ে উত্তরার দিয়াবাড়ি ডিপোতে পরীক্ষামূলক চালানে হয়। এই ট্রায়ালে পরীক্ষা হয়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থারও। আর তৃতীয় এবং চতুর্থ মেট্রো ট্রেন সেটের শিপমেন্টও জাপান থেকে জাহাজ যোগে রওনা দিয়েছে বলে জানা গেছে। যা বাংলাদেশে পৌঁছানোর সম্ভাব্য তারিখ আগামী ১৩ আগস্ট। আর পঞ্চম ট্রেন সেটের জাপান থেকে শিপমেন্টের সম্ভাব্য তারিখ আগামী ১৬ জুলাই। বাংলাদেশে পৌঁছানোর সম্ভাব্য তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর।

জানা যায়, প্রতিটি ট্রেনের ধারণক্ষমতা হবে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩০৮টি আসন। ডিএমটিসিএল ২০১৭ সালের আগস্টে জাপানের কাওয়াসাকি মিতসুবিশি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে মেট্রোরেলের জন্য ২৪ সেট ট্রেন তৈরির চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। এরমধ্যে দুই দফায় যার বারো সেট ট্রেন বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। জানা যায়, উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে ৩৮ মিনিট। ৪৫ সেকেন্ড পর পর ট্রেন স্টেশনে ট্রেন পাওয়া যাবে। থাকবে ১৭টি স্টেশন। এ পথে চলবে ২৪ জোড়া ট্রেন। ট্রেনের গতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার হলেও আরও কম গতিতে চলবে। ট্রেন পরিচালনার জন্য চালক থাকবেন ৫২ জন। আর ভাড়া পরিশোধ করে টিকেট কেটে উঠতে হবে ট্রেনে।

রাজধানীর যানজট কমাতে ২০১৩ সালে মেট্রোরেলের পরিকল্পনা করা হলে কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট বা এমআরটি নামে পরিচিত মেট্রোরেলের লাইন প্রথমে তিনটির পরিকল্পনা করা হলেও পরে তা বাড়িয়ে পাঁচটি করা হয়। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন -৬ কে নির্বাচন করা হয়। যা ২০১৬ সালের ২৬ জুন এর আনুষ্ঠানিক নির্মাণ কাজ শুরু হয়। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২২ হাজার কোটি টাকা।

সারাবাংলা/জেআর/একে

মেট্রোরেল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর