চট্টগ্রামে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ৬৬২ জন করোনায় আক্রান্ত
৬ জুলাই ২০২১ ১১:৫৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছেই। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৬৬২ জন। একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। আগের দিনের চেয়ে সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েছে ১০৩ জন।
২০২০ সালের এপ্রিলে করোনার সংক্রমণ শুরুর পর গত ১৫ মাসের মধ্যে একদিনে এত আক্রান্তের রেকর্ড নেই। রোববার (৪ জুলাই) এক দিনে ৫৫৯ জন এবং ৩০ জুন ৫৫২ জন শনাক্ত হয়েছিল।
মঙ্গলবার (০৬ জুলাই) সকালে জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো করোনা-সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের বিভিন্ন ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৮৯০ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে শনাক্তদের মধ্যে নগরীর ৪৪৯ জন। নগরীর বাইরের বিভিন্ন উপজেলার ২১৩ জন আছেন। নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী সংক্রমণের হার ৩৫ দশমিক ০২ শতাংশ।
চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোতেও সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। উপজেলাগুলোর মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় সীতাকুণ্ডে ৪১ জন, মীরসরাইয়ে ৩৮ জন, ফটিকছড়িতে ৩২ জন, হাটহাজারীতে ২১ জন, রাউজানে ২০ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ১৩ জন এবং বোয়ালখালী ও লোহাগাড়া উপজেলায় ১০ জন করে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। বাকি উপজেলাগুলোতে সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা ১০ জনের নিচে।
গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া নয়জনের দু’জন শহরের ও সাতজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
চট্টগ্রামে গত বছরের ৩ এপ্রিল প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ৯ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম কোনো ব্যক্তি মারা যান।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত ৬১ হাজার ৫৮৯ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে নগরীর বাসিন্দা ৪৭ হাজার ৮৩০ জন এবং বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা ১৩ হাজার ৭৫৯ জন।
করোনায় চট্টগ্রামে মারা গেছেন মোট ৭৩১ জন। এর মধ্যে নগরীর ৪৮৪ জন এবং বিভিন্ন উপজেলার ২৪৭ জন আছেন।
কোভিড চিকিৎসায় নিয়োজিতরা বলছেন, মহামারি মোকাবেলায় সরকারের পদ্ধতিগত কিছু ভুলের কারণে সংক্রমণ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ছে যা লকডাউন দিয়ে মোকাবেলা করা সম্ভব নয়।
চট্টগ্রামের বেসরকারি ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের কোভিড ইউনিটের ফোকাল পারসন ও একাডেমিক কো-অর্ডিনেটর ডা. আরিফ বাচ্চু সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে করোনার সংক্রমণ নিয়ে যে আজকের পরিস্থিতি তৈরি হবে সেটা ৩-৪ মাস আগে ভারতের পরিস্থিতি দেখেই আমরা ধারণা করেছিলাম। ভারতের করোনার ভ্যারিয়েন্ট দেশে প্রবেশ আমরা ঠেকাতে পারিনি। কারণ বর্ডার বন্ধের উদ্যোগটা সেভাবে কার্যকর হয়নি। এরপর আমরা বারবার বলছিলাম যে, লকডাউন মহামারি মোকাবেলার প্রথম পদ্ধতি নয়। প্রথম পদ্ধতি হচ্ছে ব্যাপকভাবে সংক্রমণ শনাক্ত করা, সংক্রমিত সবাইকে আইসোলেশনে রাখা এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রথম পদ্ধতিটাই দেশে সেভাবে অনুসরণ করা হয়নি।’
‘এ অবস্থায় আজকে আমরা যে পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছি, সেটা মোকাবেলার জন্য সরকারের উদ্যোগে প্রতিটি উপজেলায় ২-৩টি করে করোনা শনাক্তকরণ বা অ্যান্টিজেন পরীক্ষার বুথ স্থাপন করা প্রয়োজন জরুরি ভিত্তিতে। বেশিসংখ্যক মানুষকে পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। তারপর তাদের আইসোলেশনে রাখার সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে। চিকিৎসা দিতে হবে। এরপর বাস্তবিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় যত বেশি সংখ্যক মানুষকে সম্ভব দ্রুততার সাথে টিকার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। যারা টিকার দুই ডোজ পেয়েছেন তারা আক্রান্ত হবেন, কিন্তু তাদের মৃত্যুঝুঁকি কম থাকবে। তবে পরিকল্পিত উপায়ে লকডাউন কার্যকর করতে পারলে সেটারও একটা সুফল অবশ্যই মিলবে।’- বলেন আরিফ বাচ্চু
সারাবাংলা/আরডি/এএম