শহরে ৫ ও গ্রামে ১০ দিনের মধ্যে ই-কমার্স পণ্য সরবরাহ করতে হবে
৬ জুলাই ২০২১ ১৭:০৭
ঢাকা: কোনো গ্রাহক অনলাইনে যেকোনো পণ্যের মূল্য পরিশোধ করলে শহর এলাকায় সর্বোচ্চ পাঁচ দিন ও গ্রামে সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ই-কমার্স ব্যবস্থাপনা সুন্দর ও সুচারুভাবে পরিচালনার জন্য এ সংক্রান্ত এক নির্দেশিকা জারি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
রোববার (৪ জুলাই) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হাফিজুর রহমানের সই করা ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা বিষয়ক নির্দেশিকাটি জারি করা হয়েছে।
দেশে বেশ কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অফারের নামে বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে পণ্য বিক্রি, পণ্য দেওয়ার অনেক আগেই টাকা নেওয়া এবং সময়মতো পণ্য সরবরাহ না করার বেশকিছু অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও আগাম টাকা নিয়ে পণ্য যথাসময়ে সরবরাহ না করে সময়ক্ষেপণ করারও অভিযোগে উঠেছে। বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটের এ ধরণের প্রবণতা থামাতে পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছে সরকার।
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, গ্রাহক অন্য কোনো শহরে থাকলে বা তিনি গ্রামের হলে সময় নেওয়া যাবে সর্বোচ্চ ১০ দিন। তবে বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শিত পণ্যের সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে ওই পণ্য ডেলিভারিম্যান বা ডেলিভারি সংস্থার কাছে হস্তান্তর করতে হবে। পাশাপাশি ক্রেতাকে টেলিফোন, ই-মেইল বা এসএমএসের মাধ্যমে জানাতে হবে। পাশাপাশি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে কোনো মার্চেন্ট ক্রেতা আকৃষ্ট করতে অস্বাভাবিক কোনো অফার দিতে পারবে না। ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা সংশ্লিষ্ট সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণ হলে সংশ্লিষ্ট মার্চেন্টের ব্যবসায়িক লাইসেন্স বাতিলসহ আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, নিত্যপ্রযোজনীয় দ্রব্যের ক্ষেত্রে ডেলিভারির সময় আরও সংক্ষিপ্ত হবে এবং ক্রেতাকে তা ক্রয়াদেশ গ্রহণের সময় সুস্পষ্টভাবে অবহিত করতে হবে। কোনো একটি ক্রয়াদেশে একাধিক পণ্য থাকলে আলাদা আলাদা পণ্যের জন্য সাধারণত আলাদা আলাদা ডেলিভারি চার্জ আরাপ করা যাবে না। তবে মার্কেটপ্লেসে পণ্য আলাদা আলাদা ডেলিভারি দেওয়া হলে আলাদা আলাদা চার্জ গ্রহণ করা যাবে। এক্ষেত্রে ক্রেতাকে ক্রয়াদেশ নিশ্চিত করার সময় বা ইনভয়েসে আগেই তা জানাতে হবে।
এতে আরও বলা হয়, পণ্য বিক্রয় ও সরবরাহের ক্ষেত্রে মার্কেটপ্লেসে প্রদর্শিত পণ্যের মান ও সঠিকতা মার্কেটপ্লেসের স্বত্বাধিকারীকে নিশ্চিত করতে হবে। তবে বিক্রেতা বা মার্চেন্টের সঙ্গে ভিন্ন কোনো চুক্তি থাকলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। সময় মতো ডেলিভারি দেওয়া এবং মালামালের সুরক্ষার জন্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান বা ডেলিভারি পারসনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় চুক্তি করবে। পচনশীল দ্রব্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে ডেলিভারির ব্যবস্থা নিতে হবে এবং ডেলিভারির সময় যাতে পণ্যের কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য মার্কেটপ্লেস কর্তৃপক্ষ যথপোযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, পণ্য সরবরাহের সময় মুদ্রিত বিল দিতে হবে। যাতে প্রদেয় বা প্রদত্ত ভ্যাট ও আয়কর (যদি থাকে) উল্লেখ থাকতে হবে। যেসব পণ্যের ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি আছে, তার জন্য ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি পিরিয়ড ও সেবাপ্রাপ্তির স্থান ও যোগাযোগের বিস্তারিত ঠিকানাসহ অন্যান্য শর্ত সম্বলিত কার্ড বা ডিজিটাল কার্ডপণ্যের সঙ্গে সরবরাহ করতে হবে।
‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা-২০২১’ অনুযায়ী ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং বা অন্যান্য যে মাধ্যমেই পণ্যের অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করবেন ক্রেতা। তবে বিক্রেতা কোনো কারণে নির্ধারিত সময়ে পণ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে, মূল্য পরিশোধের ১০ দিনের মধ্যে ক্রেতার পুরো টাকা ফেরত দিতে হবে। যে মাধ্যমে টাকা নেওয়া হয়েছে, সেই মাধ্যমেই ফেরত দিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া ডিজিটাল মাধ্যমে কোনো ধরনের অর্থ ব্যবসা পরিচালনা করা যাবে না। ক্রেতাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো পণ্য কেনার জন্য বাধ্য করা যাবে না। ডিজিটাল ওয়ালেট, গিফট কার্ড, ক্যাশ ভাউচার বা অন্য কোনো মাধ্যম, যা অর্থের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, সে ধরনের কিছু করা যাবে না।
টাকা ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো চার্জ (মাশুল) লাগলে তা মার্কেটপ্লেস বা বিক্রেতাকে বহন করতে হবে। মূল্য ফেরতের বিষয়টি ক্রেতাকে ফোন, ই-মেইল বা অন্য কোনো মাধ্যমে জানাতে হবে। নির্ধারিত সময়ে অর্থ ফেরত না পেলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বা সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা করতে পারবেন ক্রেতা। পণ্য বা সেবা বিক্রি বা প্রসারের জন্য কোনো ধরনের লটারি বা লটারি জাতীয় কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারবে কোনো প্রতিষ্ঠান। কোনো পণ্যের স্টক কত, তা-ও জানাতে হবে গ্রাহকদের।
পণ্যের মেয়াদোত্তীর্ণের কথাও জানাতে হবে। কোনো নকল বা ভেজাল পণ্য দেখানো যাবে না। বহুস্তর বিপণন পদ্ধতিতে (এমএলএম) পদ্ধতিতে কোনো ব্যবসা পরিচালনা করা যাবে না। চিকিৎসা বা ওষুধসামগ্রী কেনাবেচার ক্ষেত্রে ওষুধ প্রশাসন অধিদফরের লাইসেন্স নিতে হবে। কোনো ধরনের নেশাজাতীয় পণ্য বিক্রি করা যাবে না এবং জুয়ার আয়োজনও করা যাবে না। পণ্য স্টক করার জন্য নিজস্ব গুদামঘর থাকতে হবে। অন্য বিক্রেতার পণ্য নিজেদের ই-কমার্স সাইটে বিক্রি করলে কী পরিমাণ পণ্য বিক্রির জন্য আছে, তার ওপর নির্ভর করেই ক্রেতাদের কাছ থেকে ক্রয়াদেশ নিতে হবে।
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম