Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিশ্বব্যাংকের ঋণ জটিলতায় সুফল মিলছে না ‘সুফল’ প্রকল্পের

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৮ জুলাই ২০২১ ০৮:১৬

ঢাকা: বন অধিদফতরের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা উন্নয়ন, সহযোগিতামূলক বন ব্যবস্থাপনা প্রবর্তনের মাধ্যমে বন নির্ভর জনগোষ্ঠীর বনের ওপর নির্ভরতা কমানো এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও বৃক্ষে আচ্ছাদিত এলাকা বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে সরকার হাতে নিয়েছিল ‘টেকসই বন ও জীবিকা’ (সুফল) প্রকল্প। ২০১৮ সালে শুরু হয়ে পাঁচ বছর মেয়াদের প্রকল্পটির মোট খরচ ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৫০২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। অথচ তিন বছর, অর্থাৎ প্রকল্প মেয়াদের ৬০ শতাংশ পেরোনোর পর প্রকল্পটিতে ব্যয় হয়েছে মাত্র ২৩৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ!

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। গত মাসে প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত করে তাতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাংকের ঋণ প্রক্রিয়ায় জটিলতাসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি কারণে ‘সুফল’ প্রকল্পের সুফল মিলতে দেরি হচ্ছে। বন অধিদফতরের অধীনে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটি নিয়ে প্রস্তুত এই প্রতিবেদন শিগগিরই বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

আইএমইইডি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টেকসই বন ও জীবিকা তথা সুফল প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) ১৬২টি ক্রয় প্যাকেজের মধ্যে ৮৮টি প্যাকেজের দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। ২৫টি প্যাকেজের দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে। ৪৯টি প্যাকেজের দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া শুরুই হয়নি। তবে ৩৭টি প্যাকেজের চুক্তি হয়েছে। এতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ভীষণ ধীর গতি দেখা গেছে। ফলে যে লক্ষ্য নিয়ে প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল, সময়মতো সেই কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া নিয়েই দেখা দিয়েছে সংশয়।

প্রকল্পটিতে গতি না থাকার কারণ তুলে ধরে আইএমইডি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিপিপি’র নির্দেশনা অনুযায়ী গণপূর্ত অধিদফতরের নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নের বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সই করা ফাইন্যান্সিং এগ্রিমেন্ট সংশোধন ও সমঝোতা স্মারক সম্পন্ন কাজে দেরি হয়েছে। ফলে নির্মাণ ও পূর্ত কাজের অগ্রগতি হয়নি। তাতে পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ শুরু না হওয়ায় অগ্রগতি ব্যহত হয়েছে।

আইএমইডি’র প্রতিবেদন বলছে, প্রকল্পটির জন্য বিশ্ববাংকের সঙ্গে ঋণ চুক্তি প্রক্রিয়া শেষ করতেই ১০ মাস দেরি হয়েছে। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রকল্পের প্রারম্ভিক প্রশাসনিক ও আর্থিক বিধিবিধান যেমন, প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন, প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ, প্রকল্পের হিসাব পরিচালনায় অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন, বিশ্বব্যাংকের লোন ইফেকটিভ ডেটের শর্ত আরোপ, বিশ্বব্যাংকের আঞ্চলিক অফিস চেন্নাই থেকে ছাড়পত্র গ্রহণ, ক্লায়েন্ট কানেকশনের অনলাইন হিসাব খোলাসহ সংশ্লিষ্ট কাজগুলোতে অনেক বেশি সময় চলে গেছে।

প্রকল্পটিতে আরও কিছু অনিয়মের নজিরও মিলেছে। আইএমইডি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুযায়ী (জিডি-৩২) পণ্য কেনার ক্ষেত্রে যে স্পেশিফিকেশন তৈরি করা হয়েছিল, তা কেবল একটি কোম্পানির পক্ষে সীমাবদ্ধ রাখতে পিপিএ-২০০৬ (সরকারি ক্রয় আইন) এবং পিপিআর-২০০৮ (সরকারি ক্রয় বিধিমালা)-এর ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে। ৯৩টি ভবন নির্মাণ ও পুরনো ভবন সংস্কার কাজের মাত্র পাঁচটি কাজের ক্ষেত্রে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এদিকে, সময়মতো চারা নিয়ে কাজ না করতে পারায় বাগান সৃজনের কাজগুলোও করা সম্ভব হয়নি। প্রকল্পের আওতায় ৪০ হাজার সুবিধাভোগী নির্বাচন প্রক্রিয়া এখনো শুরুই হয়নি। বর্তমানে সুবিধাভোগী নির্বাচনের জন্য এনজিও নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

প্রকল্পের দুর্বল দিক হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী পরিকল্পনা তৈরি করা হয়নি। এছাড়া কর্ম পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যক্রম বাস্তবায়ন না হওয়া, নির্ধারিত সময়ে দরপত্র আহ্বান না করা, সুবিধাভোগী নির্বাচনে বিলম্ব এবং যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাব, বনায়ন কাজে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না হওয়া, আড়াই বছরে তিন বার প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন, ডিপিপি অনুযায়ী সময়মতো জনবল নিয়োগ না দেওয়া এবং মাঠ পর্যায়ে জনবলের অভাব— এগুলোকেও প্রকল্পটির দুর্বল দিক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

আইএমইডি’র সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী সারাবাংলাকে বলেন, নিবিড় পরিবীক্ষণের আওতায় এই প্রকল্পে বেশকিছু ক্রুটি-বিচ্যুতি উঠে এসেছে। চলমান বিধিনিষেধ উঠে গেলে সেগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ আকারে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তারাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তবে আমাদের নির্দেশনা থাকবে, প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেটি যেন আইএমইডিকে জানান।

সারাবাংলা/জেজে/টিআর


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর