ম্যাজিক মাশরুম চক্র: কানাডা প্রবাসীসহ গ্রেফতার ২
৭ জুলাই ২০২১ ১৮:১৮
ঢাকা: হ্যালুসিনোজেন গ্রুপের (মনোঃভ্রম উদ্দীপক) নিষিদ্ধ মাদক ম্যাজিক মাশরুমের পাঁচটি বার এবং দুই বোতল বিদেশি মদসহ কানাডা প্রবাসী নাগিব হাসান অর্নব (২৫) এবং তাইফুর রশিদ জাহিদ (২৩) নামের দুই জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার একটি দল তাদেরকে ধরার পর, বুধবার (৭ জুলাই) দুপুরে কারওয়ান মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মইন এ তথ্য সংবাদ মাধ্যমকে জানান।
র্যাব জানায়, বিদেশ থেকে চকোলেট হিসেবে আসছে ম্যাজিক মাশরুম। তা গোপনে বিক্রি করছে একটি চক্র। সেই চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মাদক ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পন্থায় মাদক বিক্রি জারি রেখেছে। র্যাবও তাদের কৌশল পরিবর্তন করে নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে । তারই ধারাবাহিকতায় ম্যাজিক মাশরুম চক্রের দুই সদস্য গ্রেফতার হলো। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা পাঁচটি বারের প্রতিটিতে ম্যাজিক মাশরুমের পরিমাণ ২৫০০ মাইক্রোগ্রাম।
র্যাব মুখপাত্র বলেন, সাইকেলেডিক (মনোঃভ্রম উদ্দীপক) মাদক ম্যাজিক মাশরুম বিভিন্ন খাবারের (যেমনঃ কেক ও চকোলেট) সঙ্গে মিশিয়ে সেবন করা হয়। পাউডার এবং ক্যাপসুল দুইভাবেই পাওয়া যায় ম্যাজিক মাশরুম। ম্যাজিক মাশরুম সেবনকারীর নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
শারীরিক ক্ষতি ছাড়াও দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে মানসিক রোগ যেমনঃ সাইকোসিস এবং অবিরাম হ্যালুসিনেশনের কারণ হতে পারে ম্যাজিক মাশরুম। মাদকসেবীদের নতুনত্বের প্রতি আগ্রহ থেকেই এই ধরনের অপ্রচলিত মাদকের বাজার তৈরি হয় বলে র্যাব দাবি করেছে।
গ্রেফতারকৃত তাইফুর রশিদ জাহিদ প্রথমে গাঁজা ও মদে আসক্ত ছিলেন। ২০১৯ সালে ক্রমান্বয়ে লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড (এলএসডি), ডাই মিথাইল ট্রিপটামাইনসহ (ডিএমটি) বিভিন্ন ধরনের সাইকেডেলিক মাদক নিয়মিত সেবন ও বিক্রি করা শুরু করেন বলে জানায় র্যাব।
সাইকেডেলিক (মনোঃভ্রম উদ্দীপক) মাদকের ব্যাপারে আগ্রহ থেকে ইন্টারনেটে অনুসন্ধান; তারপর ম্যাজিক মাশরুমের ব্যাপারে জানতে পারা। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ জন্মানো বিভিন্ন মাশরুমের মধ্যে সাইকেডেলিক বা ম্যাজিক মাশরুম আছে কি না তা খুঁজে ব্যর্থ হয়ে ডার্ক ওয়েবের শরণাপন্ন হন গ্রেফতারকৃত জাহিদ।
ডার্ক ওয়েবে ম্যাজিক মাশরুমের খুঁজে পাওয়ার পর জাহিদ তার প্রবাসী বন্ধু ও পরিচিত জনদেরকে ম্যাজিক মাশরুম বাংলাদেশে নিয়ে আসার অনুরোধ জানান। সেই সময়, অধিক মুনাফার আশায় জাহিদের প্রস্তাবে রাজি হয় কানাডা প্রবাসী বাল্যবন্ধু নাগিব হাসান অর্নব। তিনিও বর্তমানে র্যাবের হাতে গ্রেফতার।
চলতি বছরের মে মাসে গ্রেফতারকৃত অর্নব ম্যাজিক মাশরুমের একটি চালান নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। পরবর্তীতে তারা ম্যাজিক মাশরুমের বারগুলি বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন। র্যাব জানায়, অত্যন্ত বিপজ্জনক এই ম্যাজিক মাশরুম সেবন করে জাহিদ নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অত্যন্ত বীভৎসভাবে নিজেই নিজের হাতের বিভিন্ন অংশ ধারালো বস্তু দিয়ে কেটে ফেলে।
জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব জানিয়েছে, গ্রেফতার অর্নব বাংলাদেশে এসএসসি পর্যন্ত পড়েছেন সেইসূত্রে গ্রেফতার তাইফুর রশিদ জাহিদের সহপাঠী। ২০১৪ সালে তিনি কানাডায় পাড়ি জমান। বর্তমানে সেখানকার এক ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়ন শেষে কর্মরত রয়েছেন। কানাডা থেকে ম্যাজিক মাশরুম এনে বাংলাদেশে চড়া মূল্যে বিক্রি করার কথা স্বীকার করেছেন অর্নব।
এছাড়াও, ম্যাজিক মাশরুম চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাকিদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন র্যাব মুখপাত্র।
সারাবাংলা/ইউজে/একেএম