করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবহন ও শিক্ষা খাত
৩ জুলাই ২০২১ ১৮:০৮
ঢাকা: ২০২০ সালের মার্চ মাসে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর গত প্রায় দেড় বছরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হযেছে দেশের পরিবহন ও শিক্ষা খাত। বিধিনিষেধ ও লকডাউনের কারণে মানুষের মুভমেন্ট বন্ধ রযেছে। এতে সব ধরনের পরিবহন খাতই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কারণ সব ধরনের পড়াশোনা কিংবা ক্লাস ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে করা সম্ভব না।
বাংলাদেশ এমবিএ অ্যাসোসিয়েশন প্রেজেন্টস সারাবাংলা বিজক্যাফে অনুষ্ঠানে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন। “করোনা মহামারি ও পরিষেবা খাত “ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আরিশা নুসরাত। বক্তব্য রাখেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান সাইফুল মোমেন, নভোএয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান এবং শ্যামলী পরিবহনের পরিচালক রজত ঘোষ।
সাইফুল মোমেন বলেন, ২০২০ সালের মার্চ থেকে করোনার কারণে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। যদিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে আমরা অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করেছি। তারপরও বলবো সরাসরি উপস্থিত না হয়ে কেবল দূর থেকে কিংবা অনলাইনে অংশগ্রহণ করে সব শিক্ষাগ্রহণ করা সম্ভব না। বিশেষ করে ডাক্তারি, ইর্জিনিয়ারিং, নার্সিংসহ বেশ কিছু শিক্ষা সরাসরি কিংবা হাতে ধরে ল্যাবে নিয়ে গিয়ে না শিখালে প্রকৃত শিক্ষা দেওয়া সম্ভব না।
তিনি বলেন, ডিজিটাল ডিভাইস দিয়ে সব শিক্ষাগ্রহণ সম্ভব না। কোনো কোনো এলাকায় এমন শিক্ষার্থী থাকে যেখানে ইন্টারনেট ব্যবস্থা আধুনিক না। ফলে এই অবস্থা দীর্ঘ হলে আমাদের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সাইফুল মোমেন বলেন, বর্তমানে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় কিউএস র্যাংকিয়ে ১ নম্ব অবস্থানে রয়েছে। পৃথিবীতে যখন পরিবেশ নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয় তার পরপরই ১৯৯৪ সালে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ খোলা হয। তারপর সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি ও সিলেবাসের পরিবর্তন এসেছে।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাজ গবেষণা করা। আমরা কতটা করতে পারছি জানি না, তবে আমরা চেষ্টা করছি। আমাদের ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন সেক্টরে গিয়ে ভালো অবস্থানে কাজ করছে। দেশে বিষয়ভিত্তিক কাজ না থাকায় অনেক দক্ষ ছেলেমেয়ে স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছেন। এতে আমাদের দক্ষ জনশক্তিগুলো বিদেশে চলে যাচ্ছে।
নভোএয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে গত বছরের ৮ মার্চ করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হলেও এভিয়েশন খাতে জানুয়ারি মাস থেকে এই মহামারি ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। ফলশ্রুতিতে ২৬ মার্চ ২০২০ থেকে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ হয়ে যায়। জুন মাসের প্রথম থেকে অত্যন্ত সীমিত পরিসরে আমরা অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করি। সেপ্টেম্বর নাগাদ পরিস্থিতি মোটামোটি উন্নতি হতে শুরু করে। তারপর চলতি বছরের জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারি মাসে কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসি। কিন্তু মার্চ মাসে আবারও আমাদের ফ্লাইটগুলো বন্ধ হতে শুরু করে। এপ্রিলে আবার সীমিত পরিসরে চালু হলেও করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সিভিল এভিয়েশন খাত। আমরা জানি না কবে আমরা আবার নিউ নরমালে যাব। আমরা বর্তমানে একটা অনিশ্চতার দিকে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, বিমান খাতটি বাংলাদেশে একটি অবহেলিত খাত। সিভিল এভিয়েশন আমাদের পলিসিগত সার্পোট দিচ্ছে না। বাংলাদেশের বিমানকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হলেও বেসরকারি খাতের এয়ার সংস্থাগুলোকে সেই রকম কোন সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এয়ারলাইন্সগুলোকে টিকে থাকার জন্য সরকার থেকে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও আমাদের সরকার তেমন কোনো সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। তারপরও আমরা কোনো কর্মী ছাটাই করছি না বরং তাদের নিয়মিত বেতন ভাতা দিয়ে যাচ্ছি।
রজত ঘোষ বলেন, ১৯৭৩ সালে একটি অটোরিকশা থেকে শ্যামলি পরিবহনের যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে শ্যামলি পরিবহণের ৪০০টির মতো বাস সারাদেশে চলাচল করছে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পরিবহন খাত হিসেবে দেশের ৪২টি জেলায় শ্যামলি পরিবহনের বাস চলাচল করছে এবং ৫ হাজার লোকের কর্সংস্থান করেছে শ্যামলি পরিবহন।
তিনি বলেন, ২০০০ সালে প্রথম শ্যামলি পরিবহন ঢাকা-কলকাতা বাস সার্ভিস চালু করে। ফলে সড়ক পরিবহন খাতে শ্যামলি পরিবহন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।
তিনি আরও বলেন, করোনার কারণে পরিবহন সেক্টর অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হযেছে। বিশেষ করে মানুষের মুভমেন্ট বন্ধ হওয়ায় এই খাত ক্ষতিগ্রস্ত।
সারাবাংলা/জিএস/এসএসএ