আগস্টের প্রথম সপ্তাহে আসছে অক্সফোর্ডের ১০ লাখ ভ্যাকসিন
৪ জুলাই ২০২১ ১৩:৩৩
ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে আসছে ১০ লাখ ৮০০ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন ‘কোভিশিল্ড’। তবে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে এই ভ্যাকসিন আসছে না। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে জাতীয় পর্যায়ে শুরু হওয়া ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রমে যারা দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করতে পারে নি তাদের বিবেচনায় রেখে সরকার এই ভ্যাকসিন পাচ্ছে কোভ্যাক্স থেকে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র জানিয়েছে, যারা এখনো অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করা শেষে দ্বিতীয় ডোজ পাননি তাদের বিষয়ে নানামুখী চিন্তাভাবনা করছে সরকার। ভারতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি অবনতি হতে থাকায় সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে ভ্যাকসিন প্রাপ্তিতে সমস্যার সৃষ্টি হয়। তবে এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন আনার জন্য যোগাযোগ করতে থাকে সরকার।
সূত্র জানায়, আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ১০ লাখ ৮০০ ডোজ ভ্যাকসিন দেশে আসবে। এগুলো আসার পরে যারা দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন এখনো নিতে পারেননি তাদের প্রয়োগ করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, আগস্টে বাংলাদেশে ১০ লাখ ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন আসবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি এসেছে। তবে কবে ভ্যাকসিন আসবে সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমরা ভ্যাকসিন পাবো। এরইমধ্যে সেখান থেকে আমাদের কাছে ২৫ লাখ ডোজ মডার্নার ভ্যাকসিন এসে পৌঁছেছে। এছাড়াও আমাদের আগস্ট মাস থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন পাওয়ার ইঙ্গিত পেয়েছি। আমরা আশা করি সময় মতো ভ্যাকসিন পেয়ে যাব। যারা সেকেন্ড ডোজের অপেক্ষায় আছে তারা আবার ভ্যাকসিন নিতে পারবে। দ্বিতীয় ডোজ যাদের আটকে আছে তাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এই ভ্যাকসিন দেবে।
ভ্যাকসিন কেনার জন্য টাকার কোনো অভাব নেই জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চলমান বাজেটে ভ্যাকসিন কেনার জন্য টাকার জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভ্যাকসিন কেনার জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিয়েছেন।
এ দিকে শুক্রবার (২ জুলাই) পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন আগস্টের মধ্যেই আসবে। তবে কত তারিখে এবং কী পরিমাণ আসবে এ বিষয়ে এখন কিছু বলা যাচ্ছে না। আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই ভ্যাকসিন পাওয়ার ইঙ্গিত পেয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা বাংলাদেশি নাগরিকরাও ভ্যাকসিন পেতে সহযোগিতা করেছে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর দেশে সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার তিন কোটি ডোজ করোনা ভ্যাকসিন আনতে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হয়। বাংলাদেশ সরকার, বেসরকারি ফার্মাসিউটিক্যালস বেক্সিমকো ও ভারতের ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী সিরামের সঙ্গে এই চুক্তি সই করা হয়। পরে ১৩ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত ক্রয়চুক্তি সই করে সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছে পাঠানো হয়।
৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার ভ্যাকসিন কেনার জন্য ৫০৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটকে। চুক্তি অনুযায়ী ৫ জানুয়ারি আসে সিরামের কাছ থেকে সরকারের কেনা ভ্যাকসিনের প্রথম চালান। এই চালানে ভ্যাকসিন আসে ৫০ লাখ ডোজ। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় মাসে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন বাংলাদেশের পাওয়ার কথা ছিল। তবে এরপরে ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসলেও সিরাম থেকে আর বাংলাদেশে ভ্যাকসিন পাঠানো হয়নি।
২১ জানুয়ারি সকাল ৮টা ২৮ মিনিটে মুম্বাই থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা এয়ার ইন্ডিয়ার এআই১২৩২ নম্বর ফ্লাইটে ২০ লাখ ৪ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন সকাল ১১টা ২০ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। এগুলো ভারত সরকারের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে আরও ৩২ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেশে এসে পৌঁছায়।
এরপরে ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৬ জনকে পরীক্ষামূলকভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। এদিন ভ্যাকসিন কার্যক্রমে নিবন্ধনের জন্য ওয়েব প্ল্যাটফর্ম ‘সুরক্ষা’ চালু করা হয়।
আরও পড়ুন|
গবেষণা বলছে ২ ডোজ কোভিশিল্ডের ব্যবধান ১০ মাস হলে বেশি কার্যকর
৬৫’র বেশি বয়সীদের কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন না দেওয়ার কোনো কারণ নেই
‘কোভিশিল্ডের ২ ডোজে ৮-১২ সপ্তাহের ব্যবধান বেশি কার্যকরি’
কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন নিয়ে ইউরোপ ভ্রমণে জটিলতা
৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় সারাদেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম। দেশে দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয় ৮ এপ্রিল থেকে। তবে এ সময় ভারতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়তে থাকে। এমন অবস্থায় নিজ দেশে ভ্যাকসিনের চাহিদা মেটাতে সে দেশের সরকার সিরাম ইন্টারন্যাশনালকে করোনার ভ্যাকসিন রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এর ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করা ভ্যাকসিন আর তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
ভ্যাকসিন না আসার কারণে দেশে ২৬ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পরবর্তীতে নিবন্ধনও বন্ধ রাখা হয়।
তবে ধীরে ধীরে ভ্যাকসিনের সংকট কাটতে শুরু করে। চীন থেকে ভ্যাকসিন আনার উদ্যোগ নেয় সরকার। একই সঙ্গে রাশিয়া থেকেও ভ্যাকসিন আনার উদ্যোগ নেয় সরকার। চীন সরকারের উপহার হিসেবে দেশে প্রায় ৩১ লাখ ভ্যাকসিন দেশে এসে পৌঁছায়। একই সঙ্গে কোভ্যাক্সের আওতায় দেশে ফাইজারের এক লাখ ৬০০ ডোজ ভ্যাকসিন আসে। সর্বশেষ কোভ্যাক্সের আওতায় মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেশে এসে পৌঁছায়।
এরইমধ্যে দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মেডিকেল শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন নার্সিং ইনস্টিটিউট ও ম্যাটসের শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করে সরকারিভাবে। একই সঙ্গে প্রবাসীদের ভ্যাকসিন প্রয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তাছাড়া সরকারিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন আবাসিক হলে থাকা শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
দেশে এখন পর্যন্ত সারাদেশে ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জনকে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনাকার ভ্যাকসিনের ভাই প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। তাদের মাঝে দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন পেয়েছে ৪২ লাখ ৯০ হাজার ৯৬৪ জন। এছাড়াও এক হাজার ৮৬৬ জনকে ফাইজার বায়োএনটেকের ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশে ৭১ হাজার ৮ জনকে সিনোফার্মের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজার ২৩৭ জনকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে।
সারাবাংলা/এসবি/একে