কঠোর বিধিনিষেধ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর পরামর্শ
৪ জুলাই ২০২১ ২১:০৩
ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের জন্য চলমান কঠোর বিধিনিষেধ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এ পরামর্শ বিষয়ে এরইমধ্যে আলোচনা হয়েছে সরকারের উচ্চপর্যায়ে। এমন অবস্থায় দেশে খুব দ্রুতই আরও সাতদিনের কঠোর বিধিনিষেধের ঘোষণা দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র।
কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, গত সাতদিনের যে পরিসংখ্যান আমরা দেখছি তা অবশ্যই আতঙ্কজাগানিয়া। এমন অবস্থায় যদি সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া না যায় তবে তা আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ওপরে প্রভাব ফেলতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এর আগে কারিগরি পরামর্শক কমিটির বৈঠক শেষে রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ও জনগণের জীবনের ক্ষতি প্রতিরোধ করার জন্য কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে সারাদেশে কমপক্ষে ১৪ দিন সম্পূর্ণ শাটডউন দেওয়ার সুপারিশ করেছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘আমরা শাটডাউন বলতে বুঝিয়েছিলাম সকল কিছু বন্ধ যাতে মানুষের মাঝে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা কমে আসে। সরকার এরইমধ্যে সাতদিনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে। আমরা আশা করবো সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকার অবশ্যই এটিকে বৃদ্ধি করবে। জরুরি সেবা ছাড়া যানবাহন, অফিস-আদালত সহ সবকিছু বন্ধ রাখা প্রয়োজন। এ ব্যবস্থা কঠোরভাবে পালন করতে না পারলে আমাদের যত প্রস্তুতিই থাকুক না কেন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা অপ্রতুল হয়ে পড়বে।’
ডা. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা আশা করবো সরকার আরও এক সপ্তাহ এই বিধিনিষেধ বাড়াবে। দীর্ঘমেয়াদে আসলে দেশে কঠোরভাবে লকডাউন, বিধিনিষেধ বা শাটডাউন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব না। আর তাই আমাদের অন্তত ভাইরাসের সুপ্তিকাল অর্থাৎ ন্যুনতম ১৪ দিনের জন্য সব কিছু বিচ্ছিন্ন রেখে ফলাফল দেখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞানসম্মতভাবেই আমরা পরামর্শ জানিয়েছি। আশা করছি অবশ্যই সরকার সেটি বিবেচনা করবে। যদি ভালোভাবে এই বিধিনিষেধ মানা যায় সেক্ষেত্রে হয়তবা পরবর্তীতে একটু শিথিলতা দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি ও মাস্ক পরা বিষয়ে সবাইকে সচেতন করা যেতে পারে। এর কোনো বিকল্প বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের কাছে নেই।’
প্রায় একই কথা বলেন কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত যে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সুপ্তিকাল ১৪ দিন পর্যন্ত। তাই এমন পরিস্থিতিতে ৭ দিনের বিধিনিষেধে খুব একটা বেশি উপকার হবে না। অবশ্যই তাই এটি বাড়ানো প্রয়োজন। এই সময়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থেকে যদি মানুষকে স্বাস্থ্য বিধি ও মাস্ক পরা বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা যায় তখন পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে।’
এ দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে সংক্রমণ শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা এখন ঊর্ধ্বমুখী। আর এমন অবস্থায় খুব দ্রুতই বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানানো হতে পারে মন্ত্রীপরিষদ থেকে। এরইমধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে ৬ জুলাইয়ের দিকে ঘোষণা আসতে পারে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে সবাই মিলেই আসলে চেষ্টা করতে হবে কভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য। এমন অবস্থায় আমাদের কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় একটি পরামর্শক কমিটি আছে। তাদের পরামর্শ অনুসারে যা করণীয় তা অবশ্যই করা হবে।’
উল্লেখ্য, দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ১ জুলাই সকাল ছয়টা থেকে ৭ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। রোববার ছিল কঠোর বিধিনিষেধের চতুর্থ দিন।
সারাবাংলা/এসবি/একে