সংসদ নেতার বক্তব্য শালীনতা বিবর্জিত: বিএনপি
৪ জুলাই ২০২১ ১৬:২৩
ঢাকা: খালেদা জিয়াকে নিয়ে সংসদ নেতার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) বক্তব্য শালীনতা বিবর্জিত বলে মনে করে বিএনপি। শনিবার (৩ জুলাই) অনুষ্ঠিত দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা এ মত দেয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরুউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত ও আলোচনাগুলো গণমাধ্যমে তুলে ধরার জন্য রোববার (৪ জুলাই) দুপুরে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা প্রসঙ্গে জাতীয় সংসদে আইনমন্ত্রীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ শালীনতা বিবর্জিত বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানানো হয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায়। সভা মনে করে— শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে দেশনেত্রীকে সাজানো মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সাংবিধানিক এবং প্রচলিত আইনের ব্যাত্যয় ঘটিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রীকে তার নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তার প্রাপ্য জামিন তাকে দেওয়া হয়নি। অথচ একই ধরনের মামলায় অন্যান্য অভিযুক্তদের জামিন দেওয়া হয়েছে। দেশনেত্রীর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার বাসভবনে সাময়িকভাবে স্থানান্তরের যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা প্রশাসনিক নির্দেশ। আইনের কোথাও এ কথা বলা নেই যে, সরকার তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দিতে পারবে না।’
আরও পড়ুন: ‘জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার পর খালেদাকে ঘরে নিতে চাননি’
তিনি বলেন, ‘যেখানে খুনের মামলায় ফাঁসির আসামি অথবা আজীবন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুক্তি নিয়ে বিদেশে চলে যেতে পারে সেখানে এই দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য যিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে নির্বাচিত তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও দুই বার বিরোধী দলের নেত্রীকে মানবিক কারণে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া যাবে না— এটি কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না বলে মনে করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গতকাল সংসদে সংসদ নেতা শেখ হাসিনার বক্তব্য অনভিপ্রেত এবং রাজনৈতিক শালীনতা বিবর্জিত। সংসদ নেতা তার মনগড়া গল্পকাহিনীর মধ্যে দিয়ে একজন মহান মুক্তিযোদ্ধা, গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী এবং জনগণের আস্থাভাজন নেতাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে চেয়েছেন। সভা এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ জানায়। সভা মনে করে সংসদ নেতা ও আইন মন্ত্রীর এই ধরনের মন্তব্য খারাপ নজির স্থাপন করছে।’
তিনি বলেন, ‘এই নেতিবাচক মনোভাব থেকে বেরিয়ে এসে একজন মুক্তিযোদ্ধা ও আজীবন সংগ্রামী বাংলাদেশের জনগণের প্রিয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসার সকল ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ সরকার গ্রহণ করবে বলে মনে করে সভা।’
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘লজ্জা-শরম’ বলতে কিছু নেই: মির্জা ফখরুল
মির্জা ফখরুল জানান- ভারতীয় ডেল্টা ভেরিয়েন্ট কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এবং ফলশ্রুতিতে মৃত্যুর হার ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় সভায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিএনপি বারবার সতর্ক করবার পরও সরকার সংক্রমণ প্রতিরোধের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারার জন্য সরকারের উদাসীনতা, অযোগ্যতা ও দুর্নীতিকে দায়ী করা হয় সভায়। জেলা সদরে অক্সিজেনের অভাব, হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার তীব্র সংকট, শতকরা ৫২ ভাগ জেলা হাসপাতালে কোনো ও আইসিইউ বেড না থাকা, ঔষধের অপ্রতুলতায় ঢাকার বাইরের জনগণের জীবন মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন হয়েছে বলে মনে করে বিএনপির স্থায়ী কমিটি।
তিনি বলেন, ‘২০২০ সালের মার্চ মাস হতে কোভিড-১৯ করোনার প্রাদুর্ভাবের ফলে সরকারের অপরিকল্পিত লকডাউন, সাধারণ ছুটি, সীমিত লকডাউন, কঠোর লকডাউনের ফলে প্রায় ২ কোটির ওপরে মানুষ দরিদ্র হয়েছে। কর্মচ্যুত হয়েছে লাখ লাখ শ্রমিক। দেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক ৮৫ শতাংশ, সংখ্যায় ৫ কোটিরও বেশি প্রকৃত অর্থে কর্মহীন। দরিদ্র ও কর্মহীন মানুষের জন্য সরকার কোনো পরিকল্পিত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। দিন আনে দিন খায় মানুষ, পরিবহণ শ্রমিক, দোকান শ্রমিক, প্রান্তিক কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হকার- এরা সবাই কর্মহীন হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে-অর্ধহারে জীবন কাটাচ্ছে।’
সারাবাংলা/এজেড/একে