প্রস্তুত কোরবানির পশু, লাভের আশায় নরসিংদীর খামারিরা
৬ জুলাই ২০২১ ০৮:০৭
নরসিংদী: কোরবানির ঈদ সামনে রেখে নরসিংদীতে বিক্রির জন্য প্রায় ৭০ হাজারের বেশি পশু প্রস্তুত করেছেন কৃষক ও খামারিরা। এ মুহূর্তে পশু পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা, টার্গেট কোরবানির ঈদ। খামারিদের আশা, করোনা পরিস্থিতিতে সীমান্ত দিয়ে পশু আমদানি বন্ধ থাকায় ঈদের হাটে এসব পশু বিক্রি করে লাভবান হবেন তারা।
খামারিরা জানান, কোরবানিকে সামনে রেখে তারা সম্পূর্ণ দেশি পদ্ধতিতে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মোটাতাজা করেছেন। হরমোন জাতীয় ইনজেকশন, কোনো রাসায়নিক ওষুধ তারা ব্যবহার করেননি। তবে গো খাদ্যের চড়া দামে পশু লালনপালন করে এই মহামারি করোনার কারণে ন্যায্য দাম পাবেন কিনা তা নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় আছেন তারা।
নরসিংদী জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এবছর জেলার ৬টি উপজেলায় ছোটবড় মিলিয়ে ৬ হাজার ৭৬২ জন খামারি ৬০ হাজার ৯১০টি পশু পরিচর্যা করে কোরবানির জন্যে প্রস্তুত করেছেন। এসব পশুর মধ্যে রয়েছে ষাঁড় ৩১ হাজার ৪০৭টি, বলদ ৯ হাজার ৮৫০টি, গাভী ৪ হাজার ৪৯২টি, মহিষ ১ হাজার ৫১৮টি, ছাগল ৯ হাজার ৬৫১টি, ভেড়া ২ হাজার ৯১৮টি ও অন্যান্য ৭৪টি।
এছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে কৃষকসহ মৌসুমি পশু পালনকারীরা কোরবানির জন্য বিভিন্ন পশু লালনপালন করছেন প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার। তাই এবার স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের পশু হাটেও এসব পশু সরবরাহ করা যাবে বলে আশা করেছেন খামারিরা।
জেলার বিভিন্ন খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর ঈদের ৫ থেকে ৬ মাস আগে বাজার থেকে গরু-মহিষ কিনে দেশিয় খাবার দিয়ে লালনপালন করে বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেন খামারিরা। অনেকে আবার ৮ থেকে ১০ মাস আগে থেকেই দেশের স্থানীয় হাট থেকে গরু-মহিষ ও ছাগল কিনে লালনপালন করছেন।
খামারিদের পাশাপাশি লাভের আশায় পারিবারিকভাবেও অনেক কৃষক পশু মোটাতাজা করছেন। তবে এবার গো খাদ্যের দাম একটু বাড়তি। তাই পশু পালনে খরচ বেড়েছে বলে জানান খামরিরা ও কৃষকরা। কোনো ধরনের ক্ষতিকর ওষুধ ও ভেজাল খাবার না খাইয়ে স্থানীয় জাতের ঘাস, খড়কুটো, ভুষি ও ছোলা খাইয়ে পশু মোটাতাজা করেছেন তারা।
খামারিরা জানান, প্রতিবছর ঈদ এলে গরু বিক্রি করে বাড়তি আয় করেন তারা। ছোট-বড় খামারের পাশাপাশি কৃষকরাও ঈদকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজা করে থাকেন। অন্য বছর ক্রেতারা কোরবানির একমাস আগে থেকে খামারিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন পছন্দের পশু কেনার জন্য। এবার করোনায় সে অবস্থা নেই। বাজারে নিলেও ক্রেতা মিলবে কিনা, ক্রেতা মিললেও ন্যায্য দাম পাওয়া যাবে কিনা। এসব নানা ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে খামারিদের মনে, সব মিলেই পশু বিক্রি নিয়ে দুঃশ্চিন্তার শেষ নেই তাদের।
মৌসুমি খামারিরা বলছেন, তাদের পালিত পশুগুলোর বেশির ভাগই ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা মূল্যের। এ পশুগুলোর অধিকাংশই মধ্যবিত্তদের কাছেই চাহিদা পেত। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে কারণে মধ্যবিত্তরাই রয়েছেন নানান সংকটে। অনেকেই হয়ত এবার কোরবানি নাও দিতে পারেন। ফলে পশুর চাহিদা এবার কম থাকবে বলে মনে করছেন তারা।
রায়পুরা উপজেলা চরমধুয়া এলাকার গ্রিন এগ্রো ফার্মসের মালিক আহসান শিকদার বলেন, ‘এবার আমাদের খামারে দেশি জাতের ৯০টি গরু পালন করা হয়েছে। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে এসব গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। তবে দেশে করোনা সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, তাতে কোরবানির পশুর দাম ও বাজার পরিস্থিতি কী হয় এ নিয়ে শঙ্কায় আছি।’
দড়িগাঁও গ্রামের কৃষক খুশি মিয়া বলেন, ‘কোরবানি ঈদের হাটে বিক্রির জন্যে ৫ মাস আগে দুটি ষাঁড় কিনে লালনপালন করছি। গো খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে গরু দুটি পালনে খরচ অনেক বেশি বেড়েছে। ন্যায্য দাম না পেলে লাভবান হওয়া যাবে না।’
নরসিংদী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান খান সারাবাংলা’কে জানান, নরসিংদী জেলায় ৫৫ হাজার কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে। তার বিপরীতে এবছর ৬ হাজার ৭৬২টি খামারে গরু ও মহিষসহ ৬০ হাজার ৯১০টি কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়া কৃষকসহ ব্যক্তিগতভাবে গৃহপালিত ১০ থেকে ১২ হাজার পশুও প্রস্তুত রয়েছে। মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার না করে দেশিয় খাবার খাইয়ে পশু মোটাতাজা করার জন্য কৃষক ও খামারিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’ বাজারে দেশি গরুর চাহিদা থাকায় খামারি ও কৃষকরা লাভবান হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সারাবাংলা/এমও