স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘লজ্জা-শরম নেই’, পদত্যাগ দাবি সংসদে
৩ জুলাই ২০২১ ১৫:২২
ঢাকা: স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন অনিয়ম, অক্সিজেন সংকটে বিভিন্ন জায়গায় মানুষের মৃত্যু, কোভিড চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি করেছেন জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সদস্যরার। এ সময় সংসদ সদস্যরা তাকে ‘নির্লজ্জ’ আখ্যায়িত করেছেন। সংসদ নেত্রী শেখ হাসিনা এ সময় সংসদে উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার (৩ জুলাই) সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে এ দাবি করেন তারা।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বললেন, এক বছরে নাকি অনেক কাজ করেছেন। আজকের খবর আসছে বাংলাদেশের ৩৭টি জেলায় অক্সিজেনের ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালে ৫ জন রোগী অক্সিজেন পায় তো ২০ জন লাইনে থাকে। কেবলমাত্র অক্সিজেনের কারণে ছটফট করে মানুষ মারা যাচ্ছে। পত্রিকায় এত লেখালেখি হচ্ছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কি একটি হাসপাতালে গিয়ে এগুলো দেখেছেন? তিনি কী করেন? তিনি জুম মিটিং করেন।’
‘কোভিড চিকিৎসার সময় নিউজিল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়ার কারণে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। ইংল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী আনন্দে আত্মহারা হয়ে একটি চুমু করার কারণে তাকে রিজাইন দিতে হয়েছে। আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে কী মানুষ! বুঝলাম না। ওনার লজ্জা-শরম কিছু নেই, চরিত্র নেই। ওনার রিজাইন দেওয়া উচিত।’
জাতীয় পার্টির রুস্তুম আলী ফরাজী স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘সেদিন সংসদে আমি সার্জিক্যাল মাস্ক কেনা নিয়ে কথা বলেছিলাম। আমরা আশা করেছিলাম স্বাস্থ্যমন্ত্রী সেটির তদন্ত করবেন। কিন্তু তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘আজকে আমি তথ্য-প্রমাণ নিয়ে এসেছি।’
রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ‘করোনা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। সব জায়গায় সেনাবাহিনী নামিয়ে এটি প্রতিরোধ করতে হবে। পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।’
জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন,‘ জিজ্ঞেস করলেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সব দিচ্ছি। কিন্তু কোথাও কিছু নেই। এভাবে আমরা একটা বছর সময় নষ্ট করেছি। আমাদের সংসদ সদস্যকে দায়িত্ব দিলে, অর্থ দিলে আমরা সবকিছু ঠিক করে দিতে পারতাম। কিন্তু আমাদের ওপর দায়িত্ব নয়। দায়িত্ব তাদের উপরে। তারা তো দুদিন পরে চলে যায়। জবাবদিহিতা তো তাদের নেই।’
তিনি বলেন, ‘আইসিইউ বেড আছে। কিন্তু প্রশিক্ষিত ডাক্তার নার্স নেই। অক্সিজেনের ব্যবস্থা নেই। অধিকাংশ রোগী অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছেন। বিভিন্ন ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয় কিন্তু কোনো তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আজ পর্যন্ত আমাদের সামনে আসেনি। মানুষের জীবনের কি কোনো দাম নেই? করোনা তো এখন সারাবিশ্বেই রয়েছে। কিন্তু চিকিৎসায় মানা যায়?’
তিনি বলেন, ‘সাতক্ষীরায় অক্সিজেনের অভাবে ৭ জন কোভিড রোগী এক ঘণ্টার মধ্যে ছটফট করতে করতে মারা গেছেন। আগের স্বাস্থ্য মন্ত্রী রুহুল হকের বাড়ি সেখানে। সেখানকার হাসপাতালটি ফাইভস্টার মানের হওয়া উচিত ছিল। মন্ত্রীরা যান, মন্ত্রী আসেন। কিন্তু নিজের এলাকাটাও ঠিক রাখতে পারেন না।’
বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, মেশিন চলে না, লোক লাগবে এগুলো তো আপনাদেরকে (স্থানীয় এমপি) দেখতে হবে। কিন্তু আপনারা তো দেখেন না। নার্স, ডাক্তার যন্ত্রপাতি লাগলে আপনাদেরকে বলতে হবে। অভিযোগ দিলে তো হবে না। এগুলোর ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু আপনাদের বলতে হবে। চেয়ারম্যান হিসেবে এগুলো দেখার দায়িত্ব আপনাদের ওপর বর্তায়। ওনার বক্তবে মনে হচ্ছে কোনো এমপিই দায়িত্ব পালন করেন না। অথচ আমি হাসপাতালের৷ চিকিৎসকসহ লোকবল নিয়োগের জন্য ওনার দফতরে গিয়েছি। এ বক্তব্য আপত্তিজনক। স্বাস্থ্যমন্ত্রী গোটা হাউসকে অপমান করেছেন। তার বক্তব্য এক্সপাঞ্জ হওয়া দরকার।’
করোনা পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যে কোন মূল্যে করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যেভাবে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাতে আগামী ১০/১৫ দিনের মধ্যে এটি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।’
তিনি বলেন, ‘ক্ষুধা দারিদ্রের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ে। সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে। সামনে ঈদুল আজহা। গরিব মানুষের জন্য দ্রুত খাদ্য দেওয়ার দাবি করছি। কোরবানির পশু পরিবহন ও কেনাবেচায় শিগগিরই সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করতে হবে। না হলে এটি নিয়েও সংকট তৈরি হবে।’
বিএনপির সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, ‘বগুড়া এখন কোভিডের হটস্পট। গত তিনদিনে সেখানে ২৪ জন মারা গেছেন। সেখানে হাই ফ্লো নজেল ক্যানোলা সংকট। সংসদে আজকে তো স্বাস্থ্যমন্ত্রী নেই। জেলার তিনটি কোভিড হাসপাতালে করোনা রোগীতে ঠাসা।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে