৫জি অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু এ বছরেই, শেষ হবে ২০২৩ সালে
৫ জুলাই ২০২১ ১০:০৪
ঢাকা: ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বরাবরই তথ্যপ্রযুক্তি খাততে গুরুত্ব দিয়ে আসছে সরকার। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব তথা তথ্যপ্রযুক্তি খাতের যে বৈপ্লবিক অগ্রগতি, সেখান থেকেও সুফল তুলতে চায় বাংলাদেশ। আর সে কারণেই উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তির আধুনিকায়নেও দেশ পিছিয়ে থাকতে রাজি নয়। তাই যুক্তরাষ্ট্র, চীন যখন ফাইভজি প্রযুক্তি নিয়ে পুরোদমে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখন বাংলাদেশও ফাইভজি প্রযুক্তির অবকাঠামো নির্মাণের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। আর কেবল শহর নয়, গ্রামাঞ্চলসহ গোটা বাংলাদেশেই এই ফাইভজি সেবার অবকাঠামো তৈরি করবে সরকার।
পরিকল্পনা কমিশন এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ফাইভজি মোবাইল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে বিদ্যমান কোর ও ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কের আধুনিকায়নের একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। এ ক্ষেত্রে দেশীয় মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন করা হবে। চলতি বছর থেকে শুরু করে ২০২৩ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে প্রকল্পটির। আর এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ২০৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, প্রকল্পটির প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে আসার পর গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় কিছু সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল। সেগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। পুনর্গঠিত ডিপিপি নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তি নেই। ফলে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুত। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন-আল-রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে গ্রামাঞ্চলের জনসাধারণ প্রথমত ফোরজি মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় আসবেন। একইসঙ্গে গ্রাম এলাকাতেও কোর ও ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক আধুনিকায়নের ফলে এগুলো ফাইভজি প্রযুক্তি সেবা দেওয়ার উপযোগী হয়ে উঠবে। ফলে দেশে ফাইভজি মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু হলে এসব এলাকার মানুষও ফাইভজি সেবা নিতে পারবেন।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র সবশেষ গত মে মাসের তথ্য বলছে, দেশে মোবাইল ফোন গ্রাহকের সংখ্যা ১৭ কোটি ৫২ লাখ। অন্যদিকে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটি ৭৩ লাখ। এর মধ্যে আবার ১০ কোটি ৭০ লাখেরও বেশি মানুষ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যবহারকারী এক কোটিরও কম। আবার মোবাইল ইন্টারনেটর খরচ বেশি কিন্তু গ্রাম এলাকার মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কম। ফলে গ্রাম এলাকায় ইন্টারনেট ব্যবহারের মাত্রা কম। এসব এলাকায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সংযোগ ছড়িয়ে দিতেও ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর আগ্রহ কম। সব কিছু মিলিয়েও গ্রাম এলাকায় টেলিটকের মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে অল্প খরচে উচ্চ গতির ফাইভজি ইন্টারনেট ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই ডাক ও টেলিযোগাযোগ ২২শ কোটি টাকার প্রকল্পটি হাতে নিচ্ছে।
এই প্রকল্পের আওতায় টেলিটকের বিদ্যমান সীমিত কাভারেজের ফোরজি নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রসারিত করা হবে। এর মাধ্যমে বিশেষত গ্রাম এলাকায় অল্প খরচে ও সুলভ মূল্যে উচ্চ গতির ফোরজি ইন্টারনেট এবং পরবর্তী সময়ে ফাইভজি সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে মোবাইল সেবায় নিয়োজিত অন্যান্য অপারেটরের তুলনায় টেলিটকের নেটওয়ার্কের আওতা অত্যন্ত সীমিত। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে টেলিটকের নেওয়ার্কের কাভারেজের দশা বেহাল। প্রস্তাবিত প্রকল্পটির আওতায় তাই নতুন ৩ হাজার বিটিএস সাইট তৈরি করার পাশাপাশি টেলিটকের নিজস্ব ৫০০টি সাইট তৈরি করা হবে। একইসঙ্গে আড়াই হাজার টাওয়ার শেয়ারিং সাইটও তৈরি করা হবে।
এছাড়া প্রকল্পটির আওতায় গ্রাহক সেবার সক্ষমতা বাড়াতে এখনকার দুই হাজার থ্রিজি/ফোরজি মোবাইল বিটিএস সাইটের যন্ত্রপাতিগুলো আধুনিকায়ন করা হবে। পাশাপাশি বিদ্যমান ২০০টি মোবাইল বিটিএস প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে সাইটগুলোর আধুনিকায়ন করা হবে, এখনকার এক হাজার টুজি/থ্রিজি মোবাইল বিটিএস সাইটে ফোরজি বিটিএস সংযোজন করা হবে। ফিক্সড ওয়্যারলেস অ্যাকসেস প্রযুক্তি স্থাপনের মাধ্যমে সরকারি দফতর, হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার জন্য ৫ হাজার এফডব্লিউএ ডিভাইস স্থাপন ছাড়াও আইপি লং-হল ও শর্ট-হল মাইক্রোওয়েভ লিংক স্থাপন করা হবে। এছাড়া কোর নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং কোর আইপি ব্যাকবোন নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজগুলোও করা হবে।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর